রাজশাহী শহরের অধিকাংশ ভবন ‘বিল্ডিং কোড’ বা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা মেনে তৈরি হয়নি। এটি নগরীর বাসিন্দাদের জন্য বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করেছে। বিশেষ করে ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে শত শত বহুতল ভবন ঘিরে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। সবশেষ দেশজুড়ে অনুভূত ভূমিকম্পের পর নগরীর ভবনগুলোর নিরাপত্তা ঝুঁকি আবার সামনে এসেছে সবার। এ নিয়ে চিন্তিত নগরের বাসিন্দারা।
বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শহরের প্রায় ৮০ শতাংশ ভবনই বিধিমালা মেনে নির্মাণ করা হয়নি। অনুমোদিত নকশার ব্যত্যয় ঘটেছে। অনেক ভবন মালিক অনুমোদিত নকশার বাইরে গিয়ে নির্মাণকাজ করেছেন। যেমন পাঁচতলার অনুমোদন নিয়ে সাততলা বা আটতলার অনুমোদন নিয়ে দশতলা করেছেন। এ ছাড়া অধিকাংশ ভবনে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই। ভবনগুলো গা ঘেঁষে তৈরি হওয়ায় জরুরি পরিস্থিতিতে উদ্ধারকাজ কঠিন হতে পারে। অনেকে ভবন নির্মাণ অনুমোদনকারী সংস্থা রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সংস্থাটি তদারকি না করায় এমনটি হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।
সবশেষ বৃহস্পতিবার বিকালে, এর আগে ২১ নভেম্বর সকালে ও ২২ নভেম্বর সকালে একবার ও সন্ধ্যায় একবার ভূকম্পন হওয়ায় এই আতঙ্ক আরও বেড়েছে। এই ভূকম্পনের পর নগরীর ভবনগুলোর নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে ভাবছেন সবাই। রাজশাহীতে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে অনেক ক্ষতিও হবে আশঙ্কা অনেকের।
জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর তথ্যমতে, রাজশাহী বিভাগে মোট বসতবাড়ি ৫১ লাখ ২৮ হাজার। গ্রামে ৪১ লাখ ৭ হাজার এবং শহরে ১০ লাখ ২০ হাজার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নকশা না মেনে ভবন করা, গুণগত মানসম্পন্ন নির্মাণ উপকরণসামগ্রী ব্যবহার না করায় বেশি ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ভূমিকম্প হলে উদ্ধার তৎপরতা চালানো ও পরিস্থিতি মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর যথাযথ প্রস্তুতি ও সুযোগ-সুবিধাও নেই তেমন। এজন্য আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে।
মানা হয়নি ‘বিল্ডিং কোড’
নগরের একাধিক বাসিন্দা বলেছেন, আরডিএর অনুমোদন প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে নিরাপত্তাহীন বহুতল ভবনের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। আবাসিক এবং বাণিজ্যিক উভয় ধরনের ভবনের ক্ষেত্রে আরডিএ নকশা অনুমোদন দিলেও অনেক ভবন ফায়ার সার্ভিসের নিরাপত্তা সনদ ছাড়াই নির্মাণ হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক বছরে মহানগর এলাকায় প্রায় ১ হাজার ৩০০ নতুন ভবনের নকশা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ১০০ ভবন সাততলা পর্যন্ত এবং বাকি ২০০ ভবন ৮ থেকে ২০ তলা পর্যন্ত।
অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নকশা অনুমোদন নেওয়া হয়েছে; এমনকি যেসব ভবনের সামনে-পেছনে প্রয়োজনীয় রাস্তা নেই, সেগুলোরও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তিগত, রাষ্ট্রীয় ও বাণিজ্যিক তিন ক্যাটাগরিতে ডেভেলপাররা কাজ করে থাকেন। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অধিকাংশ প্রকল্প পেয়েছে এবং নিয়মবহির্ভূতভাবে কাজ করেছে। যা নগরীর বাসিন্দাদের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করেছে। ভবন নির্মাণের সময় আটটি স্তরে অনুমোদন নিতে হয় উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের। এগুলো হলো- ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র, নির্মাণ অনুমোদন, নির্মাণকাজ শুরু অবহিতকরণ ও কারিগরি ব্যক্তিদের সম্মতিপত্র, ভবনের ভিত্তি স্তম্ভ পর্যন্ত কাজ সম্পর্কে কারিগরি ব্যক্তিদের প্রতিবেদন, ভবনের নির্মাণকাজ সমাপ্তি অবহিতকরণপত্র, কারিগরি ব্যক্তিদের প্রত্যয়নপত্র, ব্যবহার সনদ ও পাঁচ বছর পর ব্যবহার সনদ নবায়ন। তবে নগরীরতে গড়ে ওঠা অধিকাংশ ভবনের নকশা অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনুমোদনের পরের ধাপগুলো অনুসরণ করা হয়নি।

