২৯ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার, ০৫:৪৫:৩১ পূর্বাহ্ন
পাউরুটি ফেরি করে ৫০ বছর
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৬-২০২৩
পাউরুটি ফেরি করে ৫০ বছর


পাউরুটি বিক্রি করছেন মুহিত। গতকাল দুর্গাপুরে

পাউরুটি বিক্রি করছেন মুহিত। গতকাল দুর্গাপুরে। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রায় ৬৮ বছরের জীবনে ৫০ বছর ধরে ফেরি করে পাউরুটি বিক্রি করে চলেছেন তিনি! এ যেন এক শেষ না হওয়া গল্প। মা-বাবা আর ছয় ভাইবোন নিয়ে মুহিতদের সংসারটির আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না কখনোই। দ্বিতীয় শ্রেণিতে ওঠার পর আর পড়াশোনা করা হয়নি তাঁর। অল্প বয়সে নামতে হয় উপার্জনের পথে। সে সময় জীবিকার জন্য চলে আসেন বানেশ্বর বাজারে। সেখানে একটি পাউরুটির কারখানায় ‘পেটেভাতে’ কাজ শুরু করেন।


কাজ শিখে ১৯৭২ সালের দিকে ফিরে যান বাড়িতে। সেখানে পাউরুটি বানানো এবং সেগুলো ফেরি করে বিক্রি শুরু করেন। সেই ৫০ বছর আগে কাঁধে ভার নিয়ে ছুটে চলার শুরু। তারপর ১৯৯০ সালের দিকে কষ্ট করে কেনেন বাইসাইকেল। তাতে ভার বওয়ার কষ্ট কিছুটা কমে। আর এখন কিনেছেন একখানা পুরোনো মোটরসাইকেল। ফলে শারীরিক কষ্ট আরও কিছুটা কমেছে। তবে বেড়েছে ছুটে চলার পথ। দৃশ্যত এই পরিবর্তন ছাড়া জীবনে তেমন কিছু বদলায়নি মুহিত চন্দ্র সরকারের।


গতকাল রোববার সকাল। দুর্গাপুর পৌর শহরের ব্যস্ত থানা মোড়। আশপাশের দোকানগুলো সবে খুলতে শুরু করেছে। সাতসকালে থানা মোড়ে মোটরসাইকেলের ওপর বিশেষ কায়দায় পাউরুটি সাজিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন মুহিত চন্দ্র। কিছুক্ষণ পরপর তাঁর পাউরুটি কিনছিলেন চায়ের দোকানদার ও সাধারণ ক্রেতারা। ব্যস্ততা তখনো পুরোপুরি শুরু হয়নি। সেই সুযোগে কথা বলতে এগিয়ে গেলাম। পাউরুটি বিক্রি করতে করতে কথা বলছিলেন মুহিত।


দুর্গাপুর পৌর শহরের কালীদহ এলাকার একটি খুপরিঘরে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে থাকেন মুহিত। মেয়েটিকে বিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু অল্প বয়সে বিধবা হওয়ার পর এখন বাবার বাড়িতেই থাকেন। পরিবারের মানুষ আর বাড়িটির ৩ শতাংশ জায়গা, পৃথিবীতে আপন বলতে এই!


প্রতিদিন রাত ৩টায় ঘুম থেকে   জেগে ওঠেন মুহিত। পাউরুটি বানিয়ে সকাল ৬টার দিকে পৌঁছান দুর্গাপুরে। সকাল ৯টা পর্যন্ত সেখানে পাউরুটি বিক্রি করে ছোটেন অন্য হাটের দিকে। সেসব হাটে নিয়মিত ক্রেতাদের কাছে পাউরুটি পৌঁছে দেন।

শেয়ার করুন