রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার বিভিন্ন ফসলি মাঠ এখন সরিষার উজ্জ্বল হলুদ ফুলে সেজেছে। সবুজের বুকে হলুদের সমারোহে দিগন্তজুড়ে তৈরি হয়েছে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য, যা পথচারী ও প্রকৃতিপ্রেমীদের নজর কাড়ছে। শীতের শিশির ভেজা সকালে ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়ানো মাঠগুলোতে কেবল চোখে পড়ে সরিষার হলুদ ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য।
গাঢ় হলুদ ফুলে ফুলে মৌমাছির গুঞ্জন যেন প্রকৃতির সুর। বাতাসে ভাসছে সরিষা ফুলের মিষ্টি গন্ধ, যা মানুষের মনকে পুলকিত করছে। দূর থেকে তাকালে মনে হয়, কেউ যেন বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে হলুদ চাদর বিছিয়ে রেখেছে—প্রকৃতি কন্যা যেন গায়ে হলুদ বরণে সেজেছে। এমন দৃশ্য দেখে অনেকেই ছবি তোলার লোভ সামলাতে পারছেন না।
বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে দুর্গাপুর উপজেলায় ৩ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে কৃষি প্রণোদনার আওতায় ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ৫ হাজার ২০০ জন কৃষকের মাঝে উন্নত জাতের সরিষার বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে।
স্থানীয় কৃষকদের মতে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও রোগবালাই কম হওয়ায় এ বছর সরিষার ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মাড়িয়া ইউনিয়নের শাহাবাজপুর গ্রামের কৃষক হুমায়ুন বলেন, দেশীয় জাতের তুলনায় উন্নত জাতের সরিষায় ফলন বেশি হয়। গত বছরের চেয়ে এবার আবাদও ভালো হয়েছে। তিনি আশা করছেন, বাজারদর ভালো থাকলে লাভবান হবেন। তিনি দুই বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন।
আলীপুর গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম জানান, গত বছর সরিষার দাম ভালো ছিল। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় সরিষা একটি লাভজনক ফসল। চাষ পদ্ধতি সহজ এবং অল্প সময়ে ফলন পাওয়া যায়। সাধারণত কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে সরিষার বীজ বপন করা হয় বলেও জানান তিনি।
দুর্গাপুর পৌরসভার রৈপাড়া গ্রামের কৃষক রনি ইসলাম বলেন, “এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় গাছে প্রচুর ফুল এসেছে। এমন অবস্থা থাকলে ফলনও ভালো হবে বলে আশা করছি। কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত পরামর্শ পাচ্ছি, এতে আমাদের ভরসা বেড়েছে।”
উপজেলা কৃষি অফিসার সাহানা পারভীন লাবনী বলেন, সরিষার আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৫ হাজার ২০০ জন কৃষককে বীজ ও সার প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। চলতি রবি মৌসুমে কৃষকরা উন্নত জাতের বীজ ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গাছের বৃদ্ধি ও ফুল খুব ভালো হয়েছে। বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ বছর সরিষার উৎপাদন সন্তোষজনক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কৃষকদের নিয়মিত মাঠ পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় কারিগরি পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

