০২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১১:০০:২১ পূর্বাহ্ন
উন্নয়ন যাত্রায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে ভারত
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০২-২০২৩
উন্নয়ন যাত্রায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে ভারত

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিসহ উন্নয়ন যাত্রায় ভারত বাংলাদেশের পাশে থাকবে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি তার দেশের úূর্ণ সমর্থন রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা সফররত দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা জানান।

অন্যদিকে একই দিন দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে উভয় দেশের অনিষ্পন্ন ইস্যু নিষ্পত্তির বিষয়ে ভারতের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে তিস্তাসহ সব আন্তঃসীমান্তবর্তী নদীর পানিবণ্টনের বিষয়ে দ্রুত চুক্তি সম্পাদনে দেশটির নিবিড় সহযোগিতা প্রত্যাশা করে ঢাকা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শেখ হাসিনাকে চলতি বছরের ৯-১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠেয় গ্রুপ অব টোয়েন্টি (জি-২০) শীর্ষ সম্মেলনের ১৮তম আসরে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানান। প্রধানমন্ত্রী আমন্ত্রণ গ্রহণ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ২০২৩ পর্যন্ত জি ২০-এর সভাপতির দায়িত্বে থাকা ভারত গ্রুপটির সব বৈঠকে বাংলাদেশকে ‘অতিথি দেশ’ হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তিনি বলেন, দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বন্ধনকে অত্যন্ত দৃঢ় বলে বর্ণনা করে বিনয় কোয়াত্রা বলেছেন, সমগ্র বিশ্ব এখন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে মূল্যায়ন করে, যা ইতোমধ্যেই কৌশলগত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই সম্পর্ক আরও মজবুত হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এ প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী ভারতকে বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেন এবং এই বন্ধুত্ব আরও গভীর হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বলেন, দুই প্রতিবেশীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উভয় দেশই কাজ করতে পারে। তারা ভারতের লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) শর্তাবলি সহজ করার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় ব্যবসাবাণিজ্য দুই দেশের স্থানীয় মুদ্রা ব্যবহার করেই পরিচালনা করা যেতে পারে। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে গতকাল দুপুরে সার্ভিস একাডেমিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বিনয় মোহন কোয়াত্রা। সেখানে দুই বছর পর অনুষ্ঠিত ‘ফরেন অফিস কনসালটেশনে (এফওসি) বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা। এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তবে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব ব্রিফিংয়ে অংশ নেননি।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এফওসিতে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা বলেছি, বাংলাদেশের সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশী ও গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু হিসেবে ভারতের কাছে যেসব অনিষ্পন্ন ইস্যু রয়েছে, সেগুলো নিষ্পত্তির বিষয়ে তাদের সহায়তা কামনা করি। তিনি জানান, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিস্তাসহ সব আন্তঃসীমান্তবর্তী নদীর পানিবণ্টনের বিষয়ে দ্রুত চুক্তি সম্পাদনের ওপর গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে সই করা চুক্তি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নিতে ভারতকে বলা হয়েছে।

ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধিতে কম্প্রেহিনসিভ পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট- সেপা চুক্তি করার বিষয়ে দ্রুত আলোচনায় বসার বিষয়টি এসেছে এফওসিতে। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘ভারত আমাদের দ্বিতীয় বৃহত্তর বাণিজ্য অংশীদার। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধিতে যে সমস্ত ট্র্যারিফ বা বাধা আছে, সেগুলো দূর করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছি। আমরা ভারত থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছি।’

মাসুদ বিন মোমেন জানান, বৈঠকে সেপা সম্পাদনের জন্য আলোচনা দ্রুত সময়ের মধ্যে করতে বলেছে বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক পযায়ে রেল ও সড়ক যোগাযোগ বৃদ্ধি, পর্যটকদের ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণের বিষয়েও আলোচনা হযেছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানেও ভারতের সহযোগিতা চাওয়া হয়। তবে ভারতের পররাষ্ট সচিবের সঙ্গে বাংলাদেশের নির্বাচন এবং ভারতের গৌতম আদানির গোড্ডা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান মাসুদ বিন মোমেন।

অন্যদিকে, গতকাল ভারতীয় হাইকমিশন থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এই সফরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রতি ভারতের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি, বাংলাদেশকে ভারতের ‘নেইবারহুড ফার্স্ট পলিসি’র একটি অপরিহার্য অঙ্গ ও ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’র মূল অংশীদার হিসেবে তুলে ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বার্তা পৌঁছে দেন। দুই পররাষ্ট্র সচিবই এই সম্পর্কের সব দিক নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেন। উভয় পক্ষই ভারত সরকারের অর্থায়নে ‘লাইন অব ক্রেডিট’, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, সংযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা এবং মানুষে মানুষে বন্ধনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চলমান দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতাকে আরও জোরদার করতে সম্মত হয়েছে। এ ছাড়া উভয় পক্ষই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যপদের জন্য আসন্ন প্রার্থিতার ব্যাপারে পারস্পরিক সমর্থন প্রদান করতে সম্মত হয়েছে।

শেয়ার করুন