২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৩:৩৬:০১ অপরাহ্ন
রাজশাহী-৩ আসনে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে তাঁতী লীগ নেতা!
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০১-২০২৪
রাজশাহী-৩ আসনে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে তাঁতী লীগ নেতা!

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর্যবেক্ষক সংস্থায় স্থান পেয়েছে রাজশাহীর এক তাঁতী লীগ নেতার সংস্থা। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) চূড়ান্ত তালিকায় স্বাস্থ্য শিক্ষা সেবা ফাউন্ডেশন (সেফ) নামে এই সংস্থাটিকে দেখা গেছে। সংস্থাটি রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য মনোনীত হয়েছে।


ইসি এই সংস্থার চারজনকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ দিচ্ছে। এই সংস্থার কোনো অফিস নেই। সংস্থাটির নির্বাহী প্রধানের নাম রুপন কুমার দত্ত। রাজশাহীতে তিনি আর কে দত্ত নামে পরিচিত। রাজশাহী মহানগর তাঁতী লীগের ৩ নম্বর সহসভাপতি তিনি। তেমন কোনো কার্যক্রম না থাকলেও সংস্থাটি সরকারি ও বিদেশি অনুদান পেয়ে থাকে।


একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্যও তালিকাভুক্ত হয়েছিল সেফ। এবার আবার আবেদন করা হয়। পরে প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করে ইসি। কোনো সংস্থার বিষয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে তা জানাতে বলা হয়।


গত ৯ আগস্ট আজকের পত্রিকার অনলাইনে ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষণ: ইসির প্রকাশিত তালিকায় তাঁতী লীগ নেতার সংস্থা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। এখন চূড়ান্ত তালিকাতেও সেফকে দেখা যাচ্ছে।


নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা-২০১৭-এ বলা আছে, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন বা বর্তমানে আছেন—এ রকম কোনো ব্যক্তি কোনো সংস্থার প্রধান কিংবা পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হলে এই সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে নিবন্ধন করা হবে না। অথচ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ পেয়েছে তাঁতী লীগ নেতা রুপনের সংস্থা।


নির্বাচন পর্যবেক্ষণ: ইসির প্রকাশিত তালিকায় তাঁতী লীগ নেতার সংস্থানির্বাচন পর্যবেক্ষণ: ইসির প্রকাশিত তালিকায় তাঁতী লীগ নেতার সংস্থা

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রুপনের সেফ নামে এই সংস্থার তেমন কোনো কার্যক্রমই নেই রাজশাহীতে। সংস্থার প্রধান তাঁতী লীগ নেতা রুপন রাজশাহী নগরীর শাহমখদুম কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক হিসেবে চাকরি নিয়েছিলেন ২০১১ সালে। এমপিও করার সময় ধরা পড়ে তাঁর শিক্ষক নিবন্ধন সনদ ছিল জাল। জাল সনদে এমপিও করতে না পেরে ২০১৮ সালে চাকরি থেকে ইস্তফা দেন রুপন। এখন কলেজের সামনে একটি ওষুধের দোকান চালান। সেখানে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাও দেন।


ইসিতে আবেদন করা রুপনের সংস্থার ঠিকানা দেওয়া হয়েছে রাজশাহী নগরীর বেলদারপাড়া এলাকা। বেলদারপাড়া মোড়েই একটি দোতলা বাড়ির নিচতলায় স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া থাকেন রুপন। ওই বাড়ির নিচতলায় ‘অর্পিতা বিউটি স্পা’ নামে একটি সাইনবোর্ড, তবে সেফের কোনো সাইনবোর্ড নেই। এ বাড়িটিকেই সেফের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে।


দলীয় পদে থাকার পরেও নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধন নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে রুপন দত্ত বলেন, ‘আমি আগে জানতাম না যে দলে পদে থাকলে পর্যবেক্ষক হওয়া যাবে না। পরে জেনেছি। ছাত্রজীবনে আমি পদ ছাড়াই রাজশাহী কলেজে ছাত্রলীগ করেছি। সে জন্য আমাকে সম্মান করে তাঁতী লীগের পদ দেওয়া হয়েছে। তবে আমি সেভাবে দলীয় সভায় যাই না। আমি নিষ্ক্রিয় বলতে পারেন।’


রুপন বলেন, ‘আমার সংস্থা পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধন পেয়েছে। কিন্তু আমরা তো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করব না। টাকা দেবে না, পয়সা দেবে না—কে এই কাজ করতে যাবে? পর্যবেক্ষণ করতে হলে চারটা ছেলেকে কাজ করাতে হবে। তাদের কিছু হলে কে দায়-দায়িত্ব নেবে? আমি নিজেও অসুস্থ। সবমিলিয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে যাব না।’


রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনের নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে আরও ৯টি সংস্থাকে সুযোগ দিয়েছে ইসি। রাজশাহীতে এসব সংস্থার কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না। খোঁজখবর নিয়ে কোথাও কারও অফিস আছে, এ রকম তথ্যও পাওয়া যায়নি।


শেয়ার করুন