২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০১:১৯:৫৫ অপরাহ্ন
বাংলাবান্ধায় পাল্টে গেছে পঞ্চগড়
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০৭-২০২৩
বাংলাবান্ধায় পাল্টে গেছে পঞ্চগড়

বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর আগে ভারত, নেপাল ও ভুটানে পণ্য আমদানি ও রপ্তানির কাজে ব্যবহার হতো। বর্তমানে চতুর্দেশীয় এই স্থলবন্দর দিয়ে পঞ্চগড়সহ কয়েকটি জেলার মানুষও যাতায়াত করছেন। সহজ যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে এই বন্দর ব্যবহার করে এ অঞ্চলের মানুষ চিকিৎসার জন্য ভারতে যাচ্ছেন।  নেপাল ও ভুটানের মেডিক্যালে কলেজে অধ্যয়নরত বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা এই পথ দিয়ে সহজে যেতে পারছেন। মানুষের যাতায়াত এবং পণ্য আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে অধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে সরকার।


এছাড়া বন্দরকে ঘিরে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হওয়ায় এই জেলায় বেকারত্বের হারও কমেছে। এই এক বন্দরের জন্য বদলে গেছে পঞ্চগড়ের চিত্র। এক কথায় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ঘিরে এখানকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যানুযায়ী, নেপালের সঙ্গে  যোগাযোগ রক্ষার্থে ১৯৯৭ সালে বন্দরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ২০১১ সালে ভারতের সঙ্গে এবং ২০১৭ সালে ভুটানের সঙ্গে এই বন্দরে পণ্য আমদানি-রপ্তানির কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ২০১৬ সালে এই বন্দরে ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর চতুর্দেশীয় যাতায়াত ব্যবস্থা চালু হয়। এই বন্দরের মাধ্যমে ভারত থেকে পাথর, ভুট্টা, খৈল, আদা, গম, চাল, ফল এবং  নেপাল ও ভুটান থেকে উৎপাদিত ও বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত পণ্য আমদানি করা হয়। এছাড়াও দেশ থেকে পার্টস, গ্লাস শিট, ওষুধ, আলু, জুস, কটন ব্যাগ ও খাদ্যসামগ্রী রপ্তানি করা হয়। বর্তমানে এ বন্দরের কলেবর আরও ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় এটিকে আধুনিক বন্দরে রূপান্তরের জন্য মাস্টারপ্ল্যান গ্রহণ করে বাস্তবায়নের কাজ চলছে।


পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরটি বাংলাদেশের একমাত্র চতুর্দেশীয় সংযোগস্থল। মানুষের দৈনন্দিন অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে এর প্রভাব খুবই উল্লেখযোগ্য। এখানে বন্দরকেন্দ্রিক প্রায় ৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। পঞ্চগড়ের ১২ লাখ মানুষের জীবনমান উন্নতি হয়েছে। এ বন্দরকে আরও আধুনিক এবং অন্য দেশের সঙ্গে  যোগাযোগকে আরও সহজ করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের সড়ক পথ উন্নত করা হয়েছে। ফলে এ বন্দর ব্যবহার করে অনেকে ভারত, নেপাল ও ভুটানে যাচ্ছেন। আমাদের দেশের বিভিন্ন পণ্য আমরা রপ্তানি এবং এই বন্দর ব্যবহার করে আমাদের প্রয়োজনীয় জিনিস আমরা সহজে আমদানি করছি।


পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও জেলার বাসিন্দারা আগে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যেতেন। কেউ কেউ বুড়িমারী কিংবা হিলি বন্দর দিয়ে ভারতে যেতেন। এতে তাদের খরচ বেশি হতো, অনেক  ভোগান্তি পোহাতে হতো। ২০১৬ সালে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর চালু হওয়ার পর থেকে এসব জেলার বাসিন্দারা এখন সহজে ভারতে যাচ্ছেন। কেউ কেউ সকালে গিয়ে আবার বিকেলে  দেশে ফিরছেন।


