১২ জুলাই ২০২৫, শনিবার, ০১:৫২:২৯ অপরাহ্ন
মিটফোর্ডে ব্যবসায়ীকে হত্যা: ঢাবি, রাবি, চবিতে ছাত্রদের বিক্ষোভ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৭-২০২৫
মিটফোর্ডে ব্যবসায়ীকে হত্যা: ঢাবি, রাবি, চবিতে ছাত্রদের বিক্ষোভ

রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে প্রকাশ্যে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে কুপিয়ে ও পাথর দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে ছাত্রসমাজে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পৃথকভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।


শুক্রবার (১১ জুলাই) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হল এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে ভিসি চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেন:

“অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন”, “যুবদলের সন্ত্রাস, রুখে দেবে ছাত্রসমাজ”, “মিটফোর্ড খুন কেন? তারেক রহমান জবাব দে”।


ঢাবি শিক্ষার্থী এবি জুবায়ের বলেন, “সোহাগ হত্যার ভিডিও দেখে আমরা শিউরে উঠেছি। চাঁদা না দেওয়ার কারণে তাকে পাথর দিয়ে হত্যা করেছে যুবদলের সন্ত্রাসীরা। এটা কি নতুন করে প্রস্তর যুগে ফিরে যাওয়া নয়?”


বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, “যারা মজলুম ছিল তারা এখন জালিমে পরিণত হয়েছে। বিএনপি একশ'র বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। প্রতিটি ঘটনার বিচার চাই।”


রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বরে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। স্লোগান ওঠে: “রক্তে ভেজা আমার ভাই, খুনি তোমার রেহাই নাই”, “চাঁদাবাজের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না।”


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, “এই হত্যাকাণ্ডের দায় শুধু যুবদলের নয়—এটি সামগ্রিকভাবে বিএনপির রাজনৈতিক চরিত্রকে নগ্ন করে দিয়েছে।”


ফজলে রাব্বি মো. ফাহিম বলেন, “তারেক রহমানকে দেশে ফিরে আসতে হবে। বিদেশ থেকে খুনের খেলা আর চলতে দেওয়া হবে না।”


রাত ৯টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। তারা বলেন, “জুলাই-আগস্টের রক্তের বিনিময়ে গড়া নতুন বাংলাদেশে চাঁদাবাজদের জায়গা হবে না।”


শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম রাকিব বলেন, “যারা আবারও আধিপত্য কায়েম করতে চায়, তাদের জানিয়ে দিচ্ছি—এই বাংলাদেশে আর কোনো চাঁদাবাজ, স্বৈরাচার টিকবে না।”


গত ৯ জুলাই সন্ধ্যায় মিটফোর্ড হাসপাতাল চত্বরে লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, হাসপাতালের ভেতরে মারধরের পর বাইরে এনে পাথর দিয়ে থেঁতলে তাকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।


স্থানীয়দের অভিযোগ, ঢাকা-৭ আসনের বিএনপি মনোনয়নপ্রত্যাশী ইসহাক সরকারের গ্রুপের চাঁদাবাজির বলি হয়েছেন ব্যবসায়ী সোহাগ। ঘটনার পর যুবদল ও ছাত্রদলের চারজনকে বহিষ্কার করে বিএনপি। তবে ছাত্রসমাজের বিক্ষোভে স্পষ্ট—তারা কেবল বহিষ্কারে সন্তুষ্ট নয়, বরং প্রকৃত বিচার ও রাজনৈতিক দায় দাবি করছে।


বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বিএনপি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। তবে বিরোধী জোটের ভেতরে এবং ছাত্রসমাজে বিভাজন স্পষ্ট—নতুন বাংলাদেশ গঠনের দাবি ঘিরে রাজনৈতিক ও নৈতিক অবস্থান নিয়ে তীব্র প্রশ্নের মুখে পড়েছে বিএনপি।


শেয়ার করুন