৩০ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ১২:৫৭:৪৩ পূর্বাহ্ন
ফুলে ফেঁপে উঠেছেন রাজশাহীর ৬ এমপির স্ত্রী-সন্তানরাও
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-১২-২০২৩
ফুলে ফেঁপে উঠেছেন রাজশাহীর ৬ এমপির স্ত্রী-সন্তানরাও

গত পাঁচ বছরে ফুলে ফেঁপে উঠেছেন রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনের ছয় সংসদ সদস্য। কেউ কিনেছেন জমি, কেউ কিনেছেন পুকুর। কেউ আবার ব্যাংকে গড়েছেন টাকার পাহাড়, কেউ করেছেন অট্টালিকা। কারও কারও স্ত্রী-সন্তানদের সম্পদও বেড়েছে কয়েকগুণ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেয়া হলফনামায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।


পাঁচ বছর আগে রাজশাহী-১ গোদাগাড়ী-তানোর আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যাংক একাউন্টে কোনো টাকা ছিল না। তবে এখন তার ব্যাংকে রয়েছে ৮ কোটি ৯৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। গত পাঁচ বছরে সরকারদলীয় এই সংসদ সদস্যের ব্যাংক হিসাব শুধু ফুলে ফেঁপে ওঠেনি সম্পদশালী হয়েছেন স্ত্রী সন্তানরাও। এ ছাড়া তার হাতে এখন নগদ আছে ৮৬ লাখ টাকা।


২০১৮ সালে ছিল ৯০ লাখ। তবে ২০১৩ সালে ছিল মাত্র ৬২ হাজার টাকা। বর্তমানে তার ৭০ বিঘা কৃষি জমি, দুটি দামি গাড়ি, স্বর্ণালংকারসহ কয়েক কোটি টাকার সম্পদ দেখানো হয়েছে যার অধিকাংশই কৃষি ও ব্যবসা খাত থেকে। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো নৌকার প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তৃতীয়বারের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী।


গত পাঁচ বছরে ব্যাংকের টাকা বেড়ে পাঁচগুণ হয়েছে রাজশাহী-২ সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ২০০৮ সাল থেকে ৩ বার এমপি নির্বাচিত হন। এবারও ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।


২০১৮ সালের নির্বাচনে বাদশা তার ব্যাংক হিসাবে দেখিয়েছিলেন ২৫ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। এখন তার ব্যাংকে আছে এক কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আগে ৫৪ লাখ টাকার দুটি গাড়ি থাকলেও এখন একটি জিপের দাম ৭০ লাখ টাকা। এ ছাড়া হাতের নগদ ২৬ লাখ টাকাসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি।


রাজশাহী-৩ পবা-মোহনপুর আসনের সংসদ আয়েন উদ্দিন গত পাঁচ বছরে এলাকায় জমি কিনেছেন ৭৫ বিঘা। তিনি ২০১৪ ও ২০১৮ সালে দুবার এমপি নির্বাচিত হলে ভাগ্য খুলে যায়। তবে এবার দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।


তার হলফনামায় দেখা গেছে, ২০১৮ সালে আয়েন উদ্দিনের নামে চার লাখ টাকা দামের দুই বিঘা কৃষি জমি ছিল। এখন তার জমির পরিমাণ ৭৭ বিঘা। আয়েন তার জমির মূল্য দেখিয়েছেন তিন কোটি ২৭ লাখ টাকা। রাজধানীর পূর্বাচলে তিন কাঠার প্লট, স্ত্রীর নামের ৮৬ লাখ টাকার দুটি ফ্ল্যাট, সঞ্চয়পত্রসহ আর কোটি টাকার সম্পদ আছে তার।


গত পাঁচ বছরে রাজশাহী-৪ বাগমারা আসনের সংসদ সদস্য এনামুল হকের বেড়েছে ব্যাংকে টাকার পরিমাণ।


হলফনামায় এনামুল দেখান, হাতে এখন তার নগদ আছে ২৫ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে ছিল ৩৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। তবে এবার স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই ব্যাংকের টাকা, সঞ্চয়পত্র, বন্ডসহ প্রায় ১৫ কোটি টাকার সম্পদ দেখানো হয়েছে হলফনামায়। আর আয়ের উৎস হিসেবে তিনি দেখান ব্যবসা। এনামুল হক ২০০৮ সাল থেকে টানা তিনবার নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে এবার দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।


রাজশাহী-৫ পুঠিয়া-দুর্গাপুর আসনের এমপি ডা. মনসুর রহমান বিগত পাঁচ বছরে টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ডা. মনসুর ২০১৮ সালে প্রথমবার এমপি হন। তবে এবার মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।


তার হলফনামায় দেখা গেছে, পাঁচ বছরে তার বার্ষিক আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৫৭ গুণ। শিক্ষকতা, শেয়ার ও চাকরি থেকে মনসুর রহমান তার বার্ষিক আয় দেখান ১৪ লাখ ৯ হাজার টাকা। এখন তার বার্ষিক আয় ৯২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এ ছাড়া কৃষিখাত, দোকান ভাড়া, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র থেকে বছরে কোটি টাকার আয় দেখান তিনি। ২০১৮ সালে তার ব্যাংকে ছিল ১৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে দুই কোটি ১৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। এ ছাড়া স্ত্রীর নামে পুকুর জমিজমা থেকে শুরু করে বিভিন্ন উৎস থেকে কোটি টাকার আয় দেখান।


রাজশাহী-৬ চারঘাট বাঘা আসনের এমপি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের পাঁচ বছরে আয় বেড়েছে আড়াইগুণের বেশি। তিনি ২০০৮ সাল থেকে পর পর তিনবার এমপি নির্বাচিত হন। এবারও দলের মনোনয়ন পেয়েছেন।


২০১৮ সালে তার বার্ষিক আয় ছিল ৩ কোটি ৪ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। এখন তা আড়াইগুণেরও বেশি বেড়ে হয়েছে ৭ কোটি ৯২ লাখ ৯১ হাজার টাকা। হাতে নগদ টাকাও বেড়েছে তিনগুণের বেশি। ২০১৮ সালে নগদ ছিল ৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এখন আছে ২১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। শাহরিয়ার আলমের শেয়ার আছে ৬৬ কোটি ৪১ লাখ টাকার। আগে ছিল ৫৮ কোটি ৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া গাড়ি বাড়িসহ স্ত্রী সন্তানদের নামে রয়েছে কয়েকশ কোটি টাকার সম্পদ।


এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা শামিম আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচন করতে গেলে কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। তার মধ্যে হলফনামা একটি। প্রার্থীদের স্বচ্ছতা জবাবদিহির জায়গাটা নিশ্চিত করতে এ হলফনামা নেয়া হয়।’


গত ৩ ডিসেম্বর যাচাই-বাছাই শেষে এই ছয় সংসদ সদস্যের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৭ ডিসেম্বর প্রত্যাহার, ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ ও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৭ জানুয়ারি। সূত্র-সময় সংবাদ

শেয়ার করুন