০৭ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার, ০২:৪৯:৪৪ পূর্বাহ্ন
চাল ডাল আলু ডিম জোগাতেই গলদঘর্ম
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৫-২০২৪
চাল ডাল আলু ডিম জোগাতেই গলদঘর্ম


চাল ডাল আলু ডিম জোগাতেই গলদঘর্ম

নিত্যপণ্যের অসহনীয় বাড়তি দাম
 ইয়াসিন রহমান  
 ১৭ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ
ডিক-আলু

পণ্যের বাড়তি দামে ভোগ্যপণ্যের বাজারে নিুবিত্ত ছাড়াও মধ্যবিত্তদেরও নাভিশ্বাস অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। উৎপাদন ও সরবরাহ ঠিক থাকলেও কারসাজি করে বাড়ানো হয়েছে আলুর দাম। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যে এক কেজি আলু কিনতে ক্রেতাকে ৫০-৫৫ টাকা দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। যা ১ মাস আগে ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। পাশাপাশি অবৈধ মজুত করে অস্থির করা হয়েছে ডিমের বাজার। প্রতি ডজন ডিম কিনতে ভোক্তার গুনতে হচ্ছে ১৫০ টাকা। যা কয়েকদিন আগেও ১২০ টাকা ছিল। সঙ্গে ডালের কেজি এই মুহূর্তে ১৩৫ টাকা, যা কয়েক মাস ধরেই এই মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি কেজিপ্রতি ৬০ টাকার নিচে মিলছে না কোনো সবজি। নতুন করে মোটা চালের দামও কেজিতে ৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে গরিবের খাবারের তালিকায় এখন চাল, ডাল-আলু ভর্তা ও ডিমের জোগানেও একরকম গলদঘর্ম অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে তদারকির অভাবে তেল, চিনি, আটা, ময়দার দাম বেড়ে গেছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে কুরবানির ঈদ ঘিরে বাড়ানো হয়েছে সব ধরনের মসলা পণ্যের দাম। সঙ্গে উচ্চ মূল্য হওয়ায় মাছ-মাংসের কাছে ঘেঁষতে পারছে না নিুআয়ের অনেকে। এতে অনেক খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের পরিবারের জন্য বাজার করা বড় ধরনের মানসিক কষ্ট ও হতাশার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরান বাজার, মালিবাগ বাজার, নয়াবাজার ও শান্তিনগরসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে ফার্মের বাদামি ডিম প্রতি ডজন ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। যা ৭ দিন আগেও ১২০-১২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সাদা ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫-১৪০ টাকা। যা ৭ দিন আগে ১১০-১২০ টাকা ছিল। সেক্ষেত্রে সপ্তাহের ব্যবধানে ডজনপ্রতি বাদামি ও সাদা ডিমের দাম বেড়েছে ২০-২৫ টাকা। এদিকে ডিমের বাজার অস্থিরতার পেছনে অবৈধ মজুতের প্রমাণ পেয়েছে সরকারের বিভিন্ন তদারকি সংস্থা। অভিযানে দেখা যায়, কোল্ড স্টোরেজে বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীদের ডিম মজুত আছে। যা প্রায় ২০ দিন হতে ১ মাস আগেই কোল্ড স্টোরেজে মজুত করা হয়েছে। তবে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে সতর্ক করে দায় সেরেছে।

পাশাপাশি প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২২০ টাকা বিক্রি হলেও আগে ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা। যা আগে ৩৫০ টাকা ছিল। দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৬৫০-৭০০ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকা। আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৯০০-১১০০ টাকা।

এদিকে প্রতি কেজি আলু খুচরা বাজারে ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা ১ মাস আগে ৪০-৪৫ টাকা ছিল। আর গত বছর একই সময় কেজিপ্রতি দাম ছিল ৩০-৩৫ টাকা। সরকারি সংস্থা সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন করতে কৃষকের খরচ হয়েছে ১৩ টাকা ৯০ পয়সা। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মতে, বাজারে যৌক্তিক মূল্য হওয়া উচিত ২৮ টাকা ৫৫ পয়সা। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। সঙ্গে প্রতি কেজি ছোট দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা। গরিবের মোটা চাল কিনতে একজন ক্রেতার গুনতে হচ্ছে ৫৫ টাকা। যা ১ মাস আগেও ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

রাজধানীর নয়াবাজারে কথা হয় দিনমজুর মো. ডালিম মিয়ার সঙ্গে। তিনি আক্ষেপ করে যুগান্তরকে বলেন, আমি সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ভ্যানগাড়িতে মালামাল বহন করে ৫০০-৬০০ টাকা ইনকাম করি। এই টাকা দিয়ে পরিবারের মা-বাবা, স্ত্রী, ছেলেমেয়ে মিলে ছয়জনের জন্য বাজার করতে হয়। পাশাপাশি পরিবারের অন্যান্য খরচ বহন করতে হয়। তবে বাজারে পণ্যের যে দাম তা দিয়ে কিছুই কিনতে পারি না। এ জন্য ইচ্ছা করেই পণ্য কম কিনতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ডাল, ডিম, আলু দিয়ে আগে দুইবেলা পার করতাম। এখন দাম বেশি হওয়ায় কী দিয়ে কী কিনব তা ভাবতেই কান্না পাচ্ছে। 

শেয়ার করুন