২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, রবিবার, ০২:০০:১৬ অপরাহ্ন
মিয়ানমারে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ, উখিয়া-টেকনাফ জুড়ে আতঙ্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-১২-২০২৫
মিয়ানমারে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ, উখিয়া-টেকনাফ জুড়ে আতঙ্ক

মিয়ানমার সীমান্তের ওপার থেকে আসা ভয়াবহ বিস্ফোরণের শব্দে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত এলাকাজুড়ে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ ও আতঙ্ক। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) রাত প্রায় ১১টার দিকে ৩-৪ মিনিটের ব্যবধানে টানা কয়েক দফায় শোনা যায় এই বিকট শব্দ। স্থানীয়দের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে সংঘাতের ধারাবাহিকতায় গুলির শব্দ মাঝে মাঝে শোনা গেলেও এত তীব্র ও আকস্মিক বিস্ফোরণ সাম্প্রতিক সময়ে শোনা যায়নি।


স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শব্দের তীব্রতায় অনেকেই ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। হোয়াইক্যং, পালংখালী, রাজাপালং, ঘুমধুমসহ সীমান্তবর্তী অন্তত ১৫টি গ্রামের মানুষ এ শব্দ শুনতে পায়।


পালংখালীর রহমতের বিল এলাকার বাসিন্দা বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘হঠাৎ বজ্রপাতের মতো বিকট শব্দ হয়। প্রথমে বুঝতেই পারিনি কী ঘটছে। গোলাগুলির মতো মনে হয়নি, শব্দটা ছিল অন্যধরনের।’


কুতুপালংয়ের বাসিন্দা হৃদয় চৌধুরী জানান, ‘শব্দে মাটি কেঁপে ওঠার মতো অনুভূতি হয়েছে। মনে হয়েছিল ভূমিকম্প হয়েছে। পরিবার নিয়ে বাইরে বের হয়ে আসি।’


রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও অনুভূত হয় একই বিস্ফোরণ। রোহিঙ্গা চিত্রগ্রাহক সাহাত জিয়া হিরো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করেন, মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী উত্তর মংডু অঞ্চলে বিমান হামলা চালিয়েছে, যার শব্দ বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত ছড়িয়েছে।


রাখাইনের সংবাদমাধ্যম মংডু ডেইলি নিউজ ও আরকান আপডেটের তথ্যমতে, শনিবার রাত ১১টা ২০ মিনিট পর্যন্ত জান্তা বাহিনীর এসএসএ যুদ্ধবিমান উত্তর মংডুর কিয়াও চাউং ডিভিশন ও গান চাউং ব্যাটালিয়নে অন্তত তিন দফা গোলাবর্ষণ করে। আকাশে একটি ওয়াই-১২ বিমানও উড়তে দেখা যায় বলে তাদের খবরে উল্লেখ রয়েছে।


এ অঞ্চলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে জান্তা সেনাবাহিনী ও আরকান আর্মির মধ্যে সংঘাত চলছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে উত্তরের ২৭১ কিলোমিটার বিস্তৃত এলাকাজুড়ে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি করেছে বিদ্রোহী সংগঠনটি। জাতিসংঘের তথ্যমতে, চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত সংঘাতের কারণে কমপক্ষে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে পালিয়ে এসেছে।


বিজিবি উখিয়া ব্যাটালিয়ন (৬৪ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জসীম উদ্দিন জানান, রাত ১০টা ৩৮ মিনিট থেকে ১০টা ৫৫ মিনিটের মধ্যে শূন্যরেখা থেকে ১৩ কিলোমিটার ভেতরে মিয়ানমারের বলিবাজার এলাকায় বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। মিয়ানমার বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান তিন দফায় বোমা নিক্ষেপ করেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সীমান্ত টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে।


উল্লেখ্য, চলতি মাসের ১৩ ও ১৭ ডিসেম্বরও সীমান্ত এলাকায় অনুরূপ গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়, যার জেরে সীমান্তবাসীর উদ্বেগ বেড়েই চলেছে।


শেয়ার করুন