০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০১:১৯:১১ অপরাহ্ন
ইউক্রেন চুক্তি না মানলে সামরিকভাবেই লক্ষ্য পূরণ করবে রাশিয়া: পুতিন
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০৯-২০২৫
ইউক্রেন চুক্তি না মানলে সামরিকভাবেই লক্ষ্য পূরণ করবে রাশিয়া: পুতিন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেন যদি শান্তিচুক্তিতে সম্মত না হয়, তবে রাশিয়া সামরিকভাবেই তার সব লক্ষ্য পূরণ করবে। তবে তিনি আলোচনার সম্ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়ে দেননি। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে।


চীনে এক সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নেওয়ার পর পুতিন বলেন, 'যদি ইউক্রেন কোনো সমঝোতায় না আসে, তাহলে রাশিয়া সামরিকভাবেই তার লক্ষ্য পূরণ করবে।' এই বক্তব্যকে অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী বিশ্বব্যবস্থার প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার যুদ্ধ থামাতে পুতিনকে রাজি করানোর চেষ্টা করেছেন। পুতিন তার এই 'আন্তরিক প্রচেষ্টা'র প্রশংসা করলেও এখনো তা মানেননি।


অন্যদিকে ইউক্রেন সফরে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি বিবিসিকে বলেন, অন্তত ট্রাম্প পুতিনকে আলোচনার টেবিলে এনেছেন। প্রয়োজনে যুক্তরাজ্য ও তার মিত্ররা রাশিয়ার ওপর বাড়তি অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে এবং ইউক্রেনকে আরও সামরিক সহায়তা দেবে।


গত মাসে আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। ওই বৈঠকে তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাশিয়ার বিচ্ছিন্নতা ভাঙার চেষ্টা করেন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে পুতিনের বৈঠকেরও উদ্যোগ নেন। এ বিষয়ে পুতিন বলেন, 'আমি কখনোই এমন বৈঠকের সম্ভাবনা বাতিল করিনি। তবে প্রশ্ন হলো, এর কোনো ফল আসবে কি না। দেখা যাক।' তিনি আরও ইঙ্গিত দেন, জেলেনস্কি চাইলে মস্কোতে আসতে পারেন। যদিও ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এটিকে সঙ্গে সঙ্গে 'সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য' বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।


ইতিমধ্যে জেলেনস্কি পুতিনের অনীহাকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা জোরদারের যুক্তি হিসেবে তুলে ধরছেন। উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরু করে।


বুধবার ট্রাম্প সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, 'পুতিন ভালোভাবেই জানেন তিনি কোথায় অবস্থান করছেন। আমার আলাদা কোনো বার্তা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তিনি জানেন আমি কোথায় আছি, এখন তার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।' একই সময়ে তিনি উল্লেখ করেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দফা নিষেধাজ্ঞা ভারতকেও লক্ষ্যবস্তু করেছে— যা তার নেওয়া পদক্ষেপের প্রমাণ। তিনি বলেন, 'এখনও তৃতীয় ধাপ বাকি।'


বেইজিংয়ে রুশ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের এক সাক্ষাৎকারে যখন যুদ্ধ শিগগির শেষ হতে পারে কি না জানতে চাওয়া হয়, তখন পুতিন বলেন, 'টানেলের শেষে সামান্য আলো দেখা যাচ্ছে। সাধারণ জ্ঞান কাজ করলে সমাধান সম্ভব। না হলে সামরিকভাবেই আমাদের লক্ষ্য পূরণ করতে হবে।'


তিনি দৃঢ়ভাবে জানান, দনবাস অঞ্চল রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণেই থাকবে। একই সঙ্গে আবারও দাবি করেন, ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দেবে না এবং রুশভাষীদের বিরুদ্ধে বৈষম্য বন্ধ করতে হবে। পুতিন ইঙ্গিত দেন, ভবিষ্যতে কোনো শান্তিচুক্তি হলেও পশ্চিমা নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দনবাসে প্রযোজ্য হবে না, কারণ ওই এলাকার জনগণ রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে— যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে।


বেইজিংয়ে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠকের পর কিম বলেন, রুশ সেনাদের সমর্থন দেওয়া তাদের 'ভ্রাতৃত্বপূর্ণ দায়িত্ব।' এ সময় পুতিন কিমকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাশিয়া-উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ককে 'বিশেষ আস্থা, বন্ধুত্ব ও জোটের সম্পর্ক' হিসেবে বর্ণনা করেন।


এদিকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের মিত্রদের নিয়ে ‘কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’-এর বৈঠক আয়োজন করছেন। এলিসি প্রাসাদের এক সূত্র জানায়, বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে রেখে ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা এবং রাশিয়ার কাছ থেকে যুদ্ধবিরতি আদায়ের চেষ্টা করা হবে।


শেয়ার করুন