০২ নভেম্বর ২০২৫, রবিবার, ০৬:৩৯:৫৫ পূর্বাহ্ন
যুক্তরাষ্ট্র না রাশিয়া, কাকে বেছে নেবে ভারত?
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-১০-২০২৫
যুক্তরাষ্ট্র না রাশিয়া, কাকে বেছে নেবে ভারত?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মুখে যা বলেন, কাজেও ঠিক তাই করেন– তেমনটা নয়। উদাহরণস্বরূপ, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বন্ধু বলে সম্বোধন করে থাকেন। কিন্তু গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে তিনি ভারতকে কোনোভাবেই স্বস্তি দেননি।


চলতি বছরের ২৭ অগাস্ট থেকে ভারতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপানো ৫০ শতাংশ বাণিজ্য শুল্ক কার্যকর হয়েছে এবং এর প্রভাবও কিন্তু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সেপ্টেম্বর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রফতানি ২০ শতাংশ কমেছে এবং গত চার মাসে এই পতন ৪০ শতাংশ।


দিল্লিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান 'গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ'-এর পরিচালক অজয় শ্রীবাস্তব মনে করেন, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি আরোপের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভারত। এই বিশেষজ্ঞের মতে, আগামী মাসগুলোতে রফতানির ক্ষেত্রে এই পতনের পরিমাণ আরও বাড়বে। 


হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনের সময় বুধবার ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বলতে শোনা গিয়েছিল, মোদি একজন মহান ব্যক্তি। তিনি ট্রাম্পকে লাইক (পছন্দ) করেন। 


তারপর তাকে হাসতে হাসতে এও বলতে শোনা যায়, আমি চাই না আপনি অন্য কোনোভাবে 'লাইক' শব্দটাকে ব্যবহার করুন। আমি তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নষ্ট করতে চাই না।


একই সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে দাবি করতে শোনা যায়, রাশিয়ার কাছ থেকে তেল না কেনার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।


এই প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, আপনারা জানেন এমনটা (তেল কেনা বন্ধ করার প্রসঙ্গে) হঠাৎই করা সম্ভব নয়। এর জন্য একটা প্রক্রিয়া রয়েছে যা শিগগিরই সম্পন্ন হবে। 


ভারতের জন্য সমস্যা 


এদিকে, ট্রাম্পের এই দাবির পর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে যে নরেন্দ্র মোদির সরকার কি সত্যিই এমন কোনো আশ্বাস দিয়েছে? ট্রাম্পের এই বক্তব্যের কারণে ভারতে, মোদি সরকারকে দেশের ভেতরে আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে। শুধু তাই নয়, অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন ভারতের কোনো নীতিগত পরিবর্তনের ঘোষণা কি এবার থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করছেন?


ভারতের বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী বৃহস্পতিবার এক্স প্লাটফর্মে (সাবেক টুইটার)-এ একটা পোস্টে উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি ট্রাম্পকে ভয় পাচ্ছেন। আমরা ট্রাম্পকে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল না কেনার সিদ্ধান্ত নিতে এবং সে বিষয়ে ঘোষণা করতে দিচ্ছি।


উপেক্ষা করা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী অভিনন্দন বার্তা পাঠান। অর্থমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফর বাতিল করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শার্ম এল-শেখে যাননি এবং অপারেশন সিন্দুর নিয়ে ট্রাম্পের দাবির বিরোধিতা করেননি, অভিযোগের সুরে বলেন তিনি।


তবে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি প্রত্যাখ্যান করা বা সে প্রসঙ্গে চুপ থাকা কিন্তু এত সহজ নয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাব দেন।


জয়সওয়াল বলেন, আমি যতদূর জানি, প্রধানমন্ত্রী মোদি ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি।


এর আগে রণধীর জয়সওয়াল আরেকটা বিবৃতি দিয়েছিলেন, যেখানে তিনি জানিয়েছিলেন যে ভারত তার ভোক্তাদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে এনার্জি ইম্পোর্ট বা জ্বালানি আমদানি সংক্রান্ত নীতি তৈরি করে।


কিন্তু তা সত্ত্বেও শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আবারো একই দাবি করতে শোনা যায়। তিনি আরও একবার উল্লেখ করেছেন, ভারত আর রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনবে না।


এদিকে, ভারত কিন্তু সরাসরি বলেনি যে ডোনাল্ড ট্রাম্প ভুল বলছেন। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল আমদানি বন্ধ করার কোনো আশ্বাসও ভারত দেয়নি।


এই বিষয়ে অজয় শ্রীবাস্তব বলেছেন, ট্রাম্প এমন এক সময় এই দাবি করছেন যখন ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কথা চলছে।


"স্বাভাবিকভাবেই যুক্তরাষ্ট্র একটা শক্তিশালী দেশ। তাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট যদি কিছু বলেন, তাহলে ভারতের মতো দেশকে তার জবাব দিতে গেলে অনেক সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। তবে আমি মনে করি, জবাব দেওয়ার বিষয়ে ভারতের এখন একটু স্পষ্টতা রাখা উচিত।" 


শেয়ার করুন