২৭ জুলাই ২০২৫, রবিবার, ০৮:১৪:৪৯ অপরাহ্ন
রাজশাহীতে পড়ে আছে ২০০ শয্যার শিশু হাসপাতাল, দখলচেষ্টা স্থানীয় মাস্তানদের
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৭-২০২৫
রাজশাহীতে পড়ে আছে ২০০ শয্যার শিশু হাসপাতাল, দখলচেষ্টা স্থানীয় মাস্তানদের

রাজশাহী নগরীর টিবিপুকুর এলাকায় পড়ে আছে ২০০ শয্যা বিশিষ্ট নবনির্মিত শিশু হাসপাতালের ভবন। দুই বছর আগে ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হলেও এখন হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়নি। এ অবস্থায় অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হতে বসেছে। এরই মধ্যে গত ৫ আগস্টের পর স্থানীয় একটি মাস্তান বাহিনী ভবনটি দখল করারও চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে ঠিকাদারদের লোকজনের বাধার কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। বাধা দেওয়ার সময় ঠিকাদারের পাহাদারকে মারপিটও করা হয়েছিল ওই সময়।


গতকাল সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এ হাসপাতালটির নির্মাণকাজ শেষ হয় গত ২০২৩ সালে। কিন্তু ব্যবহার না হওয়া ভবনের রংও উঠতে শুরু করেছে। লাগানো এসিগুলো দুই বছর ধরে ব্যবহৃত না হওয়ায় নষ্ট হতে বসে। কক্ষের ভিতরে পড়ে আছে বিশালকার দামি দামি ফ্রিজগুলো। যেগুলোতে ওষুধসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র রাখার কথা। হাসপাতালটি চালু না হওয়ায় এবং কোনো কতৃৃপক্ষ বুঝে না নেওয়ায় নির্মাণকাজের জন্য নিয়োজিত ঠিকাদারের একজন লোক দিয়ে হাসপাতাল ভবনটি পাহারা দেয়া হচ্ছে।


সূত্র মতে, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে অতিরিক্ত শিশু রোগীর চাপ সামলাতে এবং বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা চালু করতেই ২০১৬ সালে হাসপাতালের পাশেই শিশু হাসপাতাল নির্মাণকাজ শুরু হয়। সেই কাজ শেষ হয় ২০২৩ সালের জুনে। তবে ২০০ শয্যার এই শিশু হাসপাতালটি এখনো বুঝে নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত বিভাগ শুধুমাত্র ভবনটির অবকাঠামোগত বিষয়টি নিয়েছেন। কিন্তু কাদের দিয়ে তারা কাজ শুরু করাবেন সেটি বুঝে উঠতে পারছেন না।

রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী বিষয়টি নিয়ে সিভিল সার্জনকে চিঠি দিয়েছেন। সিভিল সার্জন দপ্তর থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছে ভবনটিতে শিশু হাসপাতাল হিসেবে চালু করতে। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ নিয়ে কোনো দিক-নির্দেশনা আসেনি। ফলে এখন পর্যন্ত ভবনটি চালু করা যাচ্ছে না।


ঠিকাদারের পাহারাদার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ভবনটি নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই পাহারা দিচ্ছি। কেউ কোনো দিন এসে কিছু বলার সাহস পাইনি। কিন্তু ৫ আগস্টের পর কয়েক দফা ভবনটি দখলের চেষ্টা করে স্থানীয় মাস্তান বাহিনী। ভবনটি পড়ে আছে বলেই স্থানীয়রা দখল করার চেষ্টা করছে। চালু হলে তো আর করতে পারবে না। আবার একা পাহারা দেওয়ার কারণেও রাতের আঁধারে সুযোগ পেলেই বিভিন্ন জিনিসপত্র চুৃরি করে নিয়ে যাচ্ছে। আমি একা মানুষ কয়দিকে সামলাবো। এতো বড় ভবন পাহারা দেওয়া তো কষ্ট।


ঠিকাদারের ইঞ্জিনিয়ার ফরহাদ সরকার জানান, ভবনটি চালু না হওয়ার কারণে চোরেরা জানালার অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেম খুলে নিয়ে যাচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভবন হস্তান্তরের আহ্বানে সাড়া দিচ্ছেন না।


রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হায়াত মুহাম্মদ শাকিউল আজম বলেন, ‘আমরা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে চিঠি দিয়ে হাসপাতালটি বুঝে নেওয়ার জন্য বার বার অনুরোধ করছি। কিন্তু জনবল নিয়োগ না হওয়ায় তারাও বুঝে নিতে পারছে না। এ কারণেই পড়ে আছে ভবনটি।’


সিভিল সার্জন ডা. এস, আই, এম রাজিউল করিম বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। তবে আমি আসার আগেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একাধিবার চিঠি দেয়া হয়েছে।অ সেখান থেকে জনবল নিয়োগের বা হাসপাতালটি কিভাবে চালু হবে সে নিয়ে কোনো দিক-নির্দেশনা আসেনি। এ কারণে আমরা ভবনটি বুঝে নিতে পারছি না।’


এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন রাজশাহী জেলার সভাপতি আহমেদ শফি উদ্দিন বলেন, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের রোগীদের চাপ সামলাতে নতুন করে বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল চালুর উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। এটি অবশ্যই একটি ভালো পদক্ষেপ ছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গাফলতির কারণে যদি এই হাসপাতালটি চালু না হয়, তাহলে বিষয়টি হবে সত্যিই দুঃখজনক। দ্রুতি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে এবং জনবল নিয়োগ দিয়ে ভবনটিতে হাসপাতালের সার্বিক কার্যক্রম চালু করা উচিত।


শেয়ার করুন