২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০১:০৬:১০ পূর্বাহ্ন
ভ্যাট ট্যাক্সের ৯ কোটি টাকা আদায় করেনি ইফা
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-১১-২০২৩
ভ্যাট ট্যাক্সের ৯ কোটি টাকা আদায় করেনি ইফা

বায়তুল মোকাররম মার্কেটের দোকান ভাড়ার ওপর ১৫ বছর ভ্যাট ও ট্যাক্স আদায় করেনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা)। ব্যবসায়ীরাও নিজ উদ্যোগে এ খাতের প্রায় ৯ কোটি টাকা পরিশোধ করেনি।

দোকানের আপগ্রেডেড কোনো ডেটাবেজ নেই। ফলে মার্কেটে কতটি দোকান, তাও পরিষ্কার করে বলতে পারছেন না ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের অফিস বলছে, ইজারা, সালামি বা ভাড়া-যাই দেওয়া হোক, তার ওপর ভ্যাট ও ট্যাক্স আদায় করতেই হবে। ইজারামূল্য বা ভাড়ার ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট এবং ৫ শতাংশ হারে ট্যাক্স আদায় করে তা সরকার নির্ধারিত কোডে জমা দিতে হবে।

অপরদিকে ইফার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ইজারামূল্যের ওপর ভ্যাট ও ট্যাক্স আদায় করতে হবে কি না, তা পরিষ্কার নয়। তাদের যুক্তি, সালামির বিনিময়ে দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ভাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনের রাজস্ব আয় হিসাবে গণ্য হয়।

সুতরাং এ খাত থেকে ভ্যাট ও ট্যাক্স আদায়ের কোনো সুযোগ নেই। এত বিপুল পরিমাণ অর্থ অনাদায়ি থাকলেও সংস্থাটির উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে বায়তুল মোকাররম মার্কেটের ২২৩টি দোকান ইজারা দেওয়া হয়। এর মধ্যে এ ক্যাটগরির ৯টি, বি ক্যাটাগরির ২০টি, সি এবং ডি ক্যাটগরির ৩৬টি, ই-ক্যাটাগরির ২৮টি এবং এফ ক্যাটগরির ১২০টি দোকান রয়েছে।

২০০৯-২০১০ থেকে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছর পর্যন্ত ইজারামূল্যের ওপর বা ভাড়ার ওপর ১৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন করা বা ভ্যাট এবং ইজারাদারের কাছ থেকে ৫ শতাংশ হারে ট্যাক্স আদায় করা হয়নি। ফলে সরকারের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৯ কোটি ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৫২৪ টাকা।

মূল্য সংযোজন আইন ১৯৯১-এর সেবা কোড ঝ০৩৩.০০ মোতাবেক ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায়ের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এছাড়া আয়কর আইন, ১৯৮৪-এর সেকশন ৫৩সি রুল-ডি মোতাবেক ইজারাদারের কাছ থেকে ৫ শতাংশ ট্যাক্স আদায়যোগ্য। উল্লিখিত বিধিবিধান অনুসরণ না করায় সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্বপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হলো, যা গুরুতর আর্থিক অনিয়ম হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

মার্কেটটির কোটি কোটি টাকা বকেয়া ভাড়া আদায়ের দৃশ্যমান তেমন কোনো উদ্যোগ নেই বলে জানান সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা। মার্কেটের দোকানের ভাড়া প্রতি স্কয়ার ফুটে মাত্র ১৫, ২৫ ও ৩০ টাকা; যা আশপাশের অন্য যে কোনো মার্কেটের ভাড়ার চেয়ে অনেক কম।

মার্কেটের ভেতরের দুই দোকানের মাঝখানে ক্রেতাদের হাঁটার জায়গায় হকার বসানো হয়েছে। ইজারাগ্রহীতা বা ভাড়াটিয়ারা হকারদের কাছ থেকে দৈনিক ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা ভাড়া নিচ্ছেন।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মার্কেটের দোকান ভাড়া আদায়ের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কাজ হচ্ছে সব দোকানের ডেটাবেজ তৈরি করা। দোকান নম্বর, দোকানের ধরন, ইজারাগ্রহীতার নাম ও ফোন নম্বর, মাসিক ভাড়া কত, কত মাস বকেয়া, ভ্যাট ও ট্যাক্স আদায় করা হয়েছে কি না, তা উল্লেখ করে সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা।

