৩০ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ০২:২১:৫৬ পূর্বাহ্ন
কুয়াকাটায় বিমানবন্দর নির্মাণে তোড়জোড়
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০২-২০২৪
কুয়াকাটায় বিমানবন্দর নির্মাণে তোড়জোড়

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটায় দ্রুত বিমানবন্দর নির্মাণের তাগিদ দিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে আগামী শুক্রবার সাইট পরিদর্শনে যাচ্ছেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বেবিচকের ৫ সদস্যের একটি টিম। বর্তমানে কুয়াকাটায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের একটি পরিত্যক্ত বিমানবন্দরসদৃশ জায়গা রয়েছে। তবে সেখানে কোনো ধরনের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা ও বিমান ওঠানামার জন্য রানওয়ে নাই।


মন্ত্রণালয়ের টিমকে সরেজমিন পরিদর্শন শেষে ওই জায়গাটিতে কীভাবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিমানবন্দর নির্মাণ করা যায় তার ওপর একটি মতামত ও সুপারিশ প্রদানের জন্য বলা হয়েছে।


বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, ১৯৯৮ সালে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে ঘোষণার পর কুয়াকাটায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে দেশি-বিদেশি পর্যটক। সেই সঙ্গে বেড়েছে হোটেল-মোটেলও। এ অবস্থায় এখানে একটি বিমানবন্দর নির্মাণের চিন্তাভাবনা করছে


সরকার। অর্থসংস্থান করতে পারলে এখানে দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি বিমানবন্দর নির্মাণ করব।


স্থানীয় সূত্র জানা গেছে, বর্তমানে রাতযাপনের জন্য এখানে প্রায় ১৭০টির বেশি আবাসিক হোটেল রয়েছে। যার ধারণক্ষমতা ২০ হাজারের অধিক। এগুলোর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ উন্নত চাহিদাসম্পন্ন প্রথম শ্রেণির। এই প্রথম শ্রেণির হোটেলগুলোতে অবস্থান করা বেশির ভাগ পর্যটকের সর্বপ্রথম চাহিদা বিমানবন্দর ও উন্নত সুযোগ-সুবিধা।


তাদের বক্তব্য, দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার বিস্তৃত এই সৈকত। সমুদ্র্রের গর্জন, উথাল-পাথাল ঢেউ, সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত, দীর্ঘতম সৈকত প্রতিনিয়তই আকৃষ্ট করছে দেশি-বিদেশি ভ্রমণপিপাসু দর্শনার্থীদের। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী সুখ্যাতি অর্জন করেছে সাগরকন্যাখ্যাত কুয়াকাটা। কিন্তু এখানে আন্তর্জাতিক মানের কোনো বিমানবন্দর না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পর্যটকরা।


এমন পরিস্থিতিতে বন্দর নগরী পায়রা ও কুয়াকাটায় যাতায়াত সুবিধা উন্নত করার জন্য এর আশপাশে বিমানবন্দর নির্মাণে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। বিমানবন্দরের স্থান নির্ধারণের জন্য তথ্য চেয়ে ইতোমধ্যে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) চিঠি দিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।


গত বছরের ২৩ নভেম্বর বেবিচককে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘পায়রা বন্দর নগরী ও কুয়াকাটা উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশ পর্যটনভিত্তিক সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প এলাকায় বিমানবন্দরের স্থান চিহ্নিতকরণের লক্ষ্যে তথ্য প্রেরণের জন্য নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গত বছরের ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভার সিদ্ধান্তের আলোকে এ তথ্য চাওয়া হয়। প্রকল্পটির সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিমানবন্দর স্থাপনের লোকেশন চিহ্নিতকরণের লক্ষ্যে তথ্য প্রেরণ করতে বলা হয়।


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু হওয়ার পর অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পায়রা বন্দরে মানুষের যাতায়াত অনেক বেড়েছে। এখানে সড়কপথের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলেও আকাশপথের কোনো ব্যবস্থা নেই। বিমানবন্দর হলে বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে।


জানা গেছে, কুয়াকাটাকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ বহু আগে শুরু হলেও মূলত ১৯৯৮ সাল থেকে এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের জন্য বিখ্যাত কুয়াকাটা সৈকত ধীরে ধীরে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠে। পর্যটকদের কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে অসংখ্য আবাসিক হোটেল, খাবার হোটেল। এ কারণে বেড়েছে প্রশাসনিক নিরাপত্তাব্যবস্থাসহ অন্য সুযোগ-সুবিধা। সৈকতের কোলঘেঁষে রয়েছে বিশাল বনাঞ্চল।


সুন্দরবনের পূর্বাংশ ফাতরার বন, লেম্বুর বন, নারকেলবাগান, ঝাউবাগান, গঙ্গামতী ও কাউয়ার চরের সংরক্ষিত বনাঞ্চল এর মধ্যে অন্যতম। পর্যটকরা কুয়াকাটায় বেড়াতে এসে আশপাশের পর্যটন স্পটগুলো ঘুরে দেখেন। পাশাপাশি সমুদ্রের কোলঘেঁষা বনাঞ্চল ঘুরে ছবি তোলেন। কিন্তু আকাশপথের সুযোগ না থাকায় দেশ ও বিদেশের পর্যটকরা আসছেন না। ফলে বিশ্বব্যাপী কুয়াকাটা ও পায়রা বন্দরকে পরিচিত করার জন্য বিমানবন্দরের বিকল্প নেই। বিমানবন্দর হলে খুব সহজেই বিদেশিরা এখানে আসবেন। সময় বাঁচাতে কিংবা প্রথম বিমানভ্রমণের স্বাদ পেতে আসা পর্যটকদের সংখ্যাও বাড়বে। ফলে কক্সবাজারের মতো এই অঞ্চলেরও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে।


শুধু তা-ই নয়, পটুয়াখালী এবং বরগুনা জেলার ৭টি উপজেলাকে অন্তর্ভুক্ত করে ‘পায়রা বন্দর নগরী ও কুয়াকাটা উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশ পর্যটনভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন’ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। প্রকল্পে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক, সামাজিক উন্নয়ন, জলবায়ুর প্রভাব, পরিবহন, পর্যটনসহ এসব বিষয় কেমন হওয়া উচিত- তা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ থাকবে। পরিকল্পনা প্রণয়নে উপকূলীয় এলাকার উপযোগী অবকাঠামো, আবাসন, পর্যটন, জীবিকা, সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হবে।


শেয়ার করুন