১৭ মে ২০২৫, শনিবার, ০২:২৯:২০ অপরাহ্ন
গাজায় ইসরায়েলের ব্যাপক হামলা, ঢুকছে ট্যাংক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৫-২০২৫
গাজায় ইসরায়েলের ব্যাপক হামলা, ঢুকছে ট্যাংক

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে শুক্রবার সকাল থেকে স্থল ও আকাশ থেকে ব্যাপক হামলা চালানো শুরু করেছে দখলদার ইসরায়েল। সেখানকার বেঈত লাহিয়া শহরে দখলদারদের ট্যাংকও প্রবেশ করেছে। এছাড়া বর্বরোচিত হামলায় একদিনে ১৪৩ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করল ইসরায়েল, এ নিয়ে নিহত ৫৩ হাজার ছাড়াল। অন্যদিকে উচ্ছেদ ও হত্যাযজ্ঞের মধ্যে আরেকটি নাকবা পার করলেন ফিলিস্তিনিরা।


গাজার উত্তরাঞ্চলের বেঈত লাহিয়ার সাধারণ মানুষ জানিয়েছে, গত মার্চের পর উত্তর গাজায় এটি ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় হামলা। শুক্রবার সকাল থেকে ব্যাপক গোলাবর্ষণ ও মিসাইল ছোড়া শুরু করে তারা। এ সময় সেখানে ট্যাংকও প্রবেশ করে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনী প্রথমে ধোঁয়ার বোমা ছোড়ে। এরপর কাছাকাছি অবস্থান থেকে গোলাবর্ষণ শুরু করে। এরপর বেঈত লাহিয়ার আল-সালাতিনের দিকে ট্যাংক নিয়ে অগ্রসর হয় তারা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইসরায়েলি সাঁজোয়া যান একটি স্কুল ঘিরে ফেলে। যেখানে শত শত বেসামরিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। 


গাজায় দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় অবরোধ আরোপ করে রেখেছে ইসরায়েল। এ সময়ের মধ্যে সেখানে একটি খাদ্যকণাও ঢুকতে দেয়নি তারা। এতে গাজার মানুষ না খেয়ে নিদারুণ কষ্টে দিনযাপন করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, গাজার মানুষের অভুক্ত থাকায় বিষয়টিতে তারা উদ্বিগ্ন। তবে দখলদার ইসরায়েলের কঠোর সমালোচনা না করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হামাসকে অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ সরাসরি স্বীকার করেছেন গাজার মানুষ অভুক্ত থাকছেন। এ বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। তবে যুক্তরাষ্ট্র ঠিক কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে সেটি স্পষ্ট করেননি ট্রাম্প।


এদিকে গাজা জুড়ে ইসরায়েলি বর্বরতা চলছেই। ইসরায়েলি হামলায় একদিনে ১৪৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সেখানের মেডিক্যাল সূত্রগুলো এ তথ্য জানিয়েছে। জাবালিয়া শরণার্থী ক্যাম্প থেকে একজন প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, আল-তাওবাহ ক্লিনিকের ওপরের তলায় রোগীরা হতাহত হয়েছেন। এখানের ভুক্তভোগীদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে। 


গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৩ হাজার ১০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ১৯ হাজার ৯১৯ জন আহত হয়েছেন। যদিও সরকার পরিচালিত মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন এবং ধারণা করা হচ্ছে তারাও মারা গেছেন। ফলে মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬১ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি হতে পারে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস-নেতৃত্বাধীন হামলায় ইসরায়েলে আনুমানিক ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হন এবং ২০০ জনের বেশি মানুষকে জিম্মি করে নেওয়া হয়।


এদিকে সাত দশকের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও নাকবার স্মৃতি তাড়া করে ফেরে ফিলিস্তিনিদের। বৃহস্পতিবার আবারও আরেকটি বছর ঘুরে আগত নাকবার দিনে গৃহত্যাগের যন্ত্রণা ও প্রাণনাশের শঙ্কায় পার করেছেন গাজা ও পশ্চিম তীরের অধিবাসীরা। তবে নাকবা দিবসের ৭৭তম বছরে গাজায় ব্যাপক হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে বৃহস্পতিবার অন্তত ১১৫ জন নিহত হয়। আরবি নাকবা শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে বিপর্যয়। 


জাতি হিসেবে ফিলিস্তিনিদের গত ৭৭ বছরের অভিজ্ঞতা সংজ্ঞায়িত করতে এই দিনটি সবচেয়ে সহজে ব্যাখ্যা করা যায়। আজও ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের সংঘাতপূর্ণ সম্পর্কের পেছনে এই ক্ষত এক বড় অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। চলমান গাজা যুদ্ধ এবং পশ্চিম তীরের শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি আগ্রাসনে নাকবার দুঃসহ স্মৃতি আরো বেশি আতঙ্কিত করে তুলেছে ফিলিস্তিনিদের। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর বিতাড়িত ফিলিস্তিনিদের বংশধরদের বিশাল অংশ এখন উদ্বাস্তুর মতো জীবনযাপন করছেন। ১৯৪৮ সালে জাফা শহর থেকে পরিবারের সঙ্গে পালিয়ে গাজায় আসেন বাদরিয়া মোহারেব। তখন তিনি নিতান্তই শিশু। বর্তমানে তিনি দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে বসবাস করছেন, যেখানেও ইসরায়েলি বাহিনী আবারও অভিযান চালাচ্ছে। ইসরায়েলি হামলায় তার দুই নাতি নিহত হয়েছে এবং ঘরবাড়ি সব ধ্বংস হয়ে গেছে। 


মোহারেব বলেন, এই যুদ্ধের মতো ভয়াবহ কিছু কখনো দেখিনি। মানুষ একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে। ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সূচনা স্মরণ করিয়ে দেয় নাকবা দিবস। তৎকালীন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ব্রিটিশ শাসনের আনুষ্ঠানিক অবসান হওয়ার পরই ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশটি নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেওয়ার পরদিনই একযোগে হামলা চালায় আরব দেশগুলো। কয়েক মাস ধরে চলা ঐ যুদ্ধে ৭ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণভয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। তাদের গ্রামগুলোতে এখন ইসরায়েলি বসতি স্থাপিত হয়েছে। 


বর্তমান সংঘাতের সূচনা হয় ২০২৩ সালের অক্টোবরে। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাস। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবেই হামাস নির্মূলের উদ্দেশ্য সামনে রেখে গাজায় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে নেতানিয়াহু সরকার। জাতিসংঘের তথ্যমতে, গাজার প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা নো গো এরিয়ার আওতায় পড়ে গেছে। গাজা উপত্যকার সীমানা বরাবর এবং ইসরায়েলি বাহিনীর উচ্ছেদের আদেশ আওতাধীন এসব এলাকা থেকে সরে যেতে বাধ্য হচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। গত মার্চ থেকে অন্তত ৪ লাখ ৩৬ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছেন।


শেয়ার করুন