০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, সোমবার, ১২:০৭:০৪ পূর্বাহ্ন
টিআর কর্মসূচিতে কারিগরি ল্যাব: এবার হাতে-কলমে শিখবে পবার শিক্ষার্থীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০৯-২০২৫
টিআর কর্মসূচিতে কারিগরি ল্যাব: এবার হাতে-কলমে শিখবে পবার শিক্ষার্থীরা

বইয়ের পাতায় দেখা জামার ডিজাইন বা শ্রেণিকক্ষে শোনা ইলেকট্রিক্যাল বিষয়ে কাজের বর্ণনা এখন আর শিক্ষার্থীদের কাছে কেবল কল্পনা হয়ে থাকবে না। পবা উপজেলার মহানগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটে রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) উদ্বোধন করা হয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ কারিগরি ল্যাবরেটরি। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সব কিছু হাতে-কলমে শেখার সুযোগ পাবে। এই উদ্যোগ এলাকার কারিগরি শিক্ষার প্রসারে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সাধারণত রাস্তাঘাট, সেতু বা কালভার্ট নির্মাণের মতো গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যবহৃত হলেও এবার ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে ব্যয় করা হয়েছে টিআর প্রকল্পের তহবিল। এই ল্যাবের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরাফাত আমান আজিজ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বর্তমান বিশ্ব প্রতিযোগিতার বিশ্ব। এখানে টিকে থাকতে হলে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। সরকার দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। টিআর প্রকল্পের মাধ্যমে সাধারণত অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়, কিন্তু মানবসম্পদ উন্নয়ন সবচেয়ে বড় উন্নয়ন। এই ল্যাবটি সেই উন্নয়নের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।’


তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীরা চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেরাই উদ্যোক্তা হবে, অন্যদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করবে। এই ল্যাব থেকে অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতা তাদের সেই স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করবে। আমি আশা করি, শিক্ষার্থীরা এই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করবে এবং নিজেদেরকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করবে।’

ল্যাব নির্মাণের মূল উদ্যোক্তা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) প্রকৌশলী আবু বাশির বলেন, ‘টিআর প্রকল্পের মূল লক্ষ্য গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ। তবে এবার নতুনভাবে চিন্তা করেছি—গ্রামের ভিত শক্ত করতে হলে দরকার দক্ষ জনশক্তি। সরকারের এই অর্থকে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনিয়োগ করে আমরা এর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে চেয়েছি।’


নতুন এই ল্যাব পেয়ে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাইম ইসলাম বলে, ‘অনেক কিছু আগে শুধু বইয়ে ছবি দেখে বা স্যারেদের মুখে শুনে বোঝার চেষ্টা করতাম। ইলেকট্রিক্যাল বিষয়ের সার্কিটগুলো এতদিন শুধু খাতায় আঁকতাম। এখন মাল্টিমিটার ও অন্যান্য যন্ত্র দিয়ে মেপে দেখতে পারব, যা আমাদের জ্ঞানকে আরও পাকাপোক্ত করবে। এই ল্যাব আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের জন্য বিশাল একটি সুযোগ।’


ড্রেস মেকিং ট্রেডের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমনা খাতুন তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলে, ‘সেলাই মেশিনে আধুনিক ডিজাইন তৈরির কৌশলগুলো এখন আমরা নিজেরাই করে দেখতে পারব। বইয়ে যে সুন্দর সুন্দর জামার ডিজাইন দেখতাম, সেগুলো কীভাবে বানাতে হয়, তা এখন হাতে-কলমে শিখতে পারব। এতে আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে গেছে।’

এবিষয়ে ইনস্টিটিউটের ইন্সট্রাক্টর প্রকৌশলী মো. রায়হানুল ইসলাম বলেন, ‘এই ল্যাবটি আমাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য এক নতুন দিগন্তের সূচনা করল। ব্যবহারিক জ্ঞানের অভাবে তারা এতদিন চাকরির বাজারে পিছিয়ে পড়ত। এখন এই ল্যাবের মাধ্যমে তারা হাতে-কলমে কাজ শিখে নিজেদের দক্ষ করে তুলতে পারবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারবে।’


ল্যাবটিতে বিভিন্ন ট্রেডের জন্য আধুনিক সব সরঞ্জাম স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে: কম্পিউটার ট্রেডে ছয়টি কম্পিউটার, একটি প্রিন্টার ও একটি প্রজেক্টর; ড্রেস মেকিং ট্রেডে দুটি ইলেকট্রিক জ্যাক সেলাই মেশিন, বোতাম লাগানোর মেশিন ও কাঁচামাল; ইলেকট্রনিক্স ট্রেডে সোল্ডারিং আয়রন, হট গান, মাল্টিমিটারসহ নানা যন্ত্রপাতি; আর ইলেকট্রিক্যাল ট্রেডে রয়েছে ডিজিটাল মাল্টিমিটার ও অ্যাভোমিটার।


উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মকসেদ আলী, সহকারী অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান, প্রভাষক মো. হক সাদ আলী, ইন্সট্রাক্টর আহমেদ শরীফ।

শেয়ার করুন