জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক মার্কিন আইনজীবী, যার নামও মার্ক জাকারবার্গ। তবে তিনি ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক এলিয়ট জাকারবার্গ নন। নামের এই দৈব মিলের কারণে ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের এই আইনজীবীকে বারবার হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই আইনজীবী দাবি করেছেন যে, ফেসবুক বারবার তার অ্যাকাউন্ট অকার্যকর করে দিয়েছে। ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার অভিযোগ ছিল যে, তিনি একজন জনপ্রিয় তারকার নামে 'ভুয়া অ্যাকাউন্ট' খুলেছেন।
এই আইনজীবী বিবিসিকে জানিয়েছেন, গত আট বছরে পাঁচবার তার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে তিনি হাজার হাজার ডলারের ব্যবসা হারিয়েছেন। তিনি মেটার বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন। তিনি বলেন, এই আট বছরে তিনি ফেসবুককে অন্তত ১১ হাজার ডলার বিজ্ঞাপন বাবদ দিয়েছেন, তা সত্ত্বেও তার অ্যাকাউন্ট বারবার বন্ধ করা হয়েছে।
আইনজীবী জাকারবার্গ স্থানীয় টিভি চ্যানেল ডব্লিউটিএইচআরকে বলেন, 'শুনতে হাস্যকর মনে হলেও এটা কোনো মজার ঘটনা নয়, বিশেষ করে যখন তারা আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে।' তিনি বলেন, 'এটা অনেকটা এমন যে, আপনি টাকা খরচ করে একটি বিলবোর্ড কিনলেন, কিন্তু টাকা নেওয়ার পর মালিক এসে সেটি একটি বিশাল কম্বল দিয়ে ঢেকে দিল। অর্থাৎ, আপনি টাকা খরচ করেও আপনার চাহিদা অনুযায়ী সুবিধা পেলেন না।'
এসব ঘটনার পর মেটা জাকারবার্গের অ্যাকাউন্ট পুনরায় সক্রিয় করে এবং জানায় যে, ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের 'ভুল' আর না হয়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। মেটা এক বিবৃতিতে জানায়, 'এ বিষয়টি নিয়ে মি. (মার্ক এস) জাকারবার্গ যে ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন, তার জন্য আমরা তাকে সাধুবাদ জানাই। ভবিষ্যতে যাতে এর পুনরাবৃত্তি না হয়, তা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি।'
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, এই জাকারবার্গ ৩৮ বছর ধরে আইন পেশায় জড়িত। তিনি এই পেশায় আসার কয়েক বছর পর ফেসবুক এবং এর প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। সর্বশেষ গত মে মাসে তার অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করা হয়েছিল এবং মামলা দায়েরের পর তা আবার চালু করা হয়।
আইনজীবী জাকারবার্গ গণমাধ্যমকে তার ভোগান্তির কথা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ফটো আইডি, ক্রেডিট কার্ড, জন্ম সনদ, এমনকি অসংখ্য সেলফি দিয়েও তিনি মেটাকে তার স্বতন্ত্র পরিচয় প্রমাণ করতে পারেননি। প্ল্যাটফর্মটি তাকে 'ফেইক জাকারবার্গ' হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তিনি বলেন, 'আমার নাম মার্ক স্টিভেন জাকারবার্গ। তার নাম মার্ক এলিয়ট জাকারবার্গ।' কিন্তু সামাজিক মাধ্যমটি তাতেও কর্ণপাত করেনি।
এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাগুলো নিয়ে স্টিভেন একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন, যার নাম 'আই অ্যাম মার্ক জাকারবার্গ'। সেখানে তিনি বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি মার্ক এলিয়ট জাকারবার্গের সঙ্গে নামের মিলের কারণে যেসব দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন, তার বিবরণ দিয়েছেন।
একবার ওয়াশিংটনের স্থানীয় প্রশাসন ফেসবুকের জাকারবার্গ মনে করে ভুলক্রমে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এছাড়া, 'নেক্সটডোর' অ্যাপ থেকে 'ভুয়া নাম' ব্যবহারের অভিযোগে তাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এই 'স্টিভ' জাকারবার্গ আরও জানান যে, প্রতিদিন গড়ে ১০০ জন মানুষ তাকে ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মনে করে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠায়। তার অ্যাকাউন্ট প্রতিদিন একাধিকবার হ্যাক হয় এবং এ কারণে তাকে দিনে তিন থেকে চারবার পাসওয়ার্ড বদলাতে হয়। অনেক সময় তিনি রাতে ফোন বন্ধ করে রাখেন, যাতে মৃত্যুর হুমকি, কারিগরি সহযোগিতার অনুরোধ এবং অন্যান্য অদ্ভুত বার্তা থেকে বাঁচতে পারেন।
তবে এত কিছু সত্ত্বেও আইনজীবী জাকারবার্গের মেটার প্রতি কোনো রাগ নেই। তিনি বলেন, 'যদি' (মার্ক এলিয়ট) জাকারবার্গ কখনো ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যে এসে আর্থিক সংকটে পড়েন, তবে আমাদের নামের মিলের কারণে আমি বিনা পারিশ্রমিকে তার পক্ষে যেকোনো আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে রাজি আছি।'