২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ১২:৫৯:২২ পূর্বাহ্ন
সংকটেও স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ শোধে রেকর্ড
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০২-২০২৪
সংকটেও স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ শোধে রেকর্ড

ডলার সংকট প্রকট হওয়ার বছরেও রেকর্ড পরিমাণ বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ। গত বছর এ ধরনের ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল সাড়ে ৩০ বিলিয়ন ডলার। এতে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণের স্থিতি কমে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২২ সাল শেষে ছিল ১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার।


ছয় বছরের মধ্যে গত বছরই শুধু বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণের স্থিতি কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। গত বছর স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপে ডলার সংকট আরও গভীর হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, নানা উপায়ে আমদানি কমানো এবং রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধির পরও ডলার সংকটের বড় কারণ ঋণ পরিশোধের চাপ। নানা কারণে এখন বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ আসছে কম।


বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ সুদহার অনেক বাড়িয়েছে। ফলে এসব দেশে ডলার চলে গেছে। আবার অনেক উদ্যোক্তা এখন ঋণ নিতে চাইছেন না। কেননা বছর দুয়েক আগে ২ থেকে ৩% সুদে বিদেশি ঋণ পাওয়া গেলেও তা এখন ৯ শতাংশের ওপরে উঠেছে। এ সময় ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ৩০ শতাংশের মতো। আগামীতে ডলারের দর বা সুদহার কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা কেউ জানে না। যে কারণে অনেকে ঋণ নিতে চাইছেন না। এতে স্বল্পমেয়াদি ঋণ পরিশোধ দ্রুত হওয়া ও নতুন ঋণ না পাওয়ায় সার্বিকভাবে বিদেশি ঋণ এত বেশি কমেছে।


প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বেসরকারি খাতে বাংলাদেশ স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ পেয়েছে ২৫ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে মূল পরিশোধ হয় ৩০ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ গত বছর নিট স্বল্পমেয়াদি ঋণ শোধ করা হয় চার দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। আর ২০২২ সালে ঋণ পেয়েছিল ৩৭ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার, পরিশোধ করা হয়েছিল ৩৬ দশমিক ৪৮ ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, গত বছর রিজার্ভের বড় পতনের অন্যতম কারণ স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ আগের তুলনায় পরিশোধের চাপ বেশি ছিল। দুমাস পর আবারও রিজার্ভ কমে ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে।


এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, বিদেশি ঋণের সুদহার অনেক বেড়ে গেছে। আগে যেখানে লাইবর ১% ছিল, সেটা এখন বেড়ে পাঁচ থেকে ৬% হয়ে গেছে। এতে উচ্চ রেটে উদ্যোক্তারা ঋণ আনতে চাচ্ছে না। এ ছাড়া ডলারের এখনো অস্থিরতা কাটেনি। গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে ৩০% টাকার দরপতন হয়েছে। এ অস্থিরতা ঋণ পরিশোধেই বেশি মনোযোগী। ঋণ নেওয়ায় আগ্রহ নেই।


কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, বৈদেশিক ঋণের জন্য সর্বোচ্চ সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট-এসওএফআরসহ সাড়ে ৩% সুদ প্রদান করতে হবে। তবে এখন তা বাড়িয়ে ৪% করা হয়েছে। বর্তমানে এসওএফআর ৫ শতাংশের ওপরে দাঁড়িয়েছে, যা একসময়ে ছিল ১ শতাংশেরও কম।


এদিকে গত বছর ঋণ পরিশোধ বেশি হওয়ার পাশাপাশি সুদ পরিশোধও বেড়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর সুদ পরিশোধ হয় ৬৫৪ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছর ছিল ২৪৬ মিলিয়ন ডলার। খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, বেসরকারি খাতে ঋণের সুদ পরিশোধ আগের তুলনায় বাড়তে পারে মূলত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুদহার বৃদ্ধির কারণে। এ ছাড়া আগের অনেক সুদ সময়মতো পরিশোধ করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। ওই সুদ পরিশোধে সময় নেওয়া হয়েছিল। সেই সময় শেষ হওয়ায় সুদ পরিশোধ করছেন ব্যবসায়ীরা। সে কারণেও আগের তুলনায় সুদ পরিশোধ বাড়তে পারে।


শেয়ার করুন