২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০৩:০০:৫৩ পূর্বাহ্ন
পাঁচ মেগা প্রকল্পে মিলবে বৈদেশিক সহায়তা
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-১২-২০২২
পাঁচ মেগা প্রকল্পে মিলবে বৈদেশিক সহায়তা

ঢাকায় দুটি মেট্রোরেলসহ মেগা পাঁচ প্রকল্পে অর্থায়ন করতে চায় কোরিয়া। কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের মাধ্যমে এ সহায়তা দিতে চেয়েছে দেশটি। তবে কত অর্থ দেবে, এ বিষয়ে এখনো বিস্তারিত জানানো হয়নি। এ অবস্থায় আজ ও আগামীকাল কোরিয়া সরকার ও সে দেশের এক্সিম ব্যাংকের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দুদিনের বৈঠকে বসছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।

ইআরডি সূত্র জানায়, কোরিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে তারা ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট প্রমোশন ফ্যাসিলিটি (ইডিপিএফ) নামে একটি নতুন তহবিল গঠন করেছে। সেখান থেকে অর্থায়ন করতে চায় ঢাকা মেট্রোরেল লাইন-৪, সাউদার্ন রুট অব মেট্রোরেল-৫ এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে। আরও আছে ঢাকা রিং রোড প্রকল্প এবং মেঘনা ব্রিজ প্রজেক্ট। এসব প্রকল্পসংশ্লিষ্টরাও বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। বৈঠকে প্রকল্পগুলোয় অর্থায়নের পাশাপাশি কোরিয়ার নতুন অর্থনৈতিক সহায়তা কর্মসূচির বাস্তবায়ন নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করবে উভয় পক্ষ।

এ প্রসঙ্গে ইআরডির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রোববার যুগান্তরকে বলেন, আমাদের ঋণ দরকার। নতুন এ তহবিল থেকে কোরিয়া মেগা প্রকল্পগুলোয় অর্থায়ন করলে আমাদের জন্য ভালো হবে। কেননা আমরা এসব প্রকল্পে দীর্ঘ সময় অর্থের উৎস সন্ধান করছি। সেই সঙ্গে কোরিয়ার নতুন অর্থায়ন স্কিম থেকে বড় অঙ্কের সহায়তা পাওয়ার আশা করছি। তবে সবকিছু নির্ভর করছে আলাপ-আলোচনার ওপর।

সূত্র জানায়, এমআরটি লাইন-৪ নির্মাণ করা হবে রাজধানীর কমলাপুর হয়ে সাইনবোর্ড এবং নারায়ণগঞ্জের মদনপুর পর্যন্ত। এটি উড়াল ও পাতাল সমন্বয়েই তৈরি করা হবে। এর জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করতে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা খুঁজছিল ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। ২০৩০ সালের মধ্যে এটির নির্মাণকাজ শেষ করতে চায় সরকার। সেক্ষেত্রে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক তাদের সহায়তার কথা জানিয়েছে।

এছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে রাজধানীর গাবতলী থেকে দাশেরকান্দি পর্যন্ত ১৭ দশমিক ৪০ কিলোমিটার মেট্রোরেল এমআরটি-৫ নির্মাণের উদ্যাগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গাবতলী থেকে আফতাবনগর পশ্চিম পর্যন্ত ১২ দশমিক ৮০ কিলোমিটার পাতাল এবং আফতাবনগর সেন্টার থেকে দাশেরকান্দি পর্যন্ত ৪ দশমিক ৬০ কিলোমিটার উড়াল মেট্রোরেল হওয়ার কথা। এ প্রকল্পের আওতায় ১৫ স্টেশনের মধ্যে ১১টি পাতাল এবং চারটি উড়াল নির্মাণ করা হবে। ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, এ মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য ২০২১ সালের ২১ এপ্রিল নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছে। পূর্ণ সম্ভাব্যতা যাচাইও শেষ হয়েছে ৩০ নভেম্বর। বিভিন্ন সার্ভে এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইনের কাজ চলছে। ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন কাজের অগ্রগতি ৮০ শতাংশ। এরই মধ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার ভিত্তিতে মূল প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় বৈদেশিক অর্থায়ন হিসাবে সহায়তার জন্য কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনা হবে। এছাড়া ঢাকা রিং রোড প্রকল্পটি সম্পর্কে বলা হয়েছে, রাজধানীর যানজট কমাতে ঢাকার চারপাশে হচ্ছে আউটার রিং রোড। এজন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করছে ঢাকা পরিবহণ সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। ১১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় প্রথম প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটির (পিআইসি) সভা। ডিটিসিএ সম্মেলন কক্ষে ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক সাবিহা পারভিন। সভা সূত্রে জানা যায়, খসড়া ঢাকা স্ট্রাকচার প্ল্যান ও সংশোধিত কৌশলগত পরিবহণ পরিকল্পনায় ঢাকা মহানগর অঞ্চলে তিনটি রিং রোডের (ইনার, মিডল ও আউটার রিং রোড) প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আউটার রিং রোড আন্তঃআঞ্চলিক সংযোগ সড়কের মাধ্যমে ঢাকার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে যানবাহনের চাপ কমানো সম্ভব হবে। এছাড়া আউটার রিং রোড বিকেন্দ্রীকরণ ব্যবস্থাকে ত্বরান্বিতকরণ করবে এবং ঢাকার প্রান্তে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে সহায়তা করবে। পিআইসি সভায় প্রকল্প পরিচালক মুহাম্মদ রকিবুল হাসান জানান, ২২ আগস্ট এসিই কনসালটেন্স লিমিটেড, উইথ জেভি পার্টনার বিসিএল অ্যাসোসিয়েট লিমিটেডের সঙ্গে পরামর্শ সেবার জন্য ৮ কোটি ৯৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা এবং ভ্যাট ও ট্যাক্স বাবদ ২ কোটি ৭৫ লাখ ২৬ হাজার টাকাসহ ১১ কোটি ৭২ লাখ ৪১ হাজার টাকার চুক্তি হয়েছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ২৯ আগস্ট কার্যক্রম শুরু করেছে। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সব কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। এ পর্যায়ে অর্থ সহায়তার কথা বলেছে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক।

সূত্র জানায়, অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ কমাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালে এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি বাতিল করা হলেও প্রস্তাবটি পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরাও ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে এক্সপ্রেসওয়ে করার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিচ্ছেন। কারণ, বর্তমানে দ্রুতগতিতে বাড়ছে দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম। ফলে মহাসড়কটির সক্ষমতা কমেছে। মূলত অর্থনৈতিক কার্যক্রম বেড়ে যাওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর চাপ বহুগুণ বেড়ে গেছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫০ শতাংশ। আর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দেশের প্রধান ওই দুই নগরীকে যুক্ত করেছে। ওই মহাসড়কের ওপর বৈদেশিক বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ নির্ভরশীল। এসব চিন্তা করে নতুনভাবে মহাসড়কটিতে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ। এছাড়া জাপান সরকারের অর্থায়নে নির্মিত মেঘনা সেতু বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত সেতু হিসাবে পরিচিত। এ সেতুর সংস্কারসহ অন্যান্য কার্যক্রম বাস্তবায়ন, এমনকি নতুন সেতু নির্মাণেও সহায়তা দিতে চায় কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক।

শেয়ার করুন