২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১২:৪৫:০৩ অপরাহ্ন
সাধারণ সম্পাদক হলেন মাদক ব্যবসায়ী, নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৫-২০২৩
সাধারণ সম্পাদক হলেন মাদক ব্যবসায়ী, নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ

একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীকে রাজশাহীর বাঘা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। এ ঘটনায় রাজশাহী অঞ্চলে শুরু হয়েছে তোলপাড়। আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ এবং অসন্তোষ।

বিষয়টি নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। অভিযোগ উঠেছে, নেতাকর্মীদের অবহিত না করেই বাঘা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন আহবান করা হয়েছে। তারা বলছেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগে কী নেতাকর্মীর অভাব যে মাদকদ্রব্যসহ পুলিশের অভিযানে একাধিকবার গ্রেফতার ফখরুল হোসেন বিপ্লবকে সাধারণ সম্পাদক করতে হয়েছে। বিশেষ কী এমন কারণ এবং যোগ্যতা রয়েছে যে বিপ্লবকে সাধারণ সম্পাদক করা হলো।

ত্যাগী এবং পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে একজন আওয়ামী লীগ নেতার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণে বিপ্লবকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। এদিকে পুলিশের কাছে ফেন্সিডিল, দেশিয় অস্ত্র এবং নগদ টাকাসহ বিপ্লবের গ্রেফতারের ছবি যুগান্তরের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিপ্লব বাঘা উপজেলা সদরের চণ্ডিপুর এলাকার বাসিন্দা। তার বাবা আলতাব হোসেন এবং আপন ছোট ভাই বাবুও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। তাদের পুরো পরিবার মাদক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত বলে রয়েছে অভিযোগ। সর্বশেষ গত বছরের ২০ ফেব্রয়ারি বিপ্লব, তার বাবা, ছোট ভাই এবং সহযোগী উপজেলার হিজল পল্লী গামের মেরিন হোসেনকে পুলিশের অভিযানে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারের সময় ২২ বোতল ফেন্সিডিল, দুইটি দেশীয় অস্ত্র (বড় হাঁসুয়া), চারটি মোবাইল ফোন সেট, একটি মোটরসাইকেল এবং এক লাখ ৩০ হাজার টাকা উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় বিপ্লব এবং তার পরিবারের সদস্যরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। তাদের হামলায় বাঘা থানার এএসআই মাসুদ ইকবাল ও রেজাউল করিম আহত হন। পুলিশ মাদক, অস্ত্র এবং সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে তিনটি মামলা দায়ের করে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ মে শনিবার বাঘা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন আহবান করা হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। উদ্বোধক ছিলেন রাজশাহী জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি রোকনুজ্জামান রিন্টু।

অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক একেএম আফজালুর রহমান বাবু, পাশর্^বর্তী চারঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফখরুল ইসলাম, বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুলসহ নেতৃবৃন্দ।

এদিকে শনিবার সম্মেলনের পর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি রোকনুজ্জামান রিন্টু এবং সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান রানা স্বাক্ষরিত এক পত্রে ত্রিবার্ষিক আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে নাজমুল ইসলামকে সভাপতি এবং ফখরুল হোসেন বিপ্লবকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয়।

চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী বিপ্লবকে সাধারণ সম্পাদক করার বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি রিন্টুকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেন নি। তবে সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান রানা বলেন, এ বিষয়ে আপনি জেলা সভাপতির সাথে কথা বলেন।

সভাপতিকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছেনা জানালে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না। আপনি (সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক) পাঁচ মিনিট পরে ফোন করেন। পরে ফোন দিলে রানা আর ফোন ধরেন নি।

তবে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু বলেন, বিপ্লবের বিষয়টি আমি জানতাম না। কমিটি ঘোষণার পরে স্থানীয় নেতাকর্মীরা এ বিষয়ে আমাকে জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিচ্ছি। স্বেচ্ছাসেবক লীগে কোন মাদক ব্যবসায়ী, মাদকসেবি বা মাদক কারবারির স্থান হবে না। অভিযোগের সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অপরদিকে বিপ্লবকে সাধারণ সম্পাদক করায় বাঘার দুইটি পৌরসভা এবং নয়টি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সম্মেলনের ব্যাপারে তারা কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুলের ঘনিষ্ঠ বিপ্লব। একারণেই তাকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্যের জন্য বাবুলকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেন নি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে পাকুড়িয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দুলাল হোসেন বলেন, সম্মেলনের ব্যাপারে আমাদের কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি। এমনকি মৌখিকভাবেও জানানো হয়নি। তবে শুনলাম বিপ্লবকে কমিটির সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি মেনে নেওয়া কঠিন। এর ফলে দলের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে।

একই ধরনের কথা বলেছেন গড়গড়ি আউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায় মোমিনুল ইসলাম নান্টু। তিনি বলেন, বিপ্লবকে সাধারণ সম্পাদক করায় ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। নেতারাই বলছেন, কোনো সন্ত্রাসী বা মাদক ব্যবসায়ীকে পদ দেওয়া যাবেনা। কিন্তু উনারাই আবার এ ধরনের ব্যক্তিদের নেতা বানাচ্ছেন। এটি অত্যন্ত কষ্টকর। এর ফলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীদেও মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

বিষয়টি সম্পর্কে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাবলুকে জিঙ্গাসা করা হলে তিনি বলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। বিপ্লব নামে একজন ব্যক্তিকে সম্মেলনে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। কেন করা হয়েছে, সেটি আমার বোধগম্য না। এ পদে একজন স্বচ্ছ মানুষকে দায়িত্ব দেওয়া যেত। ছাত্রলীগ বা যুবলীগ করা কাউকে দায়িত্ব দিলে ভালো হত।

অভিযোগ সম্পর্কে যোগাযোগ করা হলে বিপ্লব বলেন, আমাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানো হয়েছে। আমি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত না। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর একটি মহল আবারও ষড়যন্ত্র করছে। বিষয়টি রাজনৈতিভাবেই মোকাবেলা করা হবে।

বিপ্লবের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগ এবং মামলা সম্পর্কে বাঘা থানার ওসি খাইরুল ইসলাম বলেন, আমি থানায় কিছুদিন আগে যোগদান করেছি। তবে তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র এবং সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে তিনটি মামলা রয়েছে। আমি রাজশাহী শহরে অবস্থান করছি। তবে তার বিরুদ্ধে কয়টি মামলা রয়েছে, এ মুহূর্তে বলতে পারছি না।

শেয়ার করুন