০২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৩:৪৫:৪৮ অপরাহ্ন
বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০১-২০২৪
বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত

চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বাণিজ্য ঘাটতি ৬০ শতাংশ কমেছে। একই সময় চলতি হিসাবেও উদ্বৃত্ত আছে ৫৭.৯০ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।


গত অর্থবছরে বৈশ্বিক সংকটের কারণে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়ে পণ্যের ওপর।


এতে ওই সময় বাণিজ্য ঘাটতি ছিল চরমে। সম্প্রতি নানা পদক্ষেপ নিয়ে বাণিজ্য ঘাটতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে আনতে পেরেছে সরকার। এই বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে আমদানি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ।


 


বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪৭৬ কোটি ২০ লাখ ডলার।


আগের বছরের একই সময়ে এই ঘাটতি ছিল এক হাজার ১৮২ কোটি ৩০ লাখ ডলার। অর্থাৎ কমেছে ৭০৬ কোটি ১০ লাখ ডলার। বর্তমানে দেশীয় মুদ্রায় ঘাটতির পরিমাণ ৫২ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১১০ টাকা)। গত বছর একই সময়ে যা ছিল এক লাখ ২০ হাজার ৫৯৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা (তখন প্রতি ডলার ১০২ টাকা ছিল)।


 


 


দেশের আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি আয়ের মধ্যকার পার্থক্যকে বাণিজ্য ঘাটতি বলে। প্রতি মাসে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে দুই হাজার ৯৬ কোটি ২০ লাখ ডলারের পণ্য ও সেবা আমদানি হয়। এর বিপরীতে রপ্তানি আয় আসে এক হাজার ৮৮৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার।


এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়াতে না পারলে বছর শেষে বড় বাণিজ্য ঘাটতি থেকে যাবে।


এ জন্য এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।


 


এবার আমদানি ব্যয়ে ধীরগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরে এই সময় আমদানির পরিমাণ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ২১ শতাংশ। আর রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ১.১৯ শতাংশ। রপ্তানি না বাড়াতে পারলেও আমদানি কমাতে সার্থক হয়েছে।


খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রপ্তানির তুলনায় এখনো আমদানি বেশি। বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্য কমলেও ডলারের দাম বেশি। ফলে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে কমিয়ে আনলেও আশানুরূপ রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ না থাকায় বহির্বিশ্বের সঙ্গে এখন বেশ বাণিজ্য ঘাটতিতে রয়ে গেছে বাংলাদেশ। 


প্রতিবেদন অনুযায়ী, নভেম্বর শেষে সেবা খাতে দেশ আয় করে ২৫১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। অন্যদিকে সেবা খাতে দেশের ব্যয় ৪৫৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এতে সেবা খাতের ঘাটতি ২০৩ কোটি ২০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ১৮২ কোটি ২০ লাখ ডলার।


বাণিজ্য ঘাটতি কমায় চলতি হিসাব এখন উদ্বৃত্তে আছে। নভেম্বর শেষে উদ্বৃত্ত আছে ৫৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ৫৬৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এই হিসাবের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি, বিনিয়োগ থেকে আয়, পর্যটন খাত, বাণিজ্য ঘাটতি, কাঁচামাল আমদানি, পণ্য ও সেবা বিনিময়, রেমিট্যান্স, বৈদেশিক সহায়তা হিসাব করা হয়েছে।


ব্যাংকারদের মতে, সাধারণভাবে চলতি হিসাবের মাধ্যমে দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝানো হয়। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। চলতি হিসাব বা কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্সে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। অর্থাৎ নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হতো। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা দরকার।


চলতি হিসাব ইতিবাচক থাকায় সার্বিক লেনদের ভারসাম্য (ওভার অল ব্যালান্স) হিসাবের ঘাটতির পরিমাণও কিছুটা কমেছে। নভেম্বর শেষে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪৮৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার, এক বছর আগে যা ছিল ৬০০ কোটি ডলার।


লেনদেনের ভারসাম্যের হিসাবে বিভিন্ন দিক থেকে বা বিভিন্ন হিসাবে একটি দেশের বিভিন্ন ব্যক্তি, সরকারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অন্য সব দেশের নাগরিক, সরকার ও প্রতিষ্ঠানের যে লেনদেন হয় তার সামগ্রিক হিসাব বোঝায়।


তবে তিন দিক দিয়ে উন্নতি হলেও ফিন্যানশিয়াল অ্যাকাউন্ট বা আর্থিক হিসাবের ঘাটতি বেড়ে গেছে। নভেম্বর শেষে এই হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৩৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আগের মাস শেষে যা ছিল ৪০২ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরে এই হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল ১২৬ কোটি ডলার।


এ হিসাবে বিদেশি বিনিয়োগ, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ, বৈদেশিক ঋণ ও দায় পরিশোধ, বন্ডে বিনিয়োগ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আর্থিক হিসাবের ঘাটতির বড় কারণ বিনিয়োগ কমে যাওয়া।


দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জুলাই-নভেম্বর ২১৫ কোটি ৮০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা কমে ১৮৪ কোটি ৫০ লাখ ডলারে নেমেছে, যা ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়েও কম। ওই বছরের জুলাই-নভেম্বরে ১৮৫ কোটি ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ।


বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে, তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে, সেটিকে নিট এফডিআই বলা হয়। দেশের অর্থনৈতিক সংকটের এই সময় নিট বিদেশি বিনিয়োগও কমে ৬৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত অর্থবছরে একই সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৭৬ কোটি ৪০ ডলার।


শেয়ার করুন