১২ জুলাই ২০২৫, শনিবার, ১২:২৯:৪৮ পূর্বাহ্ন
রাজশাহী ওয়াসার প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০৭-২০২৫
রাজশাহী ওয়াসার প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু

পদ্মার পানি পরিশোধনের মাধ্যমে জেলার মানুষের জন্য সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে রাজশাহী ওয়াসা।


চীনের হুনান কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক পানি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে রাজশাহী ওয়াসা।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে গোদাগাড়ী উপজেলার সারাংপুর এলাকায় পানি পরিশোধনাগার নির্মাণকাজ চলমান। ইতোমধ্যে কাজের ২০ শতাংশ শেষ হয়েছে।


‘রাজশাহী ওয়াসা সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট’ শীর্ষক প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে প্রতিদিন ২০ কোটি লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে।


রাজশাহী ওয়াসা’র প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক পারভেজ মামুদ বাসস’কে বলেন, পরিশোধিত পানি ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রধান পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানো হবে।


এরই মধ্যে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের পাশে ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। 


এ বিষয়ে রাজশাহী ওয়াসা এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।


সব মিলিয়ে এই পানি পরিশোধন প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো- ২০২৭ সালের মধ্যে রাজশাহী শহর ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা।


এ প্রকল্পের মাধ্যমে পদ্মা নদী থেকে পানি তুলে তা পরিশোধনের জন্য একটি আধুনিক পানি পরিশোধনাগার নির্মাণ করা হচ্ছে, যাতে বাসাবাড়িতে ব্যবহারের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ করা যায়।


পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ৪ হাজার ৬২ কোটি টাকার এই প্রকল্পটির মেয়াদ ৪০ বছর। যার লক্ষ্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত পানি সহজে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া।


প্রকৌশলী মামুদ বলেন, রাজশাহী শহর ও এর পার্শ্ববর্তী পৌরসভার সকল বাসিন্দাকে বিশুদ্ধ পানির আওতায় আনাই এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।


তিনি জানান, প্রকল্পটি বর্তমান পানির ঘাটতি পূরণে সহায়তা করবে ও বাড়তে থাকা জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত পানির জোগান নিশ্চিত করবে।


এটি পদ্মার পানি থেকে ক্ষতিকর ও দূষিত উপাদান দূর করবে, যাতে তা নিরাপদভাবে পান করা যায়। 

পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই ও কার্যকর একটি পানি সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।


তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের আওতায় নগরীর পুরোনো পাইপলাইন ও হাইড্র্যান্টগুলো (আগুন নেভানো পানির নল) মেরামত ও আধুনিকায়নের ব্যবস্থাও রয়েছে। সেইসঙ্গে সবার কাছে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক একটি পানি ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যও রয়েছে।


তিনি বলেন, এখন রাজশাহী শহরে দিনে প্রায় ১৩ কোটি লিটার পানির চাহিদা রয়েছে এবং এর মধ্যে ৯৮ কোটি ৩ লাখ ৭ হাজার লিটার পানি পাম্প দিয়ে মাটির নীচ থেকে তুলে নেওয়া হয়। আর ৯০ লাখ লিটার পানি আসে নদী থেকে। মোট পানি সরবরাহ হচ্ছে ১০৭ কোটি ৪ লাখ লিটার, যা চাহিদার তুলনায় কিছুটা কম।


রাজশাহী ওয়াসা একসঙ্গে ১১০টি পাম্প ও ৮৫৯ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রতিদিন ৬ লাখ ৪৪ হাজারেরও বেশি মানুষকে ১০ কোটি ৭০ লাখ লিটার পানি সরবরাহ করছে।


সরকারি তথ্য উদ্ধৃত করে রাজশাহী ওয়াসা’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউল আলম সরকার বলেছেন, প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে শহরে আর কোনো পানির ঘাটতি থাকবে না।


তিনি বলেন, শহরের পানির চাহিদা মেটানোর পর নওহাটা ও কাটাখালী পৌরসভায়ও সুপেয় পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। রাজশাহী ওয়াসা সব সময়ই সেবা কার্যক্রমে সততা বজায় রাখার চেষ্টা করছে, বিশেষ করে পানির সরবরাহে যাতে গ্রাহকরা সর্বোচ্চ সুবিধা পান।


ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরো বলেন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সব অংশীজনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে একটি টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা গড়ে তোলাই তাদের লক্ষ্য।


সব মিলিয়ে, প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ভূ-উপরিস্থ পানির সরবরাহ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখবে।


তিনি আরও জানান, রাজশাহী শহর এলাকায় পানি সরবরাহ ব্যবস্থা সংস্কার’ নামে একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে, যার মাধ্যমে অস্থায়ী সময়ে নিরাপদ পানি সরবরাহ করে জনগণের জীবনমান উন্নত করা হবে।

শেয়ার করুন