২৯ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার, ০৫:৪০:০৮ পূর্বাহ্ন
বৃষ্টির পানিতে ভেজা আড়তের চাল বিক্রি হলো ১০ টাকা কেজিতে
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৯-২০২৩
বৃষ্টির পানিতে ভেজা আড়তের চাল বিক্রি হলো ১০ টাকা কেজিতে

রাজধানীতে গতকাল বৃহস্পতিবারের টানা বর্ষণে এখনো বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে আছে। ভারী বর্ষণে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট চালের আড়ত পানিতে ভেসে গেছে। এতে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। ১০ টাকা কেজিতে ভেজা চাল বিক্রি করছেন তাঁরা। গত ১৪ সেপ্টেম্বর অগ্নিকাণ্ডে মার্কেটটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে সময় চালের আড়ত আগুনের স্পর্শে না এলেও এবার ডুবল বৃষ্টির পানিতে। 


কৃষি মার্কেটের চালের আড়তদাররা বলেছেন, গত ২ জুলাই বৃষ্টির পানিতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়। মাত্র তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে আবারও বৃষ্টির পানিতে ক্ষতি হলো। কাকতালীয়ভাবে এই দুই দিনই মার্কেট বন্ধ ছিল। 


আজ শুক্রবার দুপুরে মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের চালের আড়তে গিয়ে দেখা যায়, পানিতে ভিজে যাওয়া চাল-ডালসহ বিভিন্ন পণ্যের বস্তা বের করছেন ব্যবসায়ীরা। কেউ কেউ জমে থাকা পানি সরাতে ব্যস্ত। এরপর ভিজে যাওয়া চালের বস্তা তারা নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দিচ্ছেন। 


রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে ভয়াবহ আগুনরাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে ভয়াবহ আগুন

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের একজন বিসমিল্লাহ ট্রেডিংয়ের মালিক শামসুজ্জামান। ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমার দুই দোকানের প্রায় ৩০০ বস্তা চাল নষ্ট হয়েছে, যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৯ লাখ টাকা। তিন মাস আগেও একবার পানি উঠেছিল। তখন ১০০ বস্তা চাল নষ্ট হয়।’ 


বৃষ্টি হলেই মার্কেটে পানি ওঠার কারণ জানতে চাইলে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমাদের পাশের রিং রোড উঁচু হয়ে যাওয়ায় সব দিকের পানি দ্রুত চলে আসে। কোনো দিকের পানি নামতে পারে না। একটু বেশি বৃষ্টি হলেই পানিতে ভেসে যায়।’ 


আরেক ব্যবসায়ী তাহের ট্রেডার্সের মালিক মো. ইমরান। তিনি বলেন, ‘১৫০ বস্তা ভিজেছে। এতে আমার প্রায় ৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর আগে পানি উঠে ৫০ বস্তা চাল নষ্ট হয়েছিল। এখন পানির দামে বিক্রি করতে হয়েছে।’ 


মো. ইমরান বলেন, ‘এর আগে যখন পানি উঠেছিল, তখন ড্রেন পরিষ্কার করা হয়। এখন নাকি আবারও ড্রেন ভরে গেছে। ক্ষতি তো আমাদেরই।’ 


চালের আড়তে পানি উঠে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ভিজে যাওয়ার খবরে পার্শ্ববর্তী এলাকার অনেকেই কম দামে চালসহ অন্যান্য পণ্য কিনতে আসছেন। 


নবোদয় হাউজিং এলাকার বাসিন্দা সালমা আক্তার বলেন, ‘কী করব, আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ। অল্প দামে পেয়েছি। বাসায় নিয়ে শুকিয়ে রাখার চেষ্টা করব।’ 

 

১ হাজার ৫০০ টাকা দামের ২৫ কেজির দুই বস্তা চাল তিনি কিনেছেন ৫০০ টাকায়। অর্থাৎ, কেজিপ্রতি ১০ টাকা। সালমার মতো অনেকেই অল্প দামে চাল, ডাল, আটা, চিনিসহ বিভিন্ন পণ্য কিনছেন। 


কৃষি মার্কেট চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনিরুল ইসলাম মন্টু বলেন, ‘গতকালের বৃষ্টিতে আমাদের আড়তের প্রতিটি দোকানে পানি ঢুকে প্রায় কয়েক কোটি টাকার চাল ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। এর আগেও কোরবানি ঈদের পর পর বৃষ্টিতে আমাদের চালের আড়ত তলিয়ে সব চাল ভিজে যায়। আমাদের চালের আড়তটি অন্য এলাকার তুলনায় নিচু এলাকা হওয়ায় তাজমহল রোড, নতুন কাঁচাবাজার ও টিক্কাপাড়ার পানি মার্কেটে ঢুকে যায়।’ 


সৈয়দ মনিরুল ইসলাম মন্টু বলেন, ‘গতকাল প্রবল বৃষ্টির দুই ঘণ্টা পর পানি নেমে গেলেও প্রতিটি দোকানে পানি প্রবেশ করে চাল ভিজে যায়। এতে ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভিজে যাওয়া চালগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। এখন এগুলো কোনো কাজে আসবে না। এখন পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা চাল সরানোর কাজে ব্যস্ত আছেন। কার কত টাকা ক্ষয়ক্ষতি হলো, তা পুরোপুরিভাবে এখনো বলা যাচ্ছে না।’ 


মার্কেট উঁচু করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেক বছর রাস্তার কাজ করা হয় না। রাস্তার কাজ করলে দেখা যায় আমাদের মার্কেটটি নিচু হয়ে যায়। রাস্তা উঁচু করে নির্মাণ করার ফলে আমাদের মার্কেটটি নিচু হয়ে যায় এবং পানি খুব সহজেই প্রবেশ করে।’





































শেয়ার করুন