২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০১:৩৪:৩৯ অপরাহ্ন
কপ–২৮জীবাশ্ম জ্বালানি কমানোর প্রথম চুক্তি করল বিশ্ব
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-১২-২০২৩
কপ–২৮জীবাশ্ম জ্বালানি কমানোর প্রথম চুক্তি করল বিশ্ব

জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো শুরু করার বিষয়ে সম্মত হয়ে একটি চুক্তি করেছে জাতিসংঘের কপ২৮ জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর প্রতিনিধিরা। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এড়াতে এটিই এ ধরনের প্রথম চুক্তি। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। খবর রয়টার্সের।


বিজ্ঞানীরা অনেক দিন ধরে বলছেন, জলবায়ুগত অভিঘাতগুলো প্রশমনে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করাই শেষ ও সবচেয়ে জুতসই উপায়। তবে তেলনির্ভর দেশ ও শিল্পায়িত বড় দেশগুলোর নানা অজুহাতে সেটা সম্ভব হচ্ছিল না। অবশেষে এবার জীবাশ্ম জ্বালানির বিষয়ে একটা ঐকমত্যে পৌঁছাল বিশ্ব।


অংশগ্রহণকারী প্রায় ২০০ দেশের প্রতিনিধিরা দুই সপ্তাহ ধরে ব্যাপক তর্কবিতর্ক ও আলোচনার পর কার্বন নিঃসরণকারী জ্বালানির ব্যবহার হ্রাসে সমঝোতায় পৌঁছান। গতকাল বুধবার এ লক্ষ্যে একটি চুক্তিতে সইও করেন তাঁরা।


বিশ্লেষকরা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করার ইচ্ছা নিয়ে বিশ্ব এখন অনেকটাই ঐক্যবদ্ধ। এ চুক্তি থেকে বিনিয়োগকারী ও নীতিনির্ধারকদের কাছে এ বিষয়ে একটা শক্তিশালী বার্তা যাবে বলে তাঁরা মনে করছেন।


কপ২৮-এর সভাপতি আমিরাতের সুলতান আল জাবের এ চুক্তিকে ‘ঐতিহাসিক’ উল্লেখ করে বলেন, এর সত্যিকার সফলতা নির্ভর করছে যথাযথ বাস্তবায়নের ওপর।  ‘আমরা যা বলি তা নয়, আমরা যা করি সেই পর্যায়ে পৌঁছেছি’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এই চুক্তিকে বাস্তবায়নযোগ্য কাজে পরিণত করতে আমাদের অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।’


নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস্পেন বার্থ আইদা বলেন, ‘জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে এই প্রথম সুস্পষ্ট একটি প্রস্তাবকে ঘিরে বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এটি একটি সমস্যা ছিল। শেষ পর্যন্ত আমরা এর মোকাবিলা করতে পেরেছি।’


রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, তেল, গ্যাস ও কয়লার ব্যবহার ‘ধাপে ধাপে বন্ধ করার’ বিষয়ে কপ২৮-এর চুক্তিতে কঠোর ভাষা ব্যবহারের জন্য শতাধিক দেশ ব্যাপক তদবির করেছিল, কিন্তু সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন তেল রপ্তানিকারী দেশগুলোর জোট ওপেকের তীব্র বিরোধিতার মুখে তারা ছাড় দিতে বাধ্য হয়। বিশ্ব নির্দিষ্ট জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করা ছাড়াই দূষণ কমাতে পারে বলে যুক্তি ওপেকের।


অন্যদিকে জলবায়ুর অভিঘাতে নাজুক দ্বীপরাষ্ট্র ও ছোট দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে পর্যায়ক্রমে সরে আসার বিষয়ে সবচেয়ে সোচ্চার ভূমিকা রাখে। আর তাতে সমর্থন জোগায় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, নরওয়ে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ এবং অন্য দেশের সরকারগুলো।


চুক্তি গৃহীত হওয়ার পর মার্কিন জলবায়ু দূত জন কেরি বলেন, ‘এটি এমন এক মুহূর্ত যেখানে বহুপাক্ষিকতা একসঙ্গে মিলেছে এবং শেষ পর্যন্ত সবার মঙ্গল নিশ্চিতে আমরা নিজস্ব স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠেছি।’


তবে ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জোটের প্রধান আলোচক অ্যানি রাসমুসেন এই চুক্তিকে ‘উচ্চাভিলাষী নয়’ বলে সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের যখন সত্যিই নিজেদের কাজে পরিবর্তন আনতে বড় ধরনের পদক্ষেপ প্রয়োজন, তখন উল্টো গতানুগতিক কাজেই আমাদের বেশি অগ্রগতি ঘটেছে, ঘটছে।’ যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি চুক্তির বিরোধিতা করেননি।


প্রস্তাবিত চুক্তিতে বিজ্ঞান নির্দেশিত পথের সংগতি রেখে বিশ্বের জ্বালানিব্যবস্থায় জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে দূরে সরে আসার বিষয়ে সঠিক, সুশৃঙ্খল ও ন্যায়সংগতভাবে আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে এতে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের নবায়নযোগ্য জ্বালানি সক্ষমতা তিন গুণ করারও ডাক দেওয়া হয়েছে। এবার দেশগুলোর জাতীয় নীতি ও বিনিয়োগে চুক্তিতে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের পালা।


শেয়ার করুন