গত বুধবার স্ত্রী সোমা আক্তারকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে যান ঠাকুরগাঁওয়ের বাসিন্দা মাজেদুল ইসলাম। চিকিৎসা শেষে গত শনিবার এ বন্দর দিয়ে দেশে ফিরেন তারা। শনিবার দুপুরে বাংলাবান্ধা বন্দরে কথা হয় তাদের সঙ্গে। মাজেদুল জানান, বুড়িমারী বন্দর দিয়ে যেতে অনেক খরচ। আবার ভোগান্তি। বাংলাবান্ধা দিয়ে সহজে, অল্প খরচে  বেশ কয়েকবার চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছেন। ঢাকা  যেতে যে খরচ, এর চেয়ে কম খরচে ভারতে যেতে-আসতে পারছেন।


বেলা সাড়ে ৩টা থেকে বন্দরের বাংলাদেশ অংশে দাঁড়িয়ে আছেন বগুড়ার নোমান খান। ঠিক ১৫ মিনিট পর অটোরিক্সাযোগে ভারত-বাংলাদেশ জিরো পয়েন্টের সাদা দাগে (সীমানা চিহ্ন) ব্যাগ-লাগেজ নিয়ে এসে দাঁড়ান এক তরুণী। জোর কদমে হেঁটে গিয়ে তরুণীর ব্যাগ-লাগেজ হাতে নেন নোমান খান। জানতে চাইলে নোমান খান জানান, তরুণী তার স্ত্রী। নাম ইশানা রায় চৌধুরী। তার বাড়ি ভারতের দার্জিলিং। প্রেম করে বিয়ে করেন তারা। স্ত্রী ইশানা দুপুরে খেয়ে রওনা দেন। অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে  পৌঁছে যান। দুজনের বাড়ি দুই বাংলায় হলেও মাসে কয়েকবার তারা এ বন্দর দিয়ে সহজে যাতায়াত করেন। স্থলবন্দরটির কারণে দুই বাংলার ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে।

দেখা যায়, ট্রাকভর্তি পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য বাংলাদেশে আসছে। আবার বাংলাদেশ থেকেও বিভিন্ন পণ্য ভারতে এবং ভারতের ফুলবাড়ি হয়ে নেপাল-ভুটানে নেওয়া হচ্ছে। ইমিগ্রেশন পার হয়ে দুই বাংলার মানুষজন সারি সারিভাবে আসা-যাওয়া করছেন। বাংলাদেশে আনা পাথর বাংলাবান্ধা  থেকে পঞ্চগড় সদরে যেতে রাস্তার দুই পাশে রাখা হয়েছে।  তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড়ের দরিদ্র মানুষ পাথর ভাঙার কাজ করছেন।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের ম্যানেজার অ্যান্ড পোর্ট ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ জনকণ্ঠকে জানান, বন্দরটির প্রধান সুবিধা হলো চার দেশকে সংযুক্ত করেছে। পঞ্চগড়ের হাইওয়ে  রোডটি এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে মিলেছে।

বন্দর দিয়ে নেপাল ও ভুটান থেকে পাথর বেশি আমদানি করা হয়। আমাদের দেশ থেকে খাদ্যসামগ্রীসহ জুট, গ্লাস, ওষুধ বেশি রপ্তানি করা হয়। আর আমদানিকৃত বেশির ভাগ পণ্য আসে নেপাল থেকে। তবে সরাসরি নেপাল পর্যন্ত আমাদের ট্রানজিট ব্যবস্থা না থাকায় পণ্য রপ্তানিতে বেগ  পেতে হয়। এই পথে দৈনিক প্রায় সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ ট্রাক আমদানি পণ্য আনা হয়, আর ৫০০-৬০০ মানুষ যাতায়াত করেন। দিন দিন বন্দরটির গুরুত্ব বাড়ছে।

পাথর ব্যবসায়ী ইয়ামিন জানান, আগে বুড়িমারী বন্দর দিয়ে পাথর নিয়ে আসতেন। এখন এই পথ দিয়ে সহজে ও অল্প খরচে প্রতি মাসে ৩০ হাজার সেফটি পাথর আমদানি করেন। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর হওয়ার কারণে যাতায়াতে অনেক সুবিধা হচ্ছে। এই বন্দরের রাস্তাগুলো অনেক ভালো, গাড়িতে মালামাল লোড করতেও সুবিধা হয়।


শেয়ার করুন