লিওনেল মেসির দেশের ফুটবলে এখন এক নতুন নাম উচ্চারিত হচ্ছে বারবার, হুলিয়ান আলভারেজ। আতলেতিকো মাদ্রিদের জার্সিতে মাত্র এক বছরেই হয়ে উঠেছেন দলের প্রাণ। কিন্তু গোলের ঝলক বা সিমিওনের আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠার বাইরেও একটা কারণে তিনি আজ ভিন্ন আলোচনায়- তার শরীরে নেই একটিও ট্যাটু।
ফুটবলের আধুনিক যুগে ট্যাটু যেন এক ধরনের ভাষা। শরীরে খোদাই করা হয় ভালোবাসা, বিশ্বাস, ধর্ম কিংবা পরিবারের গল্প। আর্জেন্টিনা দলের দিকে তাকালে দেখা যায়- মেসি থেকে ডি মারিয়া, রদ্রিগো দে পল থেকে লাউতারো, সবার শরীরে ট্যাটুর ছোঁয়া। শুধু একজনই ব্যতিক্রম, সেই আলভারেজ।
সম্প্রতি লেকিপের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হাসিমুখেই তিনি বললেন, আর্জেন্টিনা দলের ক্যাম্পে কেউ বলছিল, আমিই নাকি একমাত্র খেলোয়াড় যার শরীরে কোনো ট্যাটু নেই! তবে আমি আলাদা হতে চাইনি। ছোটবেলায় বাবা বলতেন- ট্যাটু নয়, সিগারেট নয়, মদ নয়। আমি এখনো সেই কথাই মানি।’
এই সরলতাই যেন আলভারেজকে আলাদা করে তুলেছে। তিনি তারুণ্যের প্রতীক, কিন্তু একই সঙ্গে পুরোনো মূল্যবোধে বিশ্বাসী এক মানুষ। যেখানে অনেকে ট্যাটু দিয়ে নিজেকে প্রকাশ করেন, সেখানে আলভারেজ নিজের কথা বলেন খেলার মাধ্যমে।
৫ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার এই আর্জেন্টাইনকে কেউই সহজে মূল স্ট্রাইকার ভাবতে চাননি। কিন্তু আলভারেজ ছোটবেলা থেকেই জানতেন উচ্চতা নয়, মনোবলই বড় শক্তি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রিভার প্লেটের ট্রায়ালে সবাই আমার গড়ন দেখে হাসছিল। কিন্তু আমি জানতাম, গোল আমার ভাষা।’
আজ সেই ছোটখাটো ছেলেটাই আতলেতিকো মাদ্রিদের জার্সিতে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগে ত্রাসের নাম। লা লিগা ও চ্যাম্পিয়নস লিগ মিলিয়ে করেছেন ৯ গোল। লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতার দৌড়ে এখন দ্বিতীয় স্থানে।
১১ বছর বয়সে রিয়াল মাদ্রিদের ট্রায়ালে অংশ নিয়েছিলেন আলভারেজ। টুর্নামেন্টও জিতেছিলেন। কিন্তু পরিবারকে ছেড়ে ইউরোপে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেননি। তখনই বুঝেছিলেন, সবকিছুর সময় আছে।
রিভার প্লেট থেকে উঠে এসে ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে খেলেছিলেন দুই মৌসুম। গোলও করেছিলেন ৩৬টি। কিন্তু আর্লিং হলান্ডের ছায়ায় থেকে নিজের আলো পুরোটা ছড়াতে পারেননি। তাই তিনি চলে আসেন নতুন সূচনার সন্ধানে, আতলেতিকো মাদ্রিদে।
তিনি বলেন, ‘আতলেতিকোকে বেছে নিয়েছি কারণ এখানে নিজেকে প্রমাণ করার জায়গা ছিল।’
ট্রান্সফার মার্কেটে তার নাম বারবার ঘুরে বেড়ায়। কখনো বার্সেলোনার সম্ভাব্য স্ট্রাইকার, কখনো পিএসজির টার্গেট। কিন্তু আলভারেজের মনোযোগ কেবল মাঠে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কে কী বলছে, তা নিয়ে ভাবি না। আমি আতলেতিকোতেই মনোযোগী। মৌসুম শেষে দেখা যাবে।’
২০২৩ সালে ব্যালন ডি’অরের তালিকায় সপ্তম হয়েছিলেন। এবার ৩০ জনের তালিকায় নাম নেই। কিন্তু এতে বিচলিত নন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সেরা ৩০ জনের মধ্যে থাকা গর্বের। তবে সুখী হতে প্রশংসার দরকার নেই। ফুটবল খেলাই আমার জন্য যথেষ্ট।’

