প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএসে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়ে গেলেও এখনো ২৫ ভাগ সিট খালি রয়েছে। গত তিন বছর ধরে প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজে অর্ধেক সিট খালি থাকত। স্বাস্থ্য খাতে পদোন্নতিসহ নানা ক্ষেত্রে হয়রানি ও বৈধ সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকার কারণে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা ডাক্তার হওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এ বিষয়টি চিকিৎসা-শিক্ষাক্ষেত্রে একটি অশনিসংকেত বলে তারা জানান।
বিগত সরকারের আমলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন বিভাগের একশ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ‘আর্থিক সুবিধার লোভে’ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণের নামে অটোমেশন পদ্ধতি চালু করে। উত্তীর্ণ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের পছন্দের মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে না পারার কারণে অনেকে বিদেশমুখী হচ্ছে। আর্থিক সামর্থ্য, নিরাপত্তা, যাতায়াত ও থাকা-খাওয়ার সুবিধা বিবেচনা করে ছাত্র-ছাত্রীরা ভর্তির জন্য পছন্দের প্রতিষ্ঠান বেছে নেন। কিন্তু অটোমেশন চালু করার পর থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
একাধিক অভিভাবক জানান, কারো সুবিধা দিনাজপুর, কুষ্টিয়া কিংবা সিলেটসহ অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজ। কিন্তু ঢাকা কিংবা অন্য বিভাগে ভর্তি করার কারণে দ্বিগুণ খরচ হয়, যা অনেকের পক্ষে বহন করা সম্ভব হয় না। এ কারণে সন্তানকে ডাক্তার বানানোর ইচ্ছা থাকলেও অটোমেশনের কারণে পছন্দের মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা সম্ভব হয় না।
স্বাস্থ্যের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, অটোমেশন একটি কারণ হতে পারে। তবে ডাক্তার হওয়ার আগ্রহ হারানোর পেছনে আরও বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রচুর লেখাপড়া ও পরিশ্রম করে এমবিবিএস পাশ করার পর চাকরি পেতে দীর্ঘসময় অপেক্ষায় থাকতে হয়। অন্য একাধিক ক্যাডার সার্ভিসে চাকরিতে যোগদান করার পর ধাপে ধাপে পদোন্নতি হচ্ছে। সঙ্গে থাকছে যানবাহনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেটা সেভাবে মিলছে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (মেডিক্যাল শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. মহিউদ্দিন মাতাববর বলেন, সরকার যদি ভর্তি নীতি পরিবর্তন করে। তবে সেই নীতিমালা অনুযায়ী ভর্তি করা হবে। সরকারের নীতিমালার বাইরে যাওয়ার কোনো এক্তিয়ার তার প্রশাসনের নেই।
বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসা শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, বিএমডিসি ও মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সেখানে নতুন করে অটোমেশন চালু করার কারণ কী? এ নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে নানা প্রশ্ন রয়েছে।
প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বিগত সরকারের উদ্দেশ্য ছিল অটোমেশন চালুর নামে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করা। দেশের মানুষের চিকিৎসা শিক্ষার বৃহত্তর স্বার্থে অটোমেশন পদ্ধতি বাতিল করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (মেডিক্যাল শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সুমন নাজমুল বলেন, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ শিক্ষার মানোন্নয়নে বিএমডিসি, অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এ কার্যক্রম শুরু হলে মেডিক্যাল শিক্ষায় কোনো ধরনের বৈষম্য ও অনিয়ম করার সুযোগ থাকবে না। চিকিৎসা শিক্ষার মানও উন্নত হবে। প্রসঙ্গত, দেশে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ৬৭টি এবং সরকারি মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা ৩৪টি।