১০ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৯:০৪:৫৮ অপরাহ্ন
লুলার সঙ্গে বিবাদ, ব্রাজিলের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৭-২০২৫
লুলার সঙ্গে বিবাদ, ব্রাজিলের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্রাজিল থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। এই পদক্ষেপে দক্ষিণ আমেরিকার এই গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা আরো বেড়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত এক খোলা চিঠিতে ট্রাম্প এই ঘোষণা দেন।


চিঠিতে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, ব্রাজিল সরকার মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর হামলা চালাচ্ছে এবং সাবেক ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোর বিচার প্রক্রিয়াকে ‘উইচ হান্ট’ হিসেবে চালাচ্ছে।


তার বিরুদ্ধে ২০২২ সালের নির্বাচন উল্টে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে মামলা চলছে। 

ব্রাজিলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি শুল্ক বাড়ায়, তাহলে ব্রাজিলও পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। তিনি ব্রাজিলের বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারিও দেন। তিনি বলেন, ‘ব্রাজিল কারো হস্তক্ষেপ সহ্য করবে না।


এখানে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’

ট্রাম্প ও লুলার মধ্যে এই সপ্তাহেই বোলসোনারোর বিচার নিয়ে তীব্র মতবিরোধ দেখা দেয়। ট্রাম্প বোলসোনারোর প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেন এবং বিচার প্রক্রিয়াকে ‘আন্তর্জাতিক কলঙ্ক’ বলে আখ্যা দেন। ট্রাম্প জানিয়েছেন, ব্রাজিলের পাশাপাশি তামার (কপার) আমদানির ওপরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।


তিনি জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে দাবি করেন।

এই সপ্তাহে ট্রাম্প ২২টি দেশকে চিঠি পাঠিয়েছেন—এর মধ্যে রয়েছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও শ্রীলঙ্কার মতো বাণিজ্য অংশীদার। এসব চিঠিতে তিনি ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হতে যাওয়া নতুন শুল্কের ঘোষণা দেন। তবে ব্রাজিলকে পাঠানো চিঠিটি ছিল আরো বেশি আক্রমণাত্মক। এর মাধ্যমে আগের ১০ শতাংশ শুল্ক থেকে এক লাফে ৫০ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা বলা হয়।


 

ট্রাম্প বলেন, ‘বর্তমান সরকারের গুরুতর অবিচার সংশোধনের জন্য এই শুল্ক প্রয়োজনীয়।’ তিনি মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিকে নির্দেশ দেবেন বলেও উল্লেখ করেন, যাতে ব্রাজিলের ডিজিটাল বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে ৩০১ ধারা অনুসারে তদন্ত শুরু করা যায়। আগেও ট্রাম্প এই ধারা ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপের আইনি ভিত্তি তৈরি করেছিলেন।

চিঠিতে ট্রাম্প ব্রাজিল সরকারের বিরুদ্ধে ‘মার্কিনদের বাকস্বাধীনতা ও নির্বাচনী স্বাধীনতার ওপর আক্রমণের’ অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, মার্কিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর চাপ দেওয়া হয়েছে এবং তার নিজস্ব কম্পানি ‘ট্রাম্প মিডিয়া’ ব্রাজিলের আদালতের সঙ্গে আইনি লড়াই করছে। উল্লেখ্য, ব্রাজিল সম্প্রতি ইলন মাস্কের মালিকানাধীন এক্সকে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করেছিল, কারণ তারা ২০২২ সালের নির্বাচনে ভুল তথ্য ছড়ানো অ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে অস্বীকার করেছিল।


সম্প্রতি ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কম্পানিগুলো তাদের প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত কনটেন্টের জন্য দায়ী থাকবে।


রিও ডি জেনেইরোতে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলন নিয়েও ট্রাম্প সমালোচনা করেন। তিনি এই জোটকে ‘অ্যান্টি-আমেরিকান’ বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, এই জোটভুক্ত দেশগুলোর ওপর অতিরিক্ত ১০শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এর জবাবে প্রেসিডেন্ট লুলা কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়ে বলেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) বুঝতে পারছেন না যে, পৃথিবী বদলে গেছে। আমরা কোনো সম্রাট চাই না।’


ট্রাম্প চিঠিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট বোলসোনারোর প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং তাকে ‘অত্যন্ত সম্মানিত নেতা’ বলে অভিহিত করেন। ট্রাম্প ও বোলসোনারোর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। দুইজনই নির্বাচন হেরে তা স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানান। বোলসোনারোর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে তার সমর্থকরা রাজধানীতে সরকারি ভবনে হামলা চালিয়েছিল। যার উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়া। ওই সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন এবং সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।


এই প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘এটি একটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আক্রমণ ছাড়া আর কিছু নয়—যা আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকেও জানি।’ এর জবাবে বোলসোনারো ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তিনি তার সমর্থনে কৃতজ্ঞ।


শেয়ার করুন