১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০৯:২৫:৫১ অপরাহ্ন
রাজশাহীতে সাপের উৎপাত: ৮ মাসে ৯০০ দংশন, প্রাণ গেল ২৮ জনের
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৯-২০২৫
রাজশাহীতে সাপের উৎপাত: ৮ মাসে ৯০০ দংশন, প্রাণ গেল ২৮ জনের

রাজশাহীর পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি, টানা বর্ষা ও বন্যার কারণে ধ্বংস হয়েছে আবাসস্থল। এ জন্য এ অঞ্চলে চলতি বছর সাপের উৎপাত বেড়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে ৯০০ সাপে কামড়ানো মানুষ আসেন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ২৮ জন। অন্যদিকে পরীক্ষা করে দেখা যায়, ৭২১ জনকে কামড় দেয় বিষহীন সাপ।

চিকিৎসকরা বলছেন, এখনও মাত্র ৩ শতাংশ মানুষ সাপে কামড়ানোর পর সরাসরি হাসপাতালে আসছেন। বিপরীতে ৮৬ ভাগের বেশি প্রথমে ওঝার কাছে গিয়ে ঝাড়ফুঁক নেন। অবস্থা গুরুতর হলে হাসপাতালে আসেন। এতে মৃত্যুহার বাড়ছে। অথচ সাপে কামড়ানোর ৪০ মিনিটের মধ্যে রোগীকে হাসপাতালে আনা গেলে মৃত্যুহার কমানো সম্ভব।


রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কে বিশ্বাস বলেন, এবারের মতো সাপে কামড়ানো মানুষ আগে কখনও আসেননি। মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হওয়ায় এমনটি হচ্ছে, এটি খুবই ভালো দিক। তবে মানুষ এখনও আগে ওঝার কাছে যাচ্ছেন। অবস্থা খুব খারাপ হলে হাসপাতালে আসছেন।


সাপ গবেষক বোরহান বিশ্বাস রোমন বলেন, এ বছর বৃষ্টিপাত বেশি হয়েছে। সাপের উৎপাত বৃদ্ধির অন্যতম কারণ এটি। বৃষ্টির দিনে কমন ক্রেইটে বা বিষাক্ত কালাচ সাপ গর্ত থেকে বেরিয়ে লোকালয়ে আসে। তারা মানুষের বসতঘরে গিয়ে দংশন করে। এ ছাড়া পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে রাসেল ভাইপার সাপের আবাস নষ্ট হয়ে গেছে। ভেসে ভেসে লোকালয় এমনকি চরের বসতিতে ঢুকে কামড় দিচ্ছে। পাশাপাশি মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে বনজঙ্গল উজাড় করে সাপের আবাস নষ্ট করছে। উপায় না পেয়ে সাপ লোকালয়ে আসছে বলে মনে করেন তিনি।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের তথ্য, গত মে মাসে ১৪ দিনে ২৯৭ দশমিক ৮ মিলিমিটার, জুনের ১৮ দিনে ২১৪ দশমিক ৮, জুলাইয়ের ২৪ দিনে ৩৮৬ দশমিক ৬ মিলিমিটার এবং আগস্টের ২২ দিনে ২৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে গত পাঁচ বছরের মধ্যে এমন নজির নেই।


রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক গাউসুজ্জামান জানান, এ বছর বৃষ্টিপাতের দিনের সংখ্যা অনেক বেশি। এত দীর্ঘদিন ধরে আগে এ অঞ্চলে বৃষ্টির রেকর্ড নেই।

গত রোববার রাজশাহীর পবার এক অটোচালক রাসেল ভাইপারের কামড়ের পর বিশাল সাপটি নিয়ে রামেক হাসপাতালে আসেন। ছবিটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। হাসপাতালে তাৎক্ষণিক আতঙ্ক ছড়ালেও চিকিৎসকরা সাপ শনাক্ত করে দ্রুত চিকিৎসা দেন।


রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. আজিজুল হক আজাদ বলেন, মৃত সাপ বা ছবি নিয়ে হাসপাতালে এলে চিকিৎসা দেওয়া সহজ। কিন্তু জীবিত সাপ নিয়ে এলে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। তিনি বলেন, ৮৬ শতাংশ মানুষ সাপে কামড়ানোর পর প্রথমে যান ওঝার কাছে। তিন ভাগ সরাসরি আসেন হাসপাতালে। কামড়ের ৪০ মিনিটের মধ্যে হাসপাতালে এলে বেশি নিরাপদ। পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা পরে এলে আইসিইউতে নিতে হয়, মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি থাকে।


ডা. আজিজুল জানান, ৫০ শতাংশ রাসেল ভাইপার দংশন করলেও মানুষের শরীরে বিষ ঢালে না। কোবরার ক্ষেত্রে এটি ৩০ শতাংশ। কিন্তু কমন ক্রেইটে শতভাগ বিষ ঢালে। এন্টিভেনম একদম বিনামূল্যে দেওয়া হয়। ফলে দ্রুত হাসপাতালে আনা উচিত।


রামেক হাসপাতালের আইসিইউ সূত্র জানায়, গত বছর সাপে কামড়ানো ৫৭ জনকে আইসিইউ প্রয়োজন হয়েছিল। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৮৩ জনকে আইসিইউ সাপোর্ট দিতে হয়েছে। আইসিইউতে রাখার পরও রাসেল ভাইপারের দংশনে সাতজনের মধ্যে মারা গেছেন ছয়। তাদের প্রত্যেককে শেষ সময়ে হাসপাতালে আনা হয়।

আইসিইউ ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, গত বছর আইসিইউতে ভর্তিদের মধ্যে মৃত্যুহার ছিল ২৪ শতাংশ। চলতি বছর এ পর্যন্ত এ হার ১৪। এবার বসতঘরে কমন ক্রেইটের বিষক্রিয়ায় ৭৬ আক্রান্তদের ৭১ জনই সুস্থ হয়েছেন দ্রুত হাসপাতালে আনার কারণে।


শেয়ার করুন