২৮ অগাস্ট ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০১:১০:১৯ পূর্বাহ্ন
মুনিয়া-আফ্রিদির ফোনালাপ ফাঁস—‘আমি রাত্রে আসতেছি’
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৮-২০২৫
মুনিয়া-আফ্রিদির ফোনালাপ ফাঁস—‘আমি রাত্রে আসতেছি’

হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদির সঙ্গে চার বছর আগে গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় উদ্ধার হওয়া মোশারাত জাহান মুনিয়ার ফাঁস হওয়া কয়েকটি ফোনালাপ নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।


সম্প্রতি ‘ক্রাইম এডিশন’-এর একটি ভিডিও প্রতিবেদনে এ ফোনালাপগুলো ফাঁস করা হয়। ওই প্রতিবেদনে ইউটিউবার ও ব্লগারদের আওয়ামী লীগের পক্ষে জোর করে কাজ করানো থেকে শুরু করে আফ্রিদির নানা কুকীর্তির তথ্য উঠে এসেছে। তবে এসবের ভিড়েও সবচেয়ে আলোচিত হয়ে উঠেছে মুনিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক।


ফাঁস হওয়া ফোনালাপ ও ভুক্তভোগীদের সাক্ষ্য প্রমাণ করছে, মুনিয়ার সঙ্গে আফ্রিদির ঘনিষ্ঠতা কেবল ব্যক্তিগত সম্পর্কে সীমাবদ্ধ ছিল না। এটি মুনিয়ার মৃত্যুর রহস্যকেও নতুন দিকে ঘুরিয়ে দিচ্ছে।


প্রতিবেদনে বলা হয়, আফ্রিদির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকজন নারীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করার অভিযোগও উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী জানান, দীর্ঘদিন সম্পর্কে থাকার পর আফ্রিদি হঠাৎ করেই তাকে ছুড়ে ফেলে দেয়।


পরে তাকে ডিবি অফিসে ডেকে গায়েব করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। ফলে সংসার করার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় তার।

ওই নারী আরো বলেন—‘আমি জানতে পারি, বিভিন্ন মেয়ের সঙ্গে তার (আফ্রিদি) সম্পর্ক আছে। মুনিয়া নামের একটা মেয়ে আছে, তার সঙ্গেও আফ্রিদির সম্পর্ক।


এগুলো জেনে ওর সঙ্গে আমি একটু রাগারাগি করি। এটা স্বাভাবিক, আমার একটু খারাপ লাগতেই পারে। আমি যেহেতু ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। তো, ওকে আমি বলার পরে খুব বাজেভাবে রিঅ্যাক্ট নেয়। এক সময় এ রকমও বলে, মুনিয়ার যে রকম অবস্থা হয়েছে, আমারও ঠিক সে রকম অবস্থা হবে।

মানে, ইনডিরেক্টলি ও আমাকে হত্যার হুমকিই দেয়।’

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ওই নারীর অভিযোগের সূত্র ধরে কিছু ফোন রেকর্ড হাতে আসে। যেখানে মুনিয়ার বাসায় আফ্রিদির যাতায়াত এবং ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ মেলে। মুনিয়ার সঙ্গে আফ্রিদির সম্পর্ক এবং আরেক প্রেমিকার সাক্ষ্য মিলিয়ে দেখলে হত্যাকাণ্ডের রহস্য ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে।


একটা ফোন কলে মুনিয়া, অন্য এক নারী ও তৌহিদ আফ্রিদির কথা শোনা যায়। ওই নারী বলছেন, তুমি যেটা বললা, সেটা রিপিট করো। মুনিয়া বলছেন, রসকষ থাকবে না। তৌহিদ আফ্রিদি বলছেন, ওর রসকষ থাকবে না বিয়ের পর। বিয়ের আগেই রস... বিয়ের পরের। মুনিয়াকে বলতে শোনা যায়, উনি কিভাবে বলল, উনাকে আমি কি, তোমার ওপরে কিচ্ছু...


আরেকটি ফোন কলে মুনিয়া বলছেন, হ্যাঁ! কোথায় তুমি, কই, কী করো। তৌহিদ আফ্রিদি বলেন, এই যে, আমি এই যে, আমি রাত্রে বেলার মধ্যে আসতেছি। মুনিয়া বলেন, ও, কোথায় আসবা? আফ্রিদি বলেন, তোমাকে পিক করব রাতে। মুনিয়া বলেন, আচ্ছা, ফোন দিও।


আরেকটি ফোনকলে শোনা যায়, মুনিয়া বলছেন, হ্যালো, হ্যাঁ, কোথায় তুমি? আফ্রিদি বলেন, অফিসে, অফিসে কাজে। মুনিয়া বলেন, অফিসে কি গাড়ি চালাও, হা হা হা! আফ্রিদি বলেন, না না অফিসে। মুনিয়া বলেন, আচ্ছা, এখন কী করব বলো একটু? আফ্রিদি বলেন, কী করবা? মানে বুঝি নাই। মুনিয়া বলেন, মানে, আজকে দেখা করবা না আমার সঙ্গে একটু? আফ্রিদি বলেন, রাতে রাতে। 


আরেকটি ফোন কলে শোনা যায়, আফ্রিদি বলেন, না আমি মানে, মাত্র ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে বের হচ্ছি। আমার কথা হচ্ছে, আমি আসতে পারব, কোনো সমস্যা নেই। আমি একটু একটু ড্রাংক। তবে, চলবে? মুনিয়া বলেন, না, সমস্যা কী? ড্রাংক! আফ্রিদি বলেন, আচ্ছা। মুনিয়া বলেন, ওই কাবাইকাবা, আফ্রিদি বলেন, হ্যাঁ! বুঝি নাই। মুনিয়া বলেন, কাইকাবা গাধা কোথাকার! আফ্রিদি বলেন, গাধা কেন? মুনিয়া বলেন, এত ন্যাচারালভাবে কথা বলতে পারতা? আফ্রিদি বলেন, হ্যাঁ! আমি ন্যাচারালি কথা বলি। আর হ্যাঁ! এক পারসেন্ট। এটা তোমাকে জানায়া রাখলাম। আমি রাতে আসতেছি। এ সময় মুনিয়া বলেন, এত দুষ্টু ক্যান তুমি?


তৌহিদ আফ্রিদির বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত দুটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে যাত্রাবাড়ী থানার মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে—জুলাই আন্দোলনে আসাদুল হক বাবু নামের এক বিক্ষোভকারীকে হত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে তিনি জড়িত। আরেকটি মামলা হয়েছে বাড্ডা থানায়। এজাহারে উল্লেখ করা হয়—২০২৪ সালের ২০ জুলাই মধ্য বাড্ডা ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধ অস্ত্র দিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালায় আফ্রিদি।


শেয়ার করুন