৩০ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৪:১৫:৫০ অপরাহ্ন
রাজশাহী সিটি নির্বাচন মুখোমুখি কাউন্সিলর প্রার্থীরা, সংঘাতের শঙ্কা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৬-২০২৩
রাজশাহী সিটি নির্বাচন মুখোমুখি কাউন্সিলর প্রার্থীরা, সংঘাতের শঙ্কা

রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও উত্তেজনা চলে আসছে। ভোটের দিন যতই এগিয়ে আসছে, সংঘর্ষ-সংঘাতের আশঙ্কা ততই দেখা দিচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। একজন কাউন্সিলর প্রার্থী ছুরিকাহত হয়েছেন। নির্বাচনি কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। ২০-২২টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকরা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন। মনোনয়নপত্র যাচাই- বাছাইয়ের পর সাধারণ ওয়ার্ডে ১১২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে ৩৮ জনের নামে এক থেকে সর্বোচ্চ ২৩টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। অনেকেই হত্যা, অস্ত্র, মাদকদ্রব্য, চোরাচালান এবং নাশকতা মামলার আসামি। ভোটকে কেন্দ্র করে এসব মামলার আসামি কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা সহিংস হয়ে উঠেছে।


৩নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা কামাল হোসেন ও হাবিবুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কামালের নামে হত্যা মামলা রয়েছে। হাবিব একসময় বিএনপি করতেন। এখন আওয়ামী লীগ নেতা। তফশিল ঘোষণার পর থেকে তাদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। যে কোনো সময় সংঘাত হতে পারে।


৭নং ওয়ার্ডের পরিস্থিতি খুব জটিল। বর্তমান কাউন্সিলর মহানগর যুব মৈত্রীর সভাপতি মতিউর রহমান মতির সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী জহুরুল ইসলাম রুবেলের দ্বন্দ্ব পুরোনো। ২০১৮ সালে ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। মতির নামে একটি এবং রুবেলের নামে তিনটি মামলা রয়েছে।


৮নং ওয়ার্ডে ত্রিমুখী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমান কাউন্সিলর এসএম মাহবুবুল হক পাভেল, জানে আলম খান জনি এবং শাহিদ হাসান বারিকের সমর্থকরা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন। তিনজনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রতিপক্ষ কাউন্সিলর প্রার্থীর অভিযোগ, শনিবার গভীর রাতে জনি ও তার সহযোগীরা সিএন্ডবি মোড়ে বারিকের ফুপাতো ভাই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মারুফের রেস্তোরাঁয় হামলা করেছে। বর্তমান কাউন্সিলর পাভেল বলেন, তফশিল ঘোষণার পর থেকে জনি ভোটারদের মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছেন। বিশেষ করে তিনি নারী ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জনি বলেন, এ অভিযোগ ভিত্তিহীন।


১১নং ওয়ার্ডে বিএনপি নেতা সাবেক কাউন্সিলর আবু বাক্কার কিনু এবং বর্তমান কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল ইসলাম তজুর মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। ১৩নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আব্দুল মোমিন ও মহানগর যুবলীগের শিল্পবিষয়ক সম্পাদক মাসুদ রানার সমর্থকের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।


১৪নং ওয়ার্ডে জটিল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বর্তমান কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন আনারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। আনারের সমর্থকরা শুক্রবার সাবেক কাউন্সিলর বিএনপি নেতা টুটুলের নির্বাচনি কার্যালয় ভাঙচুর করে। এছাড়া আনারের বিরুদ্ধে টুটুলের সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আনার বলেন, এ ধরনের ঘটনা সঠিক নয়।


প্রশাসন কঠোর না হলে ১৯নং ওয়ার্ডে প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর তৌহিদুল হক সুমনের সঙ্গে কাউন্সিলর প্রার্থী আশরাফ বাবুর দ্বন্দ্ব অনেক পুরোনো। শনিবার সন্ধ্যায় কাউন্সিলর সুমনের সহযোগীদের ছুরিকাঘাতে কাউন্সিলর প্রার্থী বাবুসহ তার তিন সমর্থক আহত হন। তারা বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।


২৩নং ওয়ার্ডেও রয়েছে উত্তেজনা। এ ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মাহাতাব হোসেন চৌধুরী রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। তার রয়েছে নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান রনির সঙ্গে রয়েছে চরম বিরোধ।


২৫নং ওয়ার্ডে বিএনপি নেতা তরিকুল আলম পল্টু এবং সাবেক ছাত্রদল নেতা আলিফ আল মাহামুদ লুকেনের মধ্যে চরম বিরোধ রয়েছে। কাউন্সিলর পল্টু চাঞ্চল্যকর পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ হত্যা মামলার আসামি। এছাড়া ২৬, ২৮, ২৯ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডেও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।


পূর্ণ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে আরেকবার সুযোগ দিন : রাজশাহীর উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও ১৪ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন আরেকবার সুযোগ চেয়েছেন। রোববার গণসংযোগ ও পথসভায় তিনি ভোট প্রার্থনা করেন। ২৯নং ওয়ার্ডের জাহাজঘাট এলাকা থেকে তিনি গণসংযোগ শুরু করেন। এরপর খোঁজাপুর, স্কুলমোড়, সাতবাড়িয়া, ডাঁশমারি, মিজানের মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় তিনি গণসংযোগ ও পথসভা করেন।


মাঠে থাকছেন ১০ ম্যাজিস্ট্রেট : রাসিক নির্বাচনকে সামনে রেখে ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ১৯ জুন পর্যন্ত তারা মাঠে থাকবেন। জেলা প্রশাসক ও ম্যাজিস্ট্রেট শামীম আহমেদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

শেয়ার করুন