৩০ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৯:১১:১৮ অপরