২৩ জুন ২০২৫, সোমবার, ০৪:৪৪:৫৯ অপরাহ্ন
ইসরায়েলের কাছে ঠিক কতগুলো পারমাণবিক বোমা রয়েছে?
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৬-২০২৫
ইসরায়েলের কাছে ঠিক কতগুলো পারমাণবিক বোমা রয়েছে?

গত শতাব্দীর ষাটের দশক থেকেই যে ইসরায়েলের নিজস্ব পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে, সেটি কারোরই অজানা নয়। যদিও দেশটিকে এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে বিষয়টি স্বীকার করতে দেখা যায়নি। বরং ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি রয়েছে দাবি করে সপ্তাহখানেক আগে দেশটির ওপর হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল।


জবাবে ইরানও পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রেখেছে।


এ অবস্থায় দেশ দুটির মধ্যে সংঘাত ক্রমেই আরো বাড়তে দেখা যাচ্ছে।

শান্তি ও নিরাপত্তা বিষষক স্পেনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ডেলাস সেন্টার ফর পিস স্টাডিজের গবেষক ও পদার্থবিজ্ঞানী হাভিয়ের বোহিগাস বিবিসি মুন্ডোকে বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলই একমাত্র দেশ, যার কাছে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে।


আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) গত মার্চ মাসে জানিয়েছিল যে ইরান এখন পর্যন্ত ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।


বোহিগাস বলেন, পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে হলে এটি ৯০ শতাংশের ওপরে অর্জন করতে হবে।


এদিকে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইরানসহ অন্য দেশগুলো পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে (এনপিটি) স্বাক্ষর করলেও ইসরায়েল এখন পর্যন্ত সই করেনি।


ফলে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মতো একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর আইএইএ-কে তাদের সম্ভাব্য পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শন করতে দিতে তারা বাধ্য নয়।


যদিও ইসরায়েল নিজে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার একজন সদস্য।


যেহেতু দেশটি পরিদর্শনের অনুমতি দেয় না, সে কারণে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কে খুব একটা তথ্যও পাওয়া যায় না।


যতটুকু তথ্য জানা যায়, সেগুলো মূলত ফাঁস হওয়া তথ্য, মার্কিন প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি বিভাগের প্রতিবেদন এবং পারমাণবিক কর্মসূচি পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর গবেষণা থেকে প্রাপ্ত।


এ ছাড়া ইসরায়েলের সাবেক পরমাণু প্রকৌশলী মোর্দেচাই ভানুনুর সাক্ষাৎকার থেকেও দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়ে একটা ধারণা পাওয়া যায়।


একসময় ইসরায়েলি পারমাণবিক কেন্দ্রে কর্মরত মি. ভানুনু-কে গত শতাব্দীর আশির দশকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। পরে ১৯৮৬ সালে তিনি ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য সানডে টাইমসের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন।


ওই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমেই মি. ভানুনু তখন বিশ্ববাসীকে জানিয়েছিলেন যে ইসরায়েলের পারমাণবিক কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে।


এই তথ্য প্রকাশ করার জন্য তাকে অনেক বছর জেলও খাটতে হয়েছে।

ঠিক কতগুলো বোমা আছে?


১৯৮৬ সালে মি. ভানুনু জানিয়েছিলেন যে ওই সময় ইসরায়েলের কাছে আনুমানিক ১০০ থেকে ২০০টি পারমাণবিক ‘ওয়ারহেড’ ছিল। বোমার সামনের যে অংশে মূলত বিস্ফোরক রাখা থাকে, সেটি ওয়ারহেড নামে পরিচিত।


মি. ভানুনু কয়েক শ ওয়ারহেড থাকার দাবি করলেও পরমাণু অস্ত্র পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাগুলো অবশ্য তা বলছে না।


সুইডেনভিত্তিক পরমাণু অস্ত্র পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে, বর্তমানে ইসরায়েলের কাছে ৯০টির মতো ওয়ারহেড থাকতে পারে।


এসব ওয়ারহেড তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় প্লুটোনিয়াম দক্ষিণ ইসরায়েলের ডিমোনা শহরের কাছে অবস্থিত নেগেভ পারমাণবিক গবেষণাকেন্দ্রের চুল্লিতে উৎপাদিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।


যদিও ইসরায়েলের সরকার দাবি করে আসছে যে পরমাণু চুল্লিটির উৎপাদন সক্ষমতা মাত্র ২৬ মেগাওয়াট। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করেন যে চুল্লিটির উৎপাদন সক্ষমতা আরো অনেক বেশি।


ইসরায়েলের অন্যান্য পারমাণবিক স্থাপনার মতো এই চুল্লিটিরও আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) নজরদারির বাইরে রয়েছে।


ফলে সেটির অপব্যবহার হচ্ছে কি না এবং পারমাণবিক কর্মসূচি কতটা শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেটি স্বাধীনভাবে যাচাই করার সুযোগ নেই।


সে ক্ষেত্রে ইসরায়েল যদি তথ্য না দেয়, তাহলে কিভাবে জানা যাবে যে দেশটির কাছে কতগুলো পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে?


আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো পরমাণু কেন্দ্রগুলো পর্যবেক্ষণে রাখে এবং তার ভিত্তিতে প্রতিবছর ধারণা করে থাকে, বলেন গবেষক ও পদার্থবিজ্ঞানী বোহিগাস।


তিনি আরো বলেন, যেসব দেশের ব্যাপারে কম তথ্য রয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের ইউরেনিয়াম বা প্লুটোনিয়াম উৎপাদনের আনুমানিক পরিমাণ গণনা করার মাধ্যমে ধারণা পাওয়া যায়।


ইসরায়েলের ক্ষেত্রেও সেটি করা হয়েছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।


যদিও পদ্ধতিটি আগেও বিভিন্ন সময় ব্যবহৃত হয়েছে। ইসরায়েলের মতো উত্তর কোরিয়ার ক্ষেত্রেই একই পদ্ধতি প্রয়োগ করে দেশটির ‘পারমাণবিক ওয়ারহেড’ সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।


উত্তর কোরিয়ার কাছে প্রায় ৫০টি ওয়ারহেড রয়েছে বলে অনুমান করেন তারা।


বোহিগাস জানান, ২০১১ সালে নিউ স্টার্ট ট্রিটি স্বাক্ষরের আগে যখন পরমাণু স্থাপনাগুলো পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ বাধ্যতামূলক ছিল না, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে থাকা পারমাণিক বোমার সংখ্যার বিষয়ে আনুমানিক একটা ধারণা পেয়েছিল পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলো।


‘পরে তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর দেখা গেছে, সেগুলো বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ,’ বলেন জেভিয়ার বোহিগাস।


‘সুতরাং সেখান থেকে বলা যায় যে ইসরায়েলের পরমাণু অস্ত্রের বিষয়ে যে ধারণা করা হচ্ছে, সেটি বাস্তবসম্মত বা বাস্তবতার বেশ কাছাকাছিই হবে।’ বলেন শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক স্পেনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ডেলাস সেন্টার ফর পিস স্টাডিজের এই গবেষক।


সূত্র : বিবিসি


শেয়ার করুন