০৯ জুলাই ২০২৫, বুধবার, ০৯:২৬:০০ অপরাহ্ন
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি যুক্তরাজ্যের
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৭-২০২৫
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি যুক্তরাজ্যের

গাজায় মানবিক সংকট অব্যাহত থাকলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাজ্য। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি মঙ্গলবার পার্লামেন্টের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির বৈঠকে এ মন্তব্য করেন।


তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থনে গঠিত ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএফএইচ) নামের ত্রাণ সরবরাহব্যবস্থা ব্যর্থ হয়েছে। “আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি—এই ফাউন্ডেশনকে আমরা সমর্থন করি না। এটা কার্যকরভাবে কাজ করছে না। অনেক মানুষ এখনো অনাহারে, অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন,” বলেন ল্যামি।


গত কয়েক সপ্তাহে জিএফএইচ-এর সহায়তা নিতে গিয়ে বহু ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি গুলিতে নিহত হয়েছেন বলেও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।


বৈঠকে এক আইনপ্রণেতা ল্যামিকে প্রশ্ন করেন—‘গাজায় এই সহ্য করা অসম্ভব পরিস্থিতি চলতে থাকলে যুক্তরাজ্য কি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে?’ জবাবে ল্যামি বলেন, ‘হ্যাঁ, নেব।’


গত মাসে যুক্তরাজ্য অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও নরওয়ের সঙ্গে একযোগে ইসরায়েলি মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ও বেজালেল স্মোটরিচের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেওয়ার দায়ে তাদের ওপর এই পদক্ষেপ নেয়া হয়।


এর আগেই যুক্তরাজ্য ইসরায়েলের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আলোচনা স্থগিত করে। গাজা অবরোধ ঘিরে খাদ্যসংকট শুরু হলে লন্ডন থেকে কিছু অস্ত্র রপ্তানিও বন্ধ রাখা হয়।


তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, এসব পদক্ষেপ এখনো প্রতীকী পর্যায়ে রয়েছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কার্যকর চাপ তৈরিতে তা যথেষ্ট নয়।


ল্যামি বৈঠকে বলেন, পশ্চিম তীরে অবৈধ ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ ও দখলদারি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে। তবে যুক্তরাজ্যের চাপ প্রয়োগে তেল আবিবের আচরণে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে কি না—এমন প্রশ্নে ল্যামি স্বীকার করেন, এখনো পরিবর্তন ‘অপর্যাপ্ত’।


তবুও তিনি যুক্তরাজ্যের অবস্থানকে অন্য জি–৭ দেশ বা ইউরোপের মিত্রদের তুলনায় অনেক শক্তিশালী বলে দাবি করেন।


তিনি আরও বলেন, ‘আমরা হয়তো এককভাবে পুরো অঞ্চলকে পাল্টে দিতে পারি না, কিন্তু যা করছি, তার সঙ্গে তুলনীয় কেউ নেই।’


প্রসঙ্গত, যুক্তরাজ্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এবং ইসরায়েলের একটি বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। পাশাপাশি গাজায় আটক ইসরায়েলিদের অবস্থান শনাক্তে ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ার ফোর্স বহু নজরদারি অভিযানও পরিচালনা করেছে।


অন্যদিকে যুক্তরাজ্য নিজ দেশেও ফিলিস্তিনি অধিকারকর্মীদের ওপর চাপ বৃদ্ধি করেছে। সম্প্রতি ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ নামের একটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয় এবং বহু কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।


ল্যামি বলেন, যুক্তরাজ্য একতরফাভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চায় না। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই এই স্বীকৃতি এমন এক সময়ে আসুক, যখন তা বাস্তব সমাধানের পথ তৈরি করতে সহায়ক হবে।’


তবে পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ার এমিলি থর্নবেরি বলেন, অব্যাহত দখলদারি ও বসতি সম্প্রসারণের বাস্তবতায় যদি যুক্তরাজ্য আর অপেক্ষা করে, তাহলে ‘স্বীকৃতি দেওয়ার মতো কিছু থাকবে না’।


তিনি বলেন, ‘আমরা এখনই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়ে সেই রাষ্ট্র গঠনের জন্য কাজ শুরু করতে পারি। না হলে, এই সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে।’


শেয়ার করুন