২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০২:৪৮:০৪ অপরাহ্ন
সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান: ৫০টি বিদেশি কোম্পানি দরপত্রে অংশ নিতে পারে
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৩-২০২৪
সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান: ৫০টি বিদেশি কোম্পানি দরপত্রে অংশ নিতে পারে

উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে দেশের সমুদ্রসীমায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র ডাকা হচ্ছে। আট বছর পর আজ রোববার এই দরপত্র ডাকা হতে পারে। এবার ৫৫টি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নিতে পারে বলে মনে করছে পেট্রোবাংলা।


গভীর সমুদ্রে ১৫টি এবং অগভীর সমুদ্রে ১১টি ব্লক আছে। বর্তমানে অগভীর সমুদ্রের দুটি ব্লকে অনুসন্ধান চালাচ্ছে ভারতের কোম্পানি ওএনজিসি। বাকি ২৪টি ব্লকে দরপত্র ডাকা হচ্ছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলার নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।


এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা শিগগিরই আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করতে যাচ্ছি। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি এক্সন মবিল আমাদের সমুদ্রের সবগুলো ব্লক ইজারা চেয়েছিল, তাদের বলা হয়েছিল দরপত্রে অংশ নিতে। এবার ৫০ টির ওপর বিদেশি কোম্পানি অংশ নেবে বলে আশা করছি।’


মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, দরপত্রে যে প্রতিষ্ঠানই ব্লক ইজারা পাবে, তার সঙ্গে যৌথভাবে কাজে অংশ নেবে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান বাপেক্স। এ ক্ষেত্রে বাপেক্স ১০ শতাংশ মালিকানা পাবে। এতে বাপেক্সের সাগর ভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের দক্ষতা বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অনারারি অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. বদরূল ইমাম বলেন, কোথাও গ্যাস পেতে গেলে যে কয়েকটি উপাদান থাকা আবশ্যক, তার সবগুলো আছে বঙ্গোপসাগরে। বঙ্গোপসাগরের ভারত অংশে গ্যাস মিলেছে, মিয়ানমারের অংশেও বিপুল পরিমাণে গ্যাস মিলেছে। সমুদ্র অঞ্চল লাইন টেনে ভাগ করলেও তার ভূ-অভ্যন্তরের চরিত্র ভাগ করা যায় না। একই ধরনের ভূ-কাঠামোর ভারত ও মিয়ানমারে গ্যাস পাওয়া গেলে তার মধ্যভাগে বাংলাদেশের সমুদ্রভাগে নিশ্চিতভাবেই গ্যাস পাওয়া যাবে।


জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের গত মেয়াদের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ প্রতিষ্ঠান এক্সন মবিল বঙ্গোপসাগরের সব ব্লক ইজারা নেওয়ার একটি প্রস্তাব দিয়েছিল। প্রস্তাবটি ইতিবাচকভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়। তখন পেট্রোবাংলা এক্সন মবিলের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তির খসড়াও তৈরি করেছিল। তবে নির্বাচনের আগে এ রকম চুক্তি থেকে বিরত থাকে সরকার। নির্বাচনের পরে আন্তর্জাতিক দরপত্র ডাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।


সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে যাচ্ছে পেট্রোবাংলা, দরপত্র ১০ মার্চসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে যাচ্ছে পেট্রোবাংলা, দরপত্র ১০ মার্চ

সমুদ্রসীমায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য সর্বশেষ ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক দরপত্র ডাকা হয়েছিল। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর সমুদ্রভাগে চারটি বিদেশি কোম্পানি কাজ শুরু করলেও পরে তিনটি চলে গেছে। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমাসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির পর সমুদ্রে সম্ভাবনাময় তেল-গ্যাস উত্তোলনে বড় কাজ হয়নি।


