০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ১১:১৬:০৫ অপরাহ্ন
রাজশাহীতে পাহাড়িয়াদের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদচেষ্টার প্রতিবাদে মানববন্ধন
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৯-২০২৫
রাজশাহীতে পাহাড়িয়াদের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদচেষ্টার প্রতিবাদে মানববন্ধন

রাজশাহীর মোল্লাপাড়ার পাহাড়িয়া মহল্লা থেকে পরিবারগুলোকে উচ্ছেদচেষ্টার প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়েছে। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে নগরের সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে এ কর্মসূচি হয়।


মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, পাহাড়িয়ারা ৫৩ বছর ধরে সেখানে বসবাস করছেন। তিন প্রজন্ম ধরে বসবাসের পর তাঁদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পাহাড়িয়াদের উচ্ছেদ করতে গেলে সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করা হবে বলে তাঁরা হুঁশিয়ারি দেন।


পাহাড়িয়া পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ময়ূরী বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘এই জমিতে আমাদের দাদারা বাস করেছেন, আমাদের বাবারাও বাস করেছেন। এখন আমরা বাস করছি। দাদাদের কাছে শুনেছি, এই জমির প্রকৃত মালিক ইন্দ্রা ধোপা বহু আগে ভারতে বোনের বাড়িতে গিয়ে মারা গেছেন। তিনি কাউকে জমি দিয়ে যাননি। এখন সাজ্জাদ আলী জমির মালিক সেজে আমাদের তুলে দিতে চাচ্ছেন। আমরা কোথাও যেতে চাই না।’


জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সহসভাপতি রাজ কুমার শাও বলেন, ‘এটা আদিবাসীদেরই জায়গা। এখানে সিটি করপোরেশন তাঁদের জন্য শৌচাগার ও টিউবওয়েল স্থাপন করেছে। ব্যক্তিগত জায়গায় এসব স্থাপনা হয় না।’ তিনি সরকারকে তাঁদের স্থায়ী বন্দোবস্ত দেওয়ার অনুরোধ জানান।


পাহাড়িয়া মহল্লার সরদার বাবুল বিশ্বাস বলেন, ‘সাজ্জাদ আলী আমাদের ভয় দেখিয়েছেন। অল্প কিছু টাকা হাতে তুলে দিয়ে বলেছেন, জমি না ছাড়লে অসুবিধা আছে। আমরা ভয়ে চলে যাচ্ছিলাম। এখন সবাই আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমরা আর কোথাও যেতে চাই না।’


জুলাই ৩৬ পরিষদের আহ্বায়ক মাহমুদ জামাল কাদেরী বলেন, এটা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিন প্রজন্ম বাস করার পর কাউকে এভাবে ভিটেমাটি থেকে কোনোভাবেই উচ্ছেদ করা যায় না। এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থেকে রুখে দাঁড়াতে হবে।


জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি গণেশ মার্ডির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বিমল চন্দ্র রাজোয়াড়ের পরিচালনায় বক্তব্য দেন ভুক্তভোগী পাহাড়িয়া পরিবারের লোকজন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেতা, মানবাধিকারকর্মী, উন্নয়নকর্মী, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।


মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন রাজশাহী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, উদীচীর সহসভাপতি অজিত কুমার মণ্ডল, বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টার নির্বাহী পরিচালক ফয়জুল্লাহ চৌধুরী, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাবেক সভাপতি বাবুল রবিদাস, গোদাগাড়ী উপজেলার সভাপতি রবীন্দ্রনাথ হেমব্রম, বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের সহসাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান, সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক কাউন্সিলর সুলতানা আহমেদ প্রমুখ।


বক্তারা গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, পত্রিকায় খবর প্রকাশ না হলে এ অন্যায়ের কথা কেউ জানতে পারতেন না। সংবাদ প্রকাশের পর প্রশাসন সক্রিয় হয়েছে এবং ভেস্তে গেছে উচ্ছেদের আয়োজন।


প্রসঙ্গত, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মোল্লাপাড়ায় ১৬ কাঠা জমিতে মুক্তিযুদ্ধের পর ছয়টি পাহাড়িয়া পরিবারকে বসবাসের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তিন প্রজন্মে বর্তমানে বাড়ি দাঁড়িয়েছে ১৬টি। সম্প্রতি সাজ্জাদ আলী নামের এক ব্যক্তি জমির মালিকানা দাবি করে ৩০ লাখ টাকা দিয়ে সেখানকার ১৬টি পরিবার উচ্ছেদের চেষ্টা করেন। তিনটি পরিবার ঘর ছাড়লেও সংবাদ প্রকাশের পর আন্দোলন শুরু হয় এবং পাহাড়িয়ারা উচ্ছেদ ঠেকাতে ঐক্যবদ্ধ হন। বৃহস্পতিবার পুলিশ-প্রশাসন তৎপর হয়ে ওঠে। শুক্রবার আদিবাসী সংগঠনের নেতা-কর্মী, মানবাধিকারকর্মী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও উন্নয়নকর্মীরা ওই পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ান।


শেয়ার করুন