রাতের খাবার শুধু উদর ভরাই নয়। দেহের সামগ্রিক সুস্থতায় এর বড় প্রভাব রয়েছে। তবে কিছু খাবারে শরীরে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।
যেমন— হজমে সমস্যা, ইনসুলিন মাত্রার অস্থিরতা, হৃদস্পন্দন বাড়া বা অতিরিক্ত অ্যাসিডিটি। এসব সমস্যা শুধু রাতে নয়, প্রভাব ফেলে পরদিনের কর্মক্ষমতাতেও।
কার্বোনেইটেড পানীয়
সোডা ও ফিজি পানীয় থাকা উচ্চমাত্রার চিনি ও ক্যাফেইন শরীরের স্বাভাবিক কার্যপ্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটায়। আর গ্যাস, বুকজ্বালা, অ্যাসিড তৈরির প্রবণতা বাড়ায়। এ ধরনের পানীয়তে ক্যাফিন থাকে। যে কারণে আরামের ঘুম হয়ে যেতে পারে হারাম।
অতিরিক্ত ঝাল খাবার
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক পুষ্টিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘রিয়েল ফুড নিউট্রিশন’য়ের পুষ্টিবিদ কিম্বার্লি জাকোস্কি একই প্রতিবেদনে বলেন, ঝাল খাবার যেমন- ‘বাফেলো উইংস’ বা ‘স্পাইসি স্টার ফ্রাই’ হজমে সমস্যা জন্য দায়ী। যা অ্যাসিডিটি, গ্যাস্ট্রিক এবং এমনকি অন্ত্রের প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। এসব খাবার রাতের ঘুমে বিঘ্ন ঘটায়।
চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার
পূর্ণ ননি যুক্ত পনির-সহ ‘ফুল ফ্যাট’ দুগ্ধজাত খাবার হজমে সময় নেয় আর অতিরিক্ত চর্বি সরবরাহ করে। যা ওজন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
এই তথ্য জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পিটসবার্গ নিবাসী রন্ধনবিষয়ক পুষ্টিবিদ লরা.এম.আলি বলেন, এই ধরনের খাবার ঘুমিয়ে পড়তে সমস্যা করে, ঘুমের মান খারাপ করে। বিশ্রাম হয় না ঠিক মতো। এমনকি রাতে ঘুম ভেঙেও যেতে পারে।
চিজ বার্গার
পুষ্টিবিদ লরা.এম.আলি বলেন, চর্বি ও প্রক্রিয়াজাত উপাদানে ঠাসা এই খাবার শরীরে ‘ইনফ্লামেইশন’ বা প্রদাহ বাড়াতে পারে। আর কোলেস্টেরল এবং হৃদসংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
আর তৈলাক্ত মাখন দেওয়া এই বার্গার খেলে গভীর ঘুমের সমস্যা করে। আর এটা হওয়ার কারণ হল চর্বি ধীরে হজম হয় ঘুমের সময়।
ফ্রেঞ্চ ফ্রাই
স্যাচুরেইটেড চর্বিতে পরিপূর্ণ ফ্রেঞ্চ ফ্রাই রক্তচাপ বাড়ায় এবং রক্তনালীতে চর্বি জমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি করে।
মরিস বলেন, এই ধরনের খাবার অবশ্যই ঘুমের ওপর বাজে প্রভাব ফেলে। এছাড়া দেহে যোগ করে অতিরিক্ত ক্যালরি এবং লবণ।
চিপস
টেক্সাস’য়ের ‘লিলি হেল্থ’য়ে প্রতিষ্ঠাতা পুষ্টিবিদ ড. আলি চ্যাপল বলেন, চিপসে সাধারণত উচ্চমাত্রায় স্টার্চ থাকে যা খারাপ চর্বি। যা রক্তের শর্করার মাত্রা বাড়ায় ফলে ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।
এছাড়া চিপসে থাকা ট্রান্স ফ্যাট শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এটি কেবলমাত্র হৃদরোগের ঝুঁকিই বাড়ায় না, বরং হরমোন ভারসাম্যও নষ্ট করে।
স্টেক বা গরুর মাংস
রাতে উচ্চ প্রোটিন ও ফ্যাটযুক্ত খাবার হজমে সময় নেয়। আর দীর্ঘমেয়াদে সেটা লিভার বা যকৃতি ও কিডনি বা বৃক্কের ওপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে।
উচ্চ প্রোটিন যুক্ত খাবার যেমন- স্টেক খেলে হজম করার জন্য দেহকে দ্বিগুন শক্তিতে কাজ করতে হয়। আর ভারী খাবার হিসেবে পেট ফুলে থাকার অনুভূতি দেয়। যে কারণে বাজে প্রভাব পড়ে ঘুমের ওপর”- ব্যাখ্যা করেন, ‘মাইন্ডফুয়েল পারফর্মেন্স’য়ের কর্ণধার ও মার্কিন পুষ্টিবিদ ড্রু রোজালেস।
টমেটো ও টক ফল
টমেটোতে থাকা অ্যাসিডিক উপাদান শরীরে অ্যাসিড রিফ্লাক্স বাড়ায় ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাকে তীব্র করে তোলে। একই অবস্থা ঘটায় সিট্রাস বা টকধর্মী ফল।
রোজালেস ব্যাখ্যা করেন, রিফ্লাক্স এমন একটি অবস্থা, যখন পাকস্থলীর অ্যাসিড বা খাবার বিপরীত পথে উঠে গিয়ে খাদ্যনালীতে চলে আসে। এর ফলে শারীরিক অস্বস্তি থেকে ঘুমের সমস্যা হয়।
পেস্ট্রি, কেক, বিস্কুট
এই ধরনের খাবারে থাকা অতিরিক্ত চিনি ও প্রক্রিয়াজাত উপাদান রক্তে গ্লুকোজ বাড়িয়ে দেয়, যা ইনসুলিনের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং টাইপ-টু ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
রোজালেসের ভাষায়, চিনির পাশাপাশি চকলেট ব্যবহার করলে এই ধরনের খাবারে ক্যাফিনও থাকতে পারে। যা মস্তিষ্কের ঘুম নিয়ন্ত্রক ‘রিসিপ্টর’গুলোতে বাধা তৈরি করে। ফলে দেখা দেয় নিদ্রাহীনতা।