তিনি আরও জানান, অধিকাংশ দোকানের ভাড়া নিয়মিত আদায় হয় না। ভাড়া আদায়ের চালান কপি ইফার প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হলেও ব্যাংক স্ট্যাটমেন্ট সঙ্গে দেওয়া হয় না। ফলে দোকান ভাড়া পরিশোধের ভুয়া চালান ইফার প্রধান কার্যালয়ে পাঠানোর ঘটনাও ঘটতে পারে বলে তিনি সংশয় প্রকাশ করেন।

ইফার মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মো. বশিরুল আলম যুগান্তরকে বলেন, ফাইলপত্র না দেখে কিছু বলতে পারছি না। দোকান ভাড়া অনাদায়ী থাকার বিষয়টি স্বীকার করে ডিজি জানান, অনেকের কাছে বকেয়া আছে। আবার আদায়ও হচ্ছে। তবে ভাড়া নিয়মিত আদায় করা দরকার বলে তিনি জানান।

মার্কেটের ভেতরে ক্রেতাদের হাঁটার জায়গায় হকার বসানোর বিষয়ে বলেন, বিষয়টি তিনি ভালো জানেন না। সাব-লিজ দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। এ বিষয়ে তিনি খোঁজখবর নেবেন বলে জানান। এ সময় ইফার অডিট ও মার্কেট বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিয়ে বলেন, তারা এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ডেস্ক অফিসার। তারা ভালো বলতে পারেবেন।

বায়তুল মোকাররম মার্কেটের সেক্রেটারি ডা. রঞ্জন কুমার রায় যুগান্তরকে বলেন, ইফা তাদের ভ্যাট ও ট্যাক্স পরিশোধের বিষয়ে ব্যবসায়ীদের কোনো কিছুই জানায়নি। মার্কেটের ভেতরে হকার বসানোর বিষয়ে সেক্রেটারি জানান, ভেতরে কোনো হকার নেই, তবে মূল দোকানিরাই মালামাল দোকানের বাইরে রাখছেন। এভাবে রাখা ঠিক না বলে জানান তিনি।

তিনি আরও জানান, ইফা ভাড়া নিচ্ছে ঠিকই; কিন্তু সংস্থটির কোনো পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেই। নেই কোনো গার্ডও। এমনকি একটিমাত্র সাব-স্টেশন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। রঞ্জর রায় আরও বলেন, মার্কেট কমিটি সব সময় অবৈধ দোকান উচ্ছেদে তৎপর। তবে ইফাকে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিষয়টি শেষ পর্যন্ত নিরীক্ষা করে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অফিস, যা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কমপ্লায়েন্স অডিট রিপোর্ট নামে প্রকাশ করে সংস্থাটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার প্রভৃতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ অনাদায়ি রাখা হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) ডিজি এবং ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে দফায় দফায় চিঠি দিয়েও তাদের কাছ থেকে কোনো সন্তোষজনক জবাব পাওয়া যায়নি।

সব শেষ ২০২১ সালে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ইফার ডিজিকে চিঠি দিয়ে দ্রুত অর্থ আদায়ের ব্যবস্থা করতে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

ইফার উপপরিচালক সারওয়ার আলম যুগান্তরকে বলেন, এখানে আমার পোস্টিং নতুন। ফাইল না দেখে কিছুই বলতে পারব না। পরিচালক আবু সাঈদ যুগান্তরকে বলেন, ভ্যাট ও ট্যাক্সের টাকা আদায় না হওয়ার বিষয়টি আমার অজানা। মার্কেটের ভেতরে যেসব হকার বসছে, তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিচালক (অডিট) হাজেরা খাতুনের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি জানান, ইফায় আমরা কেউ কথা বলি না। ডিজি সাহেব কথা বলেন।

শেয়ার করুন