১২ জুলাই ২০২৫, শনিবার, ০৬:২৫:০৬ অপরাহ্ন
মালয়েশিয়ায় রুবিও-ওয়াং বৈঠক: শুল্ক বিরোধের মধ্যেই ‘ইতিবাচক’ আলোচনা
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৭-২০২৫
মালয়েশিয়ায় রুবিও-ওয়াং বৈঠক: শুল্ক বিরোধের মধ্যেই ‘ইতিবাচক’ আলোচনা

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও শুক্রবার বলেছেন, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গে তার বৈঠক ‘ইতিবাচক ও গঠনমূলক’ হয়েছে, এমন সময়ে যখন ওয়াশিংটনের শুল্ক আক্রমণের কারণে এশিয়ায় দুই শক্তিধর দেশের মধ্যে নিজেদের এজেন্ডা এগিয়ে নেওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে।


শুক্রবার (১১ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।


পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে প্রথম এশিয়া সফরে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন রুবিও, যেখানে পূর্ব এশিয়া সম্মেলন ও আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামে অংশ নিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের এ অঞ্চলের প্রতি প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করার চেষ্টা করছেন। এ সময় অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত কঠোর শুল্কের ধাক্কা সামলাচ্ছে।


চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এটি রুবিওর প্রথম সরাসরি বৈঠক। এর আগে বেইজিং হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিল, আগামী মাসে ওয়াশিংটন যদি তাদের পণ্যের ওপর পুনরায় উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করে, তাহলে চীন পাল্টা পদক্ষেপ নেবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করা দেশগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


মালয়েশিয়ায় এশীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে ওয়াং যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের পদক্ষেপকে ‘একতরফা দাদাগিরি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তবে শুক্রবার উভয় পক্ষই বৈঠককে ইতিবাচক ও গঠনমূলক বলে উল্লেখ করেছে। রুবিও বলেছেন, ট্রাম্প-শি জিনপিং বৈঠকের সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল।



রুবিও সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা দুইটি বড়, শক্তিশালী দেশ, এবং কিছু বিষয়ে মতবিরোধ থাকবে। তবে সহযোগিতার সম্ভাবনা রয়েছে এবং বৈঠকটি খুবই গঠনমূলক ও ইতিবাচক হয়েছে। অনেক কাজ বাকি রয়েছে।’


তিনি উল্লেখ করেন, এটি কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা নয়, বরং ভবিষ্যতের সংলাপের জন্য একটি গঠনমূলক ভিত্তি তৈরি করার উদ্দেশ্যে হয়েছে। রুবিও জানান, ট্রাম্প চীন সফরের জন্য আমন্ত্রণ পেয়েছেন এবং তিনি সফরে যেতে আগ্রহী।


তিনি বলেন, ‘উভয় রাষ্ট্রপতিই এ সফর চান। তবে এটি যেন কেবল সফরেই সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং নির্দিষ্ট কিছু ফলাফল নিয়ে আসে, সেটি নিশ্চিত করার জন্য সঠিক পরিবেশ ও প্রস্তুতি নিতে হবে।’


চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৈঠকে উভয় দেশ তাদের নেতাদের মধ্যে হওয়া সমঝোতা নীতিতে ও কাজে রূপান্তর করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। মন্ত্রণালয় আরও জানায়, ‘উভয় পক্ষ বৈঠককে ইতিবাচক, বাস্তবমুখী ও গঠনমূলক হিসেবে উল্লেখ করেছে।’


শুল্কে আচ্ছন্ন রুবিওর সফর


যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মনোযোগ বাড়ানোর এবং মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের সংঘাতের বাইরে মনোযোগ সরানোর অংশ হিসেবে রুবিও এ সফর করছেন। তবে ট্রাম্পের ঘোষিত নতুন শুল্কের কারণে সফরটি আংশিকভাবে আড়াল হয়ে গেছে।


এই সপ্তাহে ট্রাম্প এশিয়ার অনেক দেশ ও মিত্রদের পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও মালয়েশিয়ার পণ্যের ওপর ২৫%, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২%, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার ওপর ৩৬% এবং মিয়ানমার ও লাওসের পণ্যের ওপর ৪০% হারে শুল্ক বসানো হবে। চীনের ওপর ১০০% এর বেশি শুল্ক আরোপের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে, যা আগস্ট ১২ এর মধ্যে চীনের সঙ্গে সমঝোতা না হলে কার্যকর হবে।


বিশ্লেষকরা বলছেন, রুবিও এ সফরের মাধ্যমে এশিয়ার কাছে যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের চেয়ে ভালো কৌশলগত অংশীদার হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছেন। শুক্রবার তিনি থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।


ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক মারে হিবার্ট বলেন, রুবিওর প্রথম ইন্দো-প্যাসিফিক সফর ইতিবাচক, তবে ট্রাম্পের শুল্ক নীতি মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে দুর্বল করেছে।


তিনি বলেন, ‘এর ফলে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সহজেই চীনের স্থিতিশীল ও নির্ভরযোগ্য অর্থনৈতিক সম্পর্কের কথা তুলে ধরতে পেরেছেন।’


কুয়ালালামপুরে ওয়াং যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের সমালোচনা করে বলেছেন, কোনো দেশই এই শুল্ক সমর্থন করবে না। থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, শুল্ক ব্যবস্থা অপব্যবহার করা হয়েছে এবং এটি মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কম্বোডিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ওয়াং বলেছেন, এই শুল্ক দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর বৈধ উন্নয়নের অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা।


ওয়াং আরও বলেন, ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো জটিল পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সক্ষমতা রাখে এবং নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য নীতি-প্রধান অবস্থানে অটল থাকবে।’


আসিয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যৌথ বিবৃতিতে বৈশ্বিক বাণিজ্য উত্তেজনার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং স্বচ্ছ ও ন্যায়সংগত বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, একতরফা শুল্ক “প্রতিকূল” এবং এটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বিভাজন বাড়িয়ে দিচ্ছে।


অপরিহার্য অংশীদারিত্ব


বৃহস্পতিবার রুবিও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং ইউক্রেন ইস্যুতে নতুন বা ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। রুবিও বলেন, ‘আমি এটি অতিরঞ্জিত করতে চাই না, তবে এটি গঠনমূলক ছিল। কিছু বিষয় আমরা অনুসন্ধান করতে পারি, যা আমি প্রেসিডেন্ট ও আমাদের টিমকে জানিয়েছি।’


রুবিও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও দক্ষিণ কোরিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন এবং ‘অপরিহার্য ত্রিপাক্ষিক অংশীদারিত্ব’ জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করেছেন।


জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা বলেছেন, টোকিওকে ওয়াশিংটনের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এ প্রসঙ্গে রুবিও বলেন, ‘এটি নেতিবাচক হিসেবে দেখা উচিত নয়। আমাদের জাপানের সঙ্গে শক্তিশালী অঙ্গীকার রয়েছে এবং আমরা ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছি।’


শেয়ার করুন