০২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১০:২১:০১ পূর্বাহ্ন
করপোরেট সিন্ডিকেটের দখলে ডিম
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৮-২০২৩
করপোরেট সিন্ডিকেটের দখলে ডিম

চাহিদা বাড়েনি, উৎপাদনও কমেনি। কিন্তু এরই মধ্যে ডিমের ডজনে দাম বেড়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পুরো ডিমের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। লাগামহীন বাড়ছে দাম, অথচ কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বাজার পর্যবেক্ষণ, তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ আর খাত-সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, মূলত বড় করপোরেটগুলোর সিন্ডিকেটের কারণেই অকারণে ডিমের দাম বাড়ছে।


উৎপাদকদের দেওয়া তথ্যে প্রতিটি ডিমের দাম ১১ টাকার কম দেখানো হলেও, এখন বিক্রি করা হচ্ছে প্রায় ১৫ টাকায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি। হাজার কোটি টাকার শুল্ক-কর ছাড় নিয়েও কেন দাম এত বাড়ছে–এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।


সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি হালি (৪টি) ফার্মের ডিমের দাম ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। অথচ ঠিক এক সপ্তাহ আগে এই ডিমের দাম ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। সংস্থাটির জরিপ অনুযায়ী, এক বছর আগে ৪৩ থেকে ৪৭ টাকায় পাওয়া যেত এক হালি ডিম।


গতকাল রাজধানীতে প্রতি ডজন ব্রয়লার মুরগির লাল ডিম বিক্রি হয়েছে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকার মধ্যে। বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির সাদা ডিমের দামও। বর্তমানে এই ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৩০ টাকা। তবে অপরিবর্তিত আছে দেশি মুরগি ও হাঁসের ডিমের দাম। দেশি মুরগির ডিমের ডজন ২১০ টাকা ও হাঁসের ২০০ টাকা। সরেজমিনে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মহাখালী বাজার, কচুক্ষেত বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।


ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করেছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তবে তাদের অভিযানেও ফেরেনি স্বস্তি। করপোরেট প্রতিষ্ঠান সিন্ডিকেট করছে, এর একটি ইঙ্গিত দিয়ে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একটি বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান দেখলাম ১ লাখ ৮০০ ডিম সরবরাহ করেছে একটি দোকানে। কিন্তু সেখানে সর্বমোট কত টাকা তাকে দিতে হবে, এর কোনো উল্লেখ নেই। এর মানে তাহলে কী দাঁড়ায়? আপনি তাহলে বুঝে নেন। এ রকম অনিয়ম হচ্ছে।’


জানতে চাইলে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশে হঠাৎ করে ডিমের উৎপাদন কমেনি। প্রকৃতপক্ষে ডিমের বাজার খামারিদের নিয়ন্ত্রণে নেই। বাজার নিয়ন্ত্রণ করে কিছু করপোরেট প্রতিষ্ঠান। তারা নির্দিষ্ট এজেন্টদের মাধ্যমে সকাল ১০টার মধ্যে মোবাইল ফোনের এসএমএস, ফেসবুক পেজের মাধ্যমে সারা দেশে ডিমের দাম জানিয়ে দেয়। সেই দামেই বিক্রি হয়। এর সঙ্গে উৎপাদন বা চাহিদার তেমন সম্পর্ক থাকে না। তিনি বলেন, এই সিন্ডিকেটের ক্ষমতা সরকারের চেয়েও বেশি। এ কারণে চাইলেও সরকার কিছু করতে পারে না বলে মনে করেন তিনি।


বাংলাদেশ ডিম উৎপাদনকারী সমিতির সভাপতি তাহের আহমেদ সিদ্দিকী আজকের পত্রিকাকে বলেন, চার-পাঁচটা করপোরেট প্রতিষ্ঠান সিন্ডিকেট করছে। কাজী ফার্মসের প্রতিদিনের উৎপাদন ১৩-১৪ লাখ পিস ডিম, প্যারাগন পোলট্রির উৎপাদন সাড়ে ৭-৮ লাখ পিস। এসব প্রতিষ্ঠান সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিদের কাছ থেকে কম দামে ডিম কিনে নিয়ে আড়তদারেরাও একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। এরপর পাইকার, খুচরা দোকানদার হয়ে ভোক্তা পর্যায়ে অনেক বেশি দামে ডিম কিনতে হচ্ছে।


কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, যেকোনো জিনিসের দাম বাড়লেই মানুষের ভোগান্তি হয়। মানুষ কষ্টে আছে, কষ্ট বাড়ছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের কষ্ট বাড়ছে। তবে যদি আয় পণ্যমূল্যের চেয়ে বেশি বাড়ে, তখন কষ্টটা সহনীয় হয়। না হলে কষ্ট আরও বাড়ে।


জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে পোলট্রি খাতে সরকার ৭৭০ কোটি ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৯৭৮ কোটি টাকা শুল্ক ছাড় দিয়েছে। সরকার রাজস্ব আদায়ে নানাভাবে ছাড় দিলেও ন্যায্য সুবিধা পাচ্ছে না মানুষ। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় পোলট্রি খাতে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। 


শেয়ার করুন