২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০৮:৫২:৫৬ অপরাহ্ন
শুরুতেই কোড জটিলতা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-১০-২০২৩
শুরুতেই কোড জটিলতা

শুরুতেই কোড জটিলতার ধাক্কা লেগেছে বিমানবন্দরে দেশের সর্ববৃহৎ পথচারী আন্ডারপাস নির্মাণ প্রকল্পে। বিভিন্ন অর্থনৈতিক কোডে ত্রুটি থাকায় অর্থছাড়ে বিলম্ব হচ্ছে। কারণ, আইবাস প্লাসপ্লাসে অন্তর্ভুক্ত কোডের সঙ্গে অনুমোদিত কোডের সমন্বয় নেই। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন, এটির বাস্তবায়ন দ্রুত করতে হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৭ ধরনের কোড সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত বড় প্রকল্পে কোড ভুল থাকাটা ঠিক নয়। ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পথচারী আন্ডারপাস নির্মাণ’ প্রকল্পের পিআইসি (প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটি) সভা। সেখানে এ বিষয়ে বিস্তারিত উঠে আসে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।


ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তফা কে. মুজেরী বলেন, এটা অবশ্যই গাফিলতি। এ কারণে প্রকল্প শুরু করতে যদি দেরি হয়, তাহলে ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে। কাদের জন্য এসব কোডে ত্রুটি হয়েছে, সেটি খতিয়ে দেখা দরকার। এত বড় একটি প্রকল্পে এ ধরনের ত্রুটি কাম্য নয়। এজন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।


এ প্রসঙ্গে কথা হয় পিআইসি সভার সভাপতি, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) সৈয়দ মঈনুল হাসানের সঙ্গে। এ সময় এতবড় ও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে কোড ভুলের বিষয়ে জানতে চাইলে রোববার তিনি যুগান্তরকে বলেন, মানুষের ভুলত্রুটি হতেই পারে। আমরা সরকারি সব নিয়মকানুন মেনেই সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছি। এটি কোনো বড় সমস্যা নয়। বর্তমানে অর্থছাড়ে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সুস্পষ্ট করে কোনো কথা বলেননি। শুধু বলেন, এসব তথ্য আপনি জানলেন কীভাবে?


সূত্র জানায়, আধুনিক এই আন্ডারপাস নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৮৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা। সরকারি তহবিল থেকে এই অর্থের জোগান দেওয়া হবে। চলতি অর্থবছর প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। ২০ জুন এ প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। আন্ডারপাসটিতে নয়টি প্রবেশ ও বহির্গমন পথ থাকবে। এগুলো হলো: হজ ক্যাম্প, আশকোনা, বিমানবন্দর রেলওয়ে (বিআরটি) স্টেশন, বিমানবন্দর টার্মিনাল-১, ২ ও ৩, বিমানবন্দর উত্তর গেট, দক্ষিণ গেট এবং এমআরটি স্টেশন। এটি ব্যবহার করে হজ ক্যাম্প থেকে সরাসরি বিমানবন্দরের টার্মিনালে যাওয়া যাবে। আবার বিমানবন্দর টার্মিনাল থেকে সরাসরি এমআরটি (মেট্রোরেল) স্টেশন, বিমানবন্দর রেল স্টেশন এবং বিআরটি স্টেশনে যাওয়া-আসা করা যাবে। এটি হবে শতভাগ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। থাকবে আটটি লিফট, ২৮টি এসকেলেটর এবং ২৫টি ট্রাভেলেটর। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ১০৭০ মিটার দৈর্ঘ্যরে আন্ডারপাসটি তৈরি হলে গাজীপুর হয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত বিমানবন্দর সড়কে যানজট ও দুর্ঘটনা কমবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।


পিআইসি সভা সূত্র জানায়, প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় দুটি নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেকের চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। একটি হলো সংশোধন এবং অন্যটি প্রকল্প দ্রুততার সঙ্গে সমাপ্তকরণ। এ পরিপ্রেক্ষিতে পুনর্গঠিত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু অনুমোদনের পর কিছু ইকোনমিক কোডে ত্রুটি ধরা পরে। এসব কোড সংশোধনের জন্যই মূলত ‘পিআইসি’ সভাটি আহ্বান করা হয়েছিল। সভায় বলা হয়, ১ জুলাই ২০২৩ থেকে প্রকল্পের মেয়াদ শুরু হয়েছে। ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে এটি সমাপ্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। সে বিবেচনায় প্রকল্পের সব প্রক্রিয়া দ্রুততার সঙ্গে সমাপ্ত করা আবশ্যক। এটি দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে হলে নিয়মিত দ্রুত অর্থছাড় প্রয়োজন। এই অর্থছাড় করতে অর্থনৈতিক কোডগুলো সংশোধন দরকার। যেসব কোডে ত্রুটি ধরা পড়েছে, সেগুলো হলো-ফাউন্ডেশনের কাজ (পাইল), উলম্ব পরিবহণ (লিফট, এসকেলেটর ইত্যাদি), চলমান পথ (ট্রাভেলেটর), এইচভিএসসি সিস্টেম (প্রাকৃতিক আলো বাতাসের নির্গমন সুবিধাসহ), ইলেকট্রিফিকেশন, অগ্নিকাণ্ড নির্গমন ব্যবস্থা এবং বাগি গাড়ির জন্য কোড।


এ প্রসঙ্গে কথা হয় পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সাবেক সদস্য ও সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন আল রশীদের সঙ্গে। তিনি রোববার যুগান্তরকে বলেন, পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষে এভাবে কোডে ভুল আছে কি না, সেটি খুঁজে বের করা সম্ভব নয়। কেননা সেই জনবলও নেই, আবার সেটি পরিকল্পনা কমিশনের কাজও নয়। এটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা নিজেদের স্বার্থেই ঠিকমতো দেওয়ার কথা। কেননা আইবাস প্লাসপ্লাস শুধু সংখ্যা চেনে। সেজন্য কিছু বিষয়ে কোড সেট করাই আছে। সেই সংখ্যায় যদি ভুল থাকে, তাহলে প্রকল্পের কোনো কাজই করা যাবে না। বাস্তবায়ন পিছিয়ে যাবে। এত বড় প্রকল্পের ডিপিপিতে কেন এ ধরনে ভুল হয়েছে, সেটি দেখা দরকার। এক্ষেত্রে যারা ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) তৈরির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাদেরই দায়টা বেশি।


সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ প্রায় ১৪ হাজার ৭৭৭ জন পথচারী ও যাত্রী একটিমাত্র ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে বিমানবন্দরের সামনের মহাসড়ক পারাপার হন, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এ এলাকায় নতুন রেলওয়ে ট্র্যাক সম্প্রসারণের কাজ চলমান। শীঘ্রই এর সঙ্গে যুক্ত হবে বিআরটি বাস সুবিধা। এছাড়া এমআরটি-১-এর বাস্তবায়ন হলে এ এলাকায় যাত্রীচাপ বাড়বে। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শেষ হলে প্রতিদিন প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার যাত্রী এ এলাকায় চলাচল করবে। এর একটা বড় অংশ আন্ডারপাসের সুবিধা নেবে।


শেয়ার করুন