২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০১:১৬:১১ অপরাহ্ন
এবার স্বচ্ছভাবে পরীক্ষা নিতে নানা পদক্ষেপ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০২-২০২৪
এবার স্বচ্ছভাবে পরীক্ষা নিতে নানা পদক্ষেপ

রাজশাহী, খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগের ২২ জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা আজ শুক্রবার। ৩ হাজার ৭৭২টি পদের বিপরীতে এ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৩ জন চাকরিপ্রার্থী। প্রতি পদের জন্য লড়বেন ১১৭ জন। 


সকাল ১০টায় ৬০৩টি কেন্দ্রে একযোগে এক ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষা (এমসিকিউ) অনুষ্ঠিত হবে। লিখিত পরীক্ষার কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনতে ও কক্ষ পরিদর্শকদের (ইনভিজিলেটর) সঙ্গে চাকরিপ্রার্থীদের যোগসাজশ ঠেকাতে প্রথমবারের মতো লটারির মাধ্যমে কক্ষ নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। 


এতে পরীক্ষা শুরুর ২০ মিনিট আগে কেন্দ্রপ্রধান, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের (এটিইও) উপস্থিতিতে সব শিক্ষকের নাম একত্র করে লটারির মাধ্যমে কক্ষ বরাদ্দ করা হবে। লটারি অনুযায়ী শিক্ষকরা নির্দিষ্ট কক্ষে পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করবেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।


এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহম্মদ বৃহস্পতিবার সমকালকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কক্ষ পরিদর্শকদের লটারির মাধ্যমে কক্ষ নির্ধারণ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত এবারই প্রথমবারের মতো নিয়েছি আমরা। এর কারণ হলো– অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ হলেও পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে একশ্রেণির কক্ষ পরিদর্শকের গোপন আঁতাত হতো। তারা নির্দিষ্ট কক্ষে দায়িত্ব নিয়ে নির্দিষ্ট প্রার্থীদের টাকার বিনিময়ে উত্তর বলে দিতেন। এই অপকর্ম ঠেকাতেই লটারির মাধ্যমে কক্ষ পরিদর্শকদের দায়িত্ব বণ্টন করতে নির্দেশ দিয়েছি।’ 


 


সচিব বলেন, পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে প্রতারকদের সঙ্গে গুটিকয়েক পরীক্ষার্থীর অবৈধ লেনদেনের খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বৃহস্পতিবার কয়েকজনকে আটক করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। স্বচ্ছতার সঙ্গে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠানে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। পরে মন্ত্রণালয় জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে জয়পুরহাটের এক অধ্যক্ষও রয়েছেন। 


প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, মোট ৯ হাজার ৩৫৭টি কক্ষে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কক্ষের আকার অনুসারে কোথাও দুইজন, আবার কোথাও চারজন কক্ষ পরিদর্শক দায়িত্ব পালন করে থাকেন।


প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত সমকালকে জানান, সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠানে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকরা নিজ নিজ জেলার সব পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। এবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সব কর্মকর্তাকে বিভিন্ন জেলায় মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলায় পৌঁছে গেছেন।


জানা গেছে, এবার প্রথমবারের মতো প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষায় বিদ্যোৎসাহী সদস্যের নামে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিকে ভাইভা বোর্ডে রাখা হচ্ছে না।

এমনকি মৌখিক পরীক্ষায় ২৫ নম্বরের মধ্যে প্রার্থী শিক্ষাগত সনদের ফলের ওপর পাবেন ১০ নম্বর। বাকি ১৫ নম্বরের মধ্যে সর্বনিম্ন ৬ এবং সর্বোচ্চ ১৪ নম্বর দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া প্রার্থীর অবশ্যই শিক্ষাজীবনের প্রতিটি পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি থাকতে হবে। 


প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, সরকারি চাকরি পেতে একশ্রেণির চাকরিপ্রার্থী নানা অসদুপায় অবলম্বনের পথ বেছে নেন। তারা প্রশ্ন ফাঁস, কক্ষ পরিদর্শকের সঙ্গে টাকার লেনদেন, ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে জালিয়াতির আশ্রয় নিতে চান। এক সময় প্রায় প্রতিবারই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। গত বছরও প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের ৬০ সদস্যকে আটক করা হয়েছিল। তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের কাজে নিয়োজিত বিশেষ ধরনের ডিভাইসসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।


আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তারা স্বীকার করেন, তারা চাকরিপ্রত্যাশীদের খুঁজে বের করে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে পরীক্ষায় পাস করানো এবং চাকরি পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিত। আগ্রহী পরীক্ষার্থীদের ডিজিটাল ডিভাইস দেওয়া হতো এবং তাদের কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে ১-২ লাখ টাকা জামানত নেওয়া হতো। 


প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে বুয়েটের কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে তাদের প্রিন্টিং প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র ছাপানো হয়েছে। প্রতি জেলায় একটি করে মোট ১৮ সেট প্রশ্ন প্রণয়ন করার পর সেখান থেকে দৈবচয়নের মাধ্যমে একজন কর্মকর্তাকে প্রশ্নপত্র তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বাইরের। ওই প্রশ্নকারী কর্মকর্তাকে সেলফোনসহ সব ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইসমুক্ত করে একটি নির্দিষ্ট কক্ষে অন্তরীণ রাখা হয়েছে। পরীক্ষা পর্যন্ত তাকে এ অবস্থায় রাখা হবে।


সচিব জানান, পরীক্ষা শুরুর মাত্র ১৫ মিনিট আগে বুয়েটের নির্দিষ্ট কোড পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে প্রশ্নপত্রের ট্রাঙ্কের সিলগালা খোলা হবে। এ সময় মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা থাকবেন। পরীক্ষার পর মাত্র ১০ কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে। এর এক মাসের মধ্যে মৌখিক পরীক্ষা হবে।


জালিয়াত চক্রের চার সদস্য গ্রেপ্তার


লিখিত পরীক্ষায় ২০-২৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে টিকিয়ে দেওয়ার নিশ্চয়তার অভিযোগে জয়পুরহাট জেলা পুলিশ জালিয়াত চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি কৃষি কলেজের অধ্যক্ষ রুস্তম আলীও রয়েছেন। আরও আছেন ইশান ইমতিয়াজ ও গোকুল। এ ছাড়া কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের রোকনুজ্জামান নামে একজনকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। 


প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত লিখিত পরীক্ষার প্রাক্কালে জালিয়াত চক্রের এ ধরনের প্রলোভনে কান না দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। জালিয়াত চক্রের কোনো তৎপরতার সন্ধান পাওয়া গেলে নিকটস্থ থানায় অভিযোগের পরামর্শ দেন তিনি।


শেয়ার করুন