২৯ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ০৮:৪৩:৫৩ অপরাহ্ন
পারমাণবিক ইস্যুতে ইরানকে ট্রাম্প: ‘দ্রুতগতিতে আবার সবকিছু ধ্বংস করে দেব’
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৭-২০২৫
পারমাণবিক ইস্যুতে ইরানকে ট্রাম্প: ‘দ্রুতগতিতে আবার সবকিছু ধ্বংস করে দেব’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফের ইরানকে কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পারমাণবিক সমৃদ্ধিকরণ ইস্যুতে। কয়েক সপ্তাহ আগে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার পর এবার আরও কঠোর অবস্থান প্রকাশ করলেন ট্রাম্প। খবর আল জাজিরার।


সোমবার (২৮ জুলাই) স্কটল্যান্ডে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, 'ইরান খুবই খারাপ ও অশোভন বার্তা দিচ্ছে। তাদের এমনটা করা একেবারেই উচিত নয়।'


ট্রাম্প দাবি করেন, 'আমরা ইতোমধ্যে তাদের পারমাণবিক সম্ভাবনাগুলো ধ্বংস করে দিয়েছি। তারা যদি আবার শুরু করে, তাহলে আগের চেয়েও দ্রুতগতিতে সবকিছু ধ্বংস করে দেব। আমরা সেটা খুশি মনেই করব, খোলাখুলিভাবেই করব।'


এর আগে, ইরান জানায় তারা বেসামরিক প্রয়োজনে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। এ প্রেক্ষিতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বলেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার ইরানের রয়েছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে আলোচনার আগে দেওয়া বিবৃতিতে তিনি এই অবস্থান স্পষ্ট করেন।


ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আরাকচি বলেন, 'হুমকি ও ভীতির ভাষার জবাব ইরান কখনোই দেবে না।' তিনি জোর দিয়ে বলেন, 'চিকিৎসা ও বেসামরিক প্রয়োজনেই আমাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার দরকার রয়েছে। ইরান যদি আবার হামলার শিকার হয়, তাহলে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাবে।'


গত সপ্তাহে ইরান, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠককে ইরানি কূটনীতিকরা 'গম্ভীর, খোলামেলা ও বিস্তারিত' আখ্যা দিলেও, কোনো অগ্রগতির ঘোষণা আসেনি। ওই বৈঠকটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলা ও ইসরায়েলের সঙ্গে টানা ১২ দিনের সংঘাত শেষে প্রথম বড় কূটনৈতিক উদ্যোগ।


উল্লেখ্য, ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের আলোচনা ভেঙে পড়ে। জুনে ইসরায়েলের তেহরানবিরোধী সামরিক অভিযানের পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।


অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এক ভাষণে জানান, তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির উদ্দেশ্যে একটি ‘বার্তা’ পাঠাতে চান। ইসরায়েলি পত্রিকা ইয়েদিয়োত আহরনোতে প্রকাশিত বক্তব্যে তিনি বলেন, 'আপনি যদি ইসরায়েলকে হুমকি দেন, তবে আমাদের দীর্ঘ হাত তেহরানে আবারও পৌঁছাবে—এবার আরও বেশি শক্তি নিয়ে, এবং ব্যক্তিগতভাবে আপনার কাছেও পৌঁছাবে।'


বিশ্লেষকদের মতে, ইরানে নতুন করে হামলা চালাতে চাইলে তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি প্রায় অবশ্যম্ভাবী হবে।


এর আগে, ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহানে হামলা চালায়। এরপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি 'সম্পূর্ণ ধ্বংস' হয়ে গেছে। তবে সাম্প্রতিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলো জানায়, ওই হামলায় প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি সীমিত ছিল এবং ইরানের কর্মসূচি কেবল স্বল্প সময়ের জন্য বিলম্বিত হয়েছে।


ট্রাম্প পরে এক ভাষণে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়াকে ‘মূর্খতা’ হিসেবে অভিহিত করেন।


প্রসঙ্গত, তার প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে ২০১৫ সালের ইরান পারমাণবিক চুক্তি ‘জেসিপিওএ’ থেকে একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে নেন। এই চুক্তির আওতায় তেহরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সীমিত করেছিল এবং এর বিনিময়ে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরে যাওয়ার পর, ইরানও চুক্তির সীমা অতিক্রম করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা শুরু করে।


২০২৫ সালের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্প নতুন একটি পারমাণবিক চুক্তির উদ্যোগ নিলেও, শিগগিরই তিনি ‘শূন্য সমৃদ্ধকরণ’ নীতির পক্ষে কঠোর অবস্থান নেন। এই নীতি অনুযায়ী, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি—যা তেহরান বরাবরই ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে দাবি করে এসেছে।


এদিকে, আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান বলেন, 'ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি ত্যাগ করবে না, তবে আলোচনা চালিয়ে যেতে প্রস্তুত রয়েছে।' তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি নিয়ে বলেন, এটি কতটা স্থায়ী হবে সে বিষয়ে তিনি খুব একটা আশাবাদী নন।


গাজায় চলমান যুদ্ধ নিয়েও ট্রাম্প মন্তব্য করেন। তিনি অভিযোগ করেন, দোহায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে অনুষ্ঠিত শান্তি আলোচনায় ইরান হস্তক্ষেপ করেছে এবং এই হস্তক্ষেপের কারণেই আলোচনা ভেস্তে গেছে। যদিও তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি। তবে এখন পর্যন্ত ইরানের পক্ষ থেকে ট্রাম্পের এই অভিযোগে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি।


শেয়ার করুন