২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৩:৫৪:১৭ অপরাহ্ন
অনলাইনে সম্পর্কের ফাঁদে নিঃস্ব হচ্ছেন অনেকে
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৬-২০২৩
অনলাইনে সম্পর্কের ফাঁদে নিঃস্ব হচ্ছেন অনেকে

ফেসবুকে পরিচয়। ছেলেটি নিজেকে সৌদিপ্রবাসী বলে পরিচয় দেন। কথোপকথন গড়ায় ইমোতে। কথা বলতে বলতে প্রেম, তারপর ফোনেই বিয়ে। তবে বিয়ের খবর ছেলের পরিবারকে জানাতে মানা। তিন মাস পর কথিত সেই প্রবাসী জানান, সৌদি আরবে রোজগার কমে গেছে, যেতে হবে ইউরোপ। এ জন্য ১২ লাখ টাকা লাগবে। কিন্তু তাঁর কাছে আছে পাঁচ লাখ টাকা। এ কথা শুনে মেয়ের পরিবার বাকি সাত লাখের জোগান দেয়। এর কিছুদিন পরই বন্ধ হয়ে যায় ছেলেটির ফোন। আর খোঁজ মেলে না তাঁর।

রাজধানীর পুরান ঢাকায় গত জানুয়ারির ঘটনা এটি। ছেলেটির খোঁজ না পেয়ে মেয়ের পরিবার সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে।

দেশে এমন প্রতারণার ঘটনা কম নয়। র‍্যাব, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার ক্রাইম ইউনিট, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার সেন্টার, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনসহ (পিবিআই) পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে প্রতিদিনই এমন অভিযোগ আসছে। ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল অপরাধ বিভাগের হিসাব বলছে, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আড়াই বছরে এই বিভাগের ৪০৬টি মামলার মধ্যে ৯৮টিই, অর্থাৎ ২৪ দশমিক ১৪ শতাংশই প্রতারণার মামলা।

ডিএমপির সাইবার বিভাগের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১ সালে ঢাকায় যত সাইবার অপরাধের ঘটনা ঘটেছে, এর ৪২ দশমিক ২২ শতাংশই ছিল প্রতারণার। এর মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিং-সংক্রান্ত প্রতারণা ২৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ, অনলাইনের অন্যান্য মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণা ১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ২০২২ সালে প্রতারণার ঘটনা ছিল মোট সাইবার অপরাধের ৪১ দশমিক ৫১ শতাংশ। আর ২০২৩ সালের মে মাস পর্যন্ত মোট সাইবার অপরাধের অর্ধেকই প্রতারণার। 

সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের (সিক্যাফ) ২০২৩ সালের গবেষণা বলছে, জেন্ডারভিত্তিক তুলনামূলক পরিসংখ্যানে নারীরাই সাইবার অপরাধের শিকার বেশি (৫৯ দশমিক ৭২ শতাংশ)। ৩১ বছর থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারী-পুরুষ এ ধরনের প্রতারণার ফাঁদে পড়ছেন বেশি।

সিক্যাফের গবেষণা পর্ষদের প্রধান ওবায়দুল্লাহ আল মারজুক বলেন, গত পাঁচ বছরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবহারে নাগরিকের অভ্যাস ও আচরণগত উন্নয়ন করতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে হবে। তা না হলে প্রতারণার ঘটনা ঘটতেই থাকবে।

রাজধানীর মিরপুরে গত জানুয়ারিতে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকার (৫৬) সঙ্গে একটি ট্রাভেল গ্রুপে জাহিন চৌধুরী (৪০) নামের এক ব্যক্তির পরিচয় হয়। ওই ব্যক্তি নিজেকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর অডিট (অ্যাডমিন অ্যান্ড প্ল্যানিং–হেড অব দ্য ডিপার্টমেন্ট) কর্মকর্তা পরিচয় দেন। এক পর্যায়ে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। গত মার্চে জাহিন ওই শিক্ষিকাকে ফোন করে বলেন, সরকার তাঁকে ৮৫ লাখ টাকার একটি গাড়ি দিচ্ছে। কিন্তু ব্যাংক হিসাবে সমপরিমাণ টাকা দেখাতে হবে। তাঁর কাছে ২৯ লাখ টাকা আছে। এরপর ওই শিক্ষিকা ১২ লাখ টাকা দেন। টাকা নিয়েই লাপাত্তা জাহিন। পরে ওই শিক্ষিকা বিমানবন্দরে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, সেখানে জাহিন চৌধুরী নামে কেউ চাকরি করেন না। গত ১৭ এপ্রিল তিনি মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন। পিবিআই ১ জুন জাহিনকে গ্রেপ্তার করেছে।

ডিএমপি ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইমের (উত্তর বিভাগ) উপকমিশনার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সাইবার জগতে সবাইকে সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। সেখানে নানা ফাঁদ। এই ফাঁদে পড়লে কোনো না কোনো ক্ষতি হবেই। তাই বন্ধুত্ব, সখ্য, অর্থ লেনদেনে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। কারণ, আমি ওপাশের মানুষটাকে কখনো দেখিনি। তাই তাকে বিশ্বাস করার আগে যাচাই-বাছাই করতে হবে। মানুষ প্রলোভনে বেশি পড়ছে। এই সুযোগটাই নিচ্ছে প্রতারকেরা।’




শেয়ার করুন