২৫ জুন ২০২৫, বুধবার, ১১:১৯:১৩ অপরাহ্ন
যুদ্ধবিরতিতে স্বীকৃতি মেলেনি খামেনির, ইরান এখন কী করবে
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৬-২০২৫
যুদ্ধবিরতিতে স্বীকৃতি মেলেনি খামেনির, ইরান এখন কী করবে

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির বিষয়টি মঙ্গলবার দেশটির প্রেসিডেন্টসহ সিনিয়র কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছিলেন। কিন্তু তার পরও দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির দিক থেকে বিষয়টি স্বীকার করে প্রকাশ্যে কোনো বক্তব্য আসেনি। দেশটির কোনো বিষয়ে তার বক্তব্যই শেষ কথা। সে কারণে দেশটির ভেতরে ও বাইরে থেকে এখন নজর দেওয়া হচ্ছে যে তিনি এ বিষয়ে কখন কথা বলেন।


খামেনি তেহরানে তার নিয়মিত বাসবভনে অবস্থান না করে নিরাপদ বাংকারে অবস্থান করছেন—এমন খবর আগেই এসেছে, যদিও তা ইরান নিশ্চিত করেনি। সর্বশেষ গত ১৮ জুন তার আগে থেকে রেকর্ড করা একটি ভিডিও বার্তা টেলিভিশনে প্রচার হয়েছে। ওই ভাষণে তিনি ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ করতে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে আহ্বান জানিয়েছিলেন, তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।


ইরান এখন কী করবে

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে ইরানে হামলার যে প্রাথমিক পর্যালোচনা প্রতিবেদন এসেছে, সেটি সত্যি হলে ইরান এরপর কী করতে যাচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন ও উদ্বেগ তৈরি করবে।


ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বিলম্বিত করার পরিবর্তে যতটা ক্ষতি হয়েছে সেই ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনার মেরামত ও হত্যার শিকার হওয়া বিজ্ঞানীদের জায়গায় নতুন বিজ্ঞানীদের নিয়ে আসার পর এটা আরো গতি পাবে?

হামলায় ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেতে সময় লাগবে। একই সঙ্গে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্ত বলে ইসরায়েল যে দাবি করছিল তা নিয়েও বিতর্ক চলতে থাকবে।


ইরানের কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে বলেছেন, তাদের পরমাণু কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের আর কখনোই পরমাণু কর্মসূচি থাকবে না।


ইরানের নেতারা জানেন, এ ধরনের অস্ত্র থাকাটাই হবে ভবিষ্যৎ হামলা থেকে তাদের সুরক্ষা। ইরানের পার্লামেন্ট বুধবার আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার পরিকল্পনাসংক্রান্ত একটি বিল অনুমোদন করেছে। এই প্রস্তাবের বিপক্ষে কোনো প্রতিনিধি ভোট দেননি। এবং একই সঙ্গে ইরানের ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ করা যে ৪০০ কেজি ইউরেনিয়াম, সেগুলোর কী হলো তা এখনো কেউ জানে না।


যুদ্ধবিরতি বহাল থাকলে আন্তর্জাতিক কূটনীতিকরা নতুন চুক্তির জন্য আলোচনা পুনরায় শুরুর চেষ্টা করবে।


ইরান কিছুটা দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও এমন আলোচনাও কঠিন হবে। যুক্তরাষ্ট্রের কথা হলো, ইরানের মাটিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কোনো কর্মসূচিই থাকতে পারবে না। এটি ইরান সব সময়ই প্রত্যাখ্যান করে আসছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ফক্স নিউজকে বলেছেন, ‘এখন সময় হলো ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসা এবং একটি সমন্বিত শান্তিচুক্তি পাওয়া।’


অন্যদিকে আইএইএর প্রধান রাফায়েল গ্রসি জানান, তার পরিদর্শকদের ইরানে ফেরত যাওয়া ও দেশটির সঙ্গে কাজ শুরু করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, এখন তার অগ্রাধিকার হলো ইরানে ফেরত যাওয়া। তবে তিনি এ-ও বলেন, বিষয়টি খুব একটা সহজ হবে না।


ইরানের পরমাণু কর্মসূচি শুধু কয়েক মাসের জন্য পিছিয়েছে—এমন খবরের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই দৃষ্টিভঙ্গী আমি পছন্দ করি না, এটি দর্শকের চোখে দেখা। প্রযুক্তি সেখানে আছে। কারিগরি সক্ষমতাও সেখানে আছে। এটা কেউ অস্বীকার করতে পারে না।’


গ্রসি আরো বলেন, ‘কূটনৈতিক সমাধানের একটি সুযোগ আছে। আমাদের সেই সুযোগ নষ্ট করা ঠিক হবে না। এটা দুই নাকি তিন মাসের জন্য, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের দরকার হলো সমাধান।’


এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার কারণে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি কতটা পিছিয়েছে বলে মনে করেনি তিনি। জবাবে তিনি বলেন, তিনি মনে করেন, ‘মূলত কয়েক দশক। আমি মনে করি, তারা যদি এটি পেত তাহলে তারা নরকে যেত...সর্বশেষ তারা সমৃদ্ধকরণ করতে চেয়েছিল।’


ট্রাম্প আরো বলেন, ‘ওই আঘাত যুদ্ধের সমাপ্তি টেনেছে।’


এখানে বলে রাখা দরকার যে পেন্টাগনের একটি গোয়েন্দা পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা দেশটির পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস হয়নি এবং সম্ভবত এটি ‘কয়েক মাস পিছিয়েছে’।


ট্রাম্প ইসরায়েল ও ইরানের সংঘাতের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে—‘দুটি বাচ্চা একই স্কুল প্রাঙ্গণে।’


শেয়ার করুন