২৯ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার, ০১:১৫:১৩ অপরাহ্ন
জ্বালানি তেল কেনার পথ খুঁজছে সরকার
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৮-২০২২
জ্বালানি তেল কেনার পথ খুঁজছে সরকার

রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনার পথ খুঁজছে সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠক এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে বৈঠকে উপস্থিত বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, তাঁরা জ্বালানি তেল আমদানি নিয়ে কোনো আলোচনা করেননি। ওষুধ রপ্তানি ও খাদ্যশস্য আমদানি নিয়ে কথা বলেছেন।

গত ১৬ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনার পথ খুঁজে বের করতে নির্দেশ দেন। এর ১০ দিনের মাথায় এই বৈঠক হলো। বৈঠকে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের আলোচ্যসূচি ছিল, আমদানির ক্ষেত্রে অর্থ পরিশোধ পদ্ধতি পর্যালোচনা। বৈঠক শেষে জানানো হয়, রাশিয়া থেকে কৃষিপণ্য ও সার আমদানিতে কোনো বাধা নেই।

তবে বৈঠকে অংশ নেওয়া জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত সেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, রাশিয়া থেকে তেল আমদানির মাত্র প্রাথমিক আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। তেল আমদানি করতে হলে অনেক জটিলতা পার করতে হবে। এ জন্য কাজ শুরু হয়েছে। তেল আমদানি করতে গিয়ে যেন দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা না আসে; সে জন্য রাশিয়া ও আমেরিকার সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আছে। এ অবস্থায় জ্বালানি তেল কিনলে কিভাবে মূল্য পরিশোধ করা হবে, তেল কিভাবে আনা হবে—এসব এখন মূল্য আলোচ্য বিষয়। রাশিয়া শুরুতে অপরিশোধিত এবং পরে পরিশোধিত তেল বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশকে। তবে আগেই জানা গেছে, রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল পরিশোধনের সক্ষমতা ইস্টার্ন রিফাইনারির নেই।

বৈঠকে উপস্থিত অন্তত তিনজন সচিব কালের কণ্ঠকে বলেন, রাশিয়া থেকে তেল আমদানির প্রাথমিক আলোচনা শুরু হয়েছে মাত্র। এই প্রক্রিয়ায় অনেক কাজ করতে হবে। রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা হবে। তারা তেলের দাম কত নেবে, কিভাবে মূল্য পরিশোধ করা যাবে—এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা জরুরি। প্রয়োজনে তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে তেল আমদানি করা হতে পারে। আবার রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বাংলাদেশে পরিশোধন করা যায় না। সে ক্ষেত্রে কী হবে, তা-ও চিন্তার বিষয় আছে।

সচিবরা বলেন, তেল আমদানি করতে হলে ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলতে হবে। নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে কিভাবে তা করা যায়, সে নিয়ে কাজ করতে হবে। তাই বিষয়গুলো ভালোভাবে বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে যেভাবেই হোক তেল আনার ব্যবস্থা করতে হবে। আপাতত যেখানে কম টাকায় তেল পাওয়া যাবে, সেখান থেকেই আনা হবে।

সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। উপস্থিত ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান (সালমান এফ রহমান), বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদসহ অন্তত ১০টি মন্ত্রণালয়ের সচিব। এ ছাড়া স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, বেক্সিমকো, একমি, এসিআই, রেনাটা, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের শীর্ষ কর্মকর্তারাও বৈঠকে ছিলেন। সেখানে রাশিয়ায় ওষুধ রপ্তানির বিষয়ও আলোচনা করা হয়।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, তেল আমদানির কৌশল খুঁজতে রাশিয়া ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মস্কোয় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত দেশের সার্বিক চিত্র রাশিয়ার কাছে তুলে ধরবে। আর ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখা হবে।

ডলারের বিকল্প মুদ্রার মাধ্যম জ্বালানি তেল আমদানি করতে প্রয়োজনে ভারতের সহায়তা নেওয়া যায় কি না, তা-ও গতকালের আলোচনায় স্থান পায়। জ্বালানিসংকটে পড়লে বাংলাদেশের অর্থনীতির কী পরিস্থিতি হতে পারে—যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তা তুলে ধরা হবে।

বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সবাইকে জানাতে চেয়েছি, রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে খাদ্য আমদানিতে কোনো বাধা নেই। অতএব ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। ’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওষুধ খাতে রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টা চলছে এবং অন্যান্য খাত থেকেও যাতে ডলার আয় বাড়ানো যায়, সে চেষ্টা করা হচ্ছে। ’ মন্ত্রী বলেন, বৈঠকে তেল নিয়ে কোনো কথা হয়নি।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ায় ওষুধ সংকট আছে। সেখানে ওষুধ রপ্তানির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তাই ওষুধ রপ্তানি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, যেখানেই কম দামে পাওয়া যাবে, সেখান থেকেই তেল আমদানি করা হবে।

শেয়ার করুন