২৯ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার, ০৫:১৩:৫৯ পূর্বাহ্ন
নির্যাতন করে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে নেওয়ার ঘটনায় ২ পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৬-২০২৩
নির্যাতন করে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে নেওয়ার ঘটনায় ২ পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত

হাইকোর্ট থেকে জামিন নেওয়া আসামি এবং তাঁদের স্বজনদের থানায় আটকে নির্যাতন করে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে নেওয়ার ঘটনায় ওসি ও পুলিশ পরিদর্শককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এর আগে তাঁদের প্রত্যাহার করা হয়েছিল।


গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ওই আদেশ দেওয়া হয়েছে। আদেশটি আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় শরীয়তপুরের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পৌঁছায়।


শরীয়তপুরের নাওডোবা বাজারের ব্যবসায়ী আবু জাফর ওরফে ঠান্ডু চোকদারকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে নেওয়া এবং একটি ছিনতাই মামলার চার আসামিকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ ওঠার পর এই দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। 


ওই ঘটনায় অভিযুক্ত আরেক পুলিশ কর্মকর্তা নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনিরের বিরুদ্ধে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। 


সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার সদ্য প্রত্যাহার হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান ও পরিদর্শক (তদন্ত) সুরুজ উদ্দিন আহম্মেদ।


মোস্তাফিজুর রহমানকে চট্টগ্রাম ও সুরুজ উদ্দিনকে বরিশাল রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়েছে। এর আগে ৭ জুন মোস্তাফিজুরকে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা থেকে প্রত্যাহার করে শরীয়তপুর পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছিল। 


পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নাওডোবা বাজারের ব্যবসায়ী আবু জাফর ওরফে ঠান্ডু চোকদার ২ জুন পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি বলেন, ৩১ মে গভীর রাতে তাঁকে বাড়ি থেকে থানায় তুলে নেন জাজিরার পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুরুজ উদ্দিন আহমেদ। সেখানে নিয়ে নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও ওই থানার ওসি শেখ মোস্তাফিজুর রহমান তাঁকে তাঁর চার আত্মীয়ের পক্ষে ৭২ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেন। এর বিনিময়ে তাঁকে বলা হয়, ওই আত্মীয়দের মালিকানাধীন নাওডোবা বাজারের দুটি দোকান তাঁর নামে লিখে দেওয়া হবে। তবে এতে রাজি হননি আবু জাফর। 


পিটিয়ে ৭২ লাখ টাকা আদায়: অতিরিক্ত এসপি ও ওসির বিরুদ্ধে মামলা, ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ আদালতেরপিটিয়ে ৭২ লাখ টাকা আদায়: অতিরিক্ত এসপি ও ওসির বিরুদ্ধে মামলা, ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ আদালতের

তখন ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাঁকে (আবু জাফর) মারধর করেন। একপর্যায়ে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে দিতে রাজি হলে তাঁর চাচা ও মামলার আসামি রশিদ চোকদারের জিম্মায় ভোরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরদিন সকালে ন্যাশনাল ব্যাংক নাওডোবা শাখায় নিজের হিসাব নম্বরের ৫টি চেকে ৭২ লাখ টাকা লিখে দেন আবু জাফর। ওই চেকগুলো ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে দেওয়া হয়। 


আবু জাফর ঠান্ডু চোকদারের ওই অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন পুলিশ সুপার। শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ বদিউজ্জামানকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়। তিনি পুলিশ সুপারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন। 

পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা সূত্র ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২৩ মে শাহীন আলম শেখ বাদী হয়ে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় সাদ্দাম, বকুলসহ নয়জনের নাম নিয়ে অজ্ঞাত পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করে ছিনতাই মামলা করেন।

এজাহারে বলা হয়, গত ২১ মে দুপুরে পদ্মা সেতু জাজিরা প্রান্তের নাওডোবা এলাকার এক্সপ্রেসওয়ের সোহাগ পরিবহন থেকে জাজিরা উপজেলার বাসিন্দা শাহীন আলম শেখ (২০) ও সেকেন্দার মাতবরকে (৫১) জোরপূর্বক নামিয়ে তাঁদের সঙ্গে থাকা মার্কিন ডলার, মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ছিনতাই করেন স্থানীয় সাদ্দাম চোকদার, বকুল চোকদারসহ ১০-১১ জন। ডলারসহ যার আনুমানিক মূল্য ২১ লাখ ১৫ হাজার ২৫০ টাকা।

শাহীন আলম শেখ ও সাদ্দাম চোকদারের সঙ্গে দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যবসা-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে শত্রুতা রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। 

এই মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়া চার আসামির ভাষ্য অনুযায়ী, ২৯ মে তাঁরা উচ্চ আদালত থেকে ছয় সপ্তাহের জামিন পান। এরপর রাতে তাঁরা ঢাকার কেরানীগঞ্জের একটি বাসায় অবস্থান করছিলেন। সেখানে তাঁদের আটকে রেখে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও ওসি শেখ মোস্তাফিজুর রহমান নির্যাতন করেন। এরপর দুই দিন থানায় আটকে রেখে তাঁদের নির্যাতন করে। তাঁদের আত্মীয় আবু জাফর ওরফে ঠান্ডু চোকদারকে বাড়ি থেকে তুলে এনে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে নেওয়া হয়। এরপর চারজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। ওই যুবকদের নির্যাতনের চিত্র আদালতের নজরে এলে তাঁদের চিকিৎসা করানো ও মেডিকেল প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। মেডিকেল প্রতিবেদন পাওয়ার পর ৭ জুন শরীয়তপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল ইমরান নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩-এর ৫ ধারা বিধান অনুযায়ী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও ওসি শেখ মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন। 

সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে জানতে পুলিশ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান ও সুরুজ উদ্দিন আহমেদকে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁরা রিসিভ করেননি। 

শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার সাইফুল হক বলেন, ‘পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ওই আদেশটি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমাদের কাছে পৌঁছায়। তাঁদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

শেয়ার করুন