০১ মে ২০২৪, বুধবার, ০৬:৫৩:২০ পূর্বাহ্ন
পদ্মা সেতুতে রেলের দ্বার খুললেন প্রধানমন্ত্রী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-১০-২০২৩
পদ্মা সেতুতে রেলের দ্বার খুললেন প্রধানমন্ত্রী

পদ্মা সেতুতে বাসের পরে এবার খুলল রেল চলাচলের পথ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের স্বপ্ন পূরণ হল। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গতিতে ঘণ্টায় প্রায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন ছুটবে ৮২ কিলোমিটারের এ পথে। 


আজ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সকাল ১০টা ৫৮ মিনিটে মাওয়া পৌঁছান। সেখানে সুধী সমাবেশে অংশ নেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য শেষে ১২ টা ২৩ মিনিটে ডিজিটাল সুইচ অন করে মাওয়া রেলওয়ে স্টেশন প্রান্ত থেকে বহুল কাঙ্ক্ষিত এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। 


উদ্বোধনের আগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত প্রায় ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার ৮৭৩ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ করেছে। ২৮০ কিলোমিটার মিটারগেজ রেলপথকে ডুয়ালগেজে রূপান্তর করা হয়েছে এবং ১ হাজার ৩৯১ কিলোমিটার লাইন পুনর্বাসন/পুনঃনির্মাণ করা হয়। এই সময়ে আমরা ১ হাজার ৩৭টি নতুন রেলসেতু নির্মাণ ও ৭৯৪টি রেলসেতু পুনর্বাসন/পুনঃনির্মাণ করেছি এবং ১৪৬টি নতুন স্টেশন ভবন নির্মাণ ও ২৩৭টি স্টেশন ভবন পুনঃনির্মাণ করি ।


উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘স্বপ্নের সেতুর আজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। রেলওয়েকে প্রধানমন্ত্রী আধুনিক, পরিবেশ ও কৃষকবান্ধব হিসেবে যে পরামর্শে দিয়েছেন সেই হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে।’ 


মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মিটার গেজ ও ব্রডগেজকে একীভূত করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। ডাবল লাইনে রূপান্তর করার জন্য প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। পদ্মা সেতু ও যমুনা সেতুর রেল প্রকল্পের কারণে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল একই সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। ৯ নভেম্বর খুলনা-মোংলা উদ্বোধন করতে পারব। ১২ নভেম্বর কক্সবাজার-দোহাজারী উদ্বোধন করা হবে।’ 


রেলপথ মন্ত্রণালয় সচিব মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা থেকে যশোর-খুলনা ও বেনাপোল রুটে প্রাথমিকভাবে ৮ জোড়া ট্রেন চলবে। এসব ট্রেনের যাত্রী ধারণ ক্ষমতা হবে ১৪ হাজার ৫০০। এর মাধ্যমে ২৬৮ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করা সম্ভব হবে।’ 


রেল সচিব বলেন, এ পথে পণ্যবাহী ৩ জোড়া ওয়াগন চালানো হবে। আর এ মালামাল পরিবহন করে ১০৫ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হবে। 


রেল সচিব আরও বলেন, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা থেকে যশোরের দূরত্ব কমবে ১৮৪ কিলোমিটার। আর খুলনার দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার। এ রেলপথে ১৪টি রেলস্টেশন নতুন নির্মাণ করা হয়েছে। 


২৩ কিলোমিটার এলিভেটেড রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে এ প্রকল্পের মাধ্যমে। যার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের রেলপথ নতুন যুগের সূচনা হল বলে মন্তব্য করেন রেল সচিব হুমায়ুন। 


বাংলাদেশ রেলওয়ের ক্রমবর্ধমান রাজস্ব আয়ের চিত্র তুলে ধরেন রেলপথ সচিব। তিনি বলেন, ২০২০-২১ সালে যেখানে বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজস্ব আয় হয় ১ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা, সেখানে ২১-২২ সালে ১৪৬৬ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৭৮৩ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকা রাজস্ব আয় করছে। রেলওয়ে ক্রমান্বয়ে যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের মাধ্যমে রাজস্ব আয় বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে। 


প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত প্রায় ১৬৯ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলপথ নির্মাণ করছে রেলওয়ে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিলোমিটার রেলপথ চালু হচ্ছে। 


যদিও যশোর পর্যন্ত পুরো প্রকল্প উদ্বোধন হবে ২০২৪ সালের জুনে। এ লক্ষ্য ঠিক করে এগোচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ সরকার। 


এ প্রকল্পের মাধ্যমে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হবে ঢাকা-যশোর পর্যন্ত পদ্মা সেতু রেল লিংক রুটটি। এ রুট দিয়ে বাংলাদেশের রেলপথ ভারতের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে। 


মাওয়া প্রান্তে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘আমার জন্য এটা অনেক খুশির যে আমি এই উদ্বোধনে অংশ নিয়েছি। চায়না সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানায়। একই সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও চীনের কর্মকর্তা যারা কাজ করেছেন তাদেরকে শুভেচ্ছায় জানাই।’ 


ইয়াও ওয়েন বলেন, এই রেলপথ চালু হবে দেশের আর্থ সামাজিক পরিবর্তন হবে। বাংলাদেশ ও চায়নার সম্পর্কে সব সময় বাণিজ্যিক ভাবে ভালো থাকবে। বাংলাদেশের বড় মেগা প্রকল্পে চায়নার অর্থায়ন রয়েছে। চায়নারা বাংলাদেশের বিশ্বস্ত উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। 


উদ্বোধনের পরে প্রধানমন্ত্রী মাওয়া প্রান্ত থেকে ট্রেনে চড়ে ভাঙ্গা স্টেশনে যাবেন। সেখানে থেকে ভাঙ্গায় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য প্রদান করবেন। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী উদ্বোধনী ট্রেনটিও সাজানো হয়েছে রং-বেরঙের ফেস্টুন ও ফুলে। 


২০১৬ সালের ১ জানুয়ারিতে শুরু হওয়া এ প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। ঢাকা-ভাঙ্গা অংশ আজ উদ্বোধন হলেও যশোর পর্যন্ত সম্পূর্ণ পথ চালু হবে ২০২৪ সালের ৩০ জুনে। 


রেল কর্মকর্তারা বলছেন, শুরুতে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে তিনটি স্টেশন-মাওয়া, পদ্মা (জাজিরা) ও শিবচরে ট্রেন থামার ব্যবস্থা থাকছে। 

 

এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর পরীক্ষামূলক ট্রেন পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চালানো হয়। পরের দিন চালানো হয় মালবাহী ট্রেন। এরই মধ্যে ১২০ কিলোমিটার গতিতেও এ রুটে ট্রেন চালানো হয়েছে। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি।


শেয়ার করুন