গ্যাসের মজুত কি ফুরিয়ে আসছে বিশ্বের সেরা তিনটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের সাগরভাগে সমীক্ষা করেছে। এসব সমীক্ষার তথ্যমতে, বাংলাদেশে অনাবিষ্কৃত গ্যাসের মজুত ৩২ থেকে ৪২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)। এই পরিমাণ গ্যাস দিয়ে বাংলাদেশ অন্তত ৩০ বছর চলতে পারবে। যদিও একধরনের প্রচার আছে যে দেশের গ্যাস শেষ হয়ে আসছে, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতে হবে।


কোনো কোনো জ্বালানি বিশেষজ্ঞের দাবি, মূলত এলএনজি-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী এবং এ-সংক্রান্ত কেনাকাটার স্থানীয় এজেন্টদের কারণে গ্যাস না তুলে দেশ গ্যাসশূন্য বলে প্রচার চলছে।


ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির ডিন ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, ‘বিএনপির সময় প্রচার করা হয়েছিল, দেশ গ্যাসের ওপর ভাসছে, মাটির নিচে সম্পদ রেখে লাভ কী! এখন সেই বিশেষজ্ঞরাই বলছেন, দেশে গ্যাস নেই, এলএনজি আমদানি করি। এবার ভাবুন যদি তখন আন্দোলন করে ভারতে গ্যাস রপ্তানি বন্ধ না করা যেত, তাহলে কী পরিস্থিতি হতো? এসব যাঁরা বলেন তাঁরা মূলত গ্যাস রপ্তানি ও এলএনজি আমদানির কমিশন এজেন্ট।’


যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) ও পেট্রোবাংলা যৌথভাবে ১৯৯৮ সালে দেশের স্থলভাগে সমীক্ষা চালিয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে ৫০ শতাংশ সম্ভাবনায় অনাবিষ্কৃত গ্যাসের মজুত ৩২ দশমিক ৫ টিসিএফ।


নরওয়েজিয়ান পেট্রোলিয়াম ডিরেক্টরেট (এনপিডি) ও বাংলাদেশের হাইড্রোকার্বন ইউনিটের সমীক্ষায় বলা হয়, দেশে অনাবিষ্কৃত গ্যাসের মজুত ৪২ টিসিএফ, এই পরিমাণ গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ। ডেনমার্কভিত্তিক তেল-গ্যাস পরামর্শক প্রতিষ্ঠান র‍্যাম্বলের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৩৪ টিসিএফ গ্যাসের মজুত আছে।


বদরূল ইমাম আরও বলেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করা দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক জরিপের ভিত্তিতে ব্যাপক আকারে কূপ খনন করা হয়নি। দেশের ৯০ ভাগ এলাকায় অনুসন্ধানই করা হয়নি।


নতুন পিএসসিতে যা থাকছে ২০২৩ সালের মডেল উৎপাদন-বণ্টন চুক্তিতে (পিএসসি) গ্যাসের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি।বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে সমন্বয় রাখার ফর্মুলায় পিএসসি করা হয়েছে। এতে অপরিশোধিত তেলের দামের ১০ শতাংশ ধরা হয়েছে গ্যাসের দাম। এই হার ধরে জ্বালানি তেলের দাম ওঠানামার সঙ্গে গ্যাসের দামও কমবে বা বাড়বে।


নতুন পিএসসিতে বিদেশি কোম্পানি ও পেট্রোবাংলার মধ্যে গ্যাস ভাগাভাগি করা হয়েছে নতুন সূত্রে। আগে পরিচালন ব্যয় ও বিনিয়োগ উঠে আসার আগপর্যন্ত বিদেশি কোম্পানি ভাগ পেত ৮০ শতাংশ পর্যন্ত। নতুন পিএসসিতে রাজস্বের ৩৫ থেকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত ভাগ পাবে পেট্রোবাংলা। তবে নতুন পিএসসিতেও গ্যাস রপ্তানির বিধান রেখেছে পেট্রোবাংলা। দেশে গ্যাসের যে মোট চাহিদা রয়েছে তার সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ হারে বিদেশে রপ্তানি করতে পারবে বিদেশি কোম্পানি।


অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, দেশে ভয়াবহ গ্যাস সংকটের মধ্যে রপ্তানির বিধান রাখা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। 


শেয়ার করুন