০২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৬:১৯:৩০ পূর্বাহ্ন
বিরোধী দল কে হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০১-২০২৪
বিরোধী দল কে হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা আবারও সংসদীয় দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী হবেন, তা নিয়ে কারও মধ্যে সংশয় নেই। তবে এই সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা কে হবেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই গেছে এখনো।


রীতি অনুযায়ী সংসদে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলই বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকে এবং ওই দল থেকেই বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হন। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। সদ্য সমাপ্ত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে জাতীয় পার্টি ১১টি আসনে জিতেছে। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দখলে রয়েছে ৬২টি আসন।


দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতীয় পার্টির তুলনায় স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য বেশি হওয়ায় বিরোধী দলের আসনে কারা বসবেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। 


তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংসদীয় কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী স্বতন্ত্ররা ঐকমত্য হয়ে বিরোধী দলের নেতা নির্বাচন করতে পারবেন। তাঁরা না চাইলে জাপা বিরোধী দলের আসনে বসবে। 


স্বতন্ত্রদের আচরণের ওপর সংসদের বিরোধী দল নির্ভর করছে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও সংসদ বিশেষজ্ঞ নিজাম উদ্দিন আহমেদ। সরকারের সাবেক আমলা ও সংসদ বিশেষজ্ঞ এ কে এম মোহাম্মদ আলী বলেন, সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা বাদে বাকিদের মধ্যে যে ব্যক্তির প্রতি অধিকাংশ সংসদ সদস্যের আস্থা আছে, তিনিই হবেন বিরোধীদলীয় নেতা। এ ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি থেকেও হতে পারে, আবার স্বতন্ত্র কিংবা কল্যাণ পার্টি থেকেও হতে পারে। 


স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে যে ৬২ জন জয়লাভ করেছেন, তাঁদের দুজন ছাড়া বাকিরা সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। স্বতন্ত্রদের অন্তত ৫ জনের সঙ্গে কথা হয়েছে আজকের পত্রিকার। তাঁদের সবাই বিরোধী দলে বসতে অনাগ্রহের কথা জানিয়েছেন। বরিশাল থেকে নির্বাচিত পংকজ নাথ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অভিভাবক। দেশ, গণতন্ত্র ও সরকার পরিচালনার 


স্বার্থে আমাদের মতো কর্মীদের উনি যেখানে কাজে লাগাবেন, আমরা সেটাই করব। সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনার।’ হবিগঞ্জ থেকে নির্বাচিত আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী বলেন, ‘আমি পারিবারিকভাবে জয় বাংলার মানুষ। শেখ হাসিনার কর্মী, বঙ্গবন্ধু আমার নেতা। এর বাইরে আমার কোনো পরিচয় নেই। নেত্রী যদি সুযোগ না দিতেন আমি স্বতন্ত্র দাঁড়াতে পারতাম না।’ 


স্বতন্ত্রদের কথা বাদ দিলে বাকি থাকে জাতীয় পার্টি। বিরোধী দলের নেতা কে হচ্ছেন—জানতে চাইলে দলটি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিরোধী দল গঠন আমাদের দিয়ে করাবে নাকি স্বতন্ত্র দিয়ে—এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই সিদ্ধান্ত নেবেন। আর আমাদের নেতারা সবাই ঢাকার বাইরে আছেন, ঢাকায় ফিরলে এ বিষয়ে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।’

আওয়ামী লীগ কী ভাবছে 


আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একাধিক নেতা বলেন, একাদশ সংসদে বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি ভালোই ভূমিকা রেখেছে। দলটি থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এমপি নির্বাচিত হওয়ায় দ্বাদশ সংসদেও তাদের বিরোধী দলের আসনে বসার সম্ভাবনা প্রবল। তবে এখনো এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। 


বিরোধী দল কারা হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবার সময় তো দূরে নয়। যিনি সংসদ নেতা হবেন তিনি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।’ 

ওবায়দুল কাদের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর ওপর ছেড়ে দিলেও বিরোধী দল নিয়ে সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিতে বলা আছে, ‘বিরোধী দলের নেতা’ অর্থ স্পিকারের বিবেচনামতে যে সংসদ সদস্য সংসদে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চসংখ্যক সদস্য লইয়া গঠিত ক্ষেত্রমত দল বা অধিসঙ্গের নেতা।


শেয়ার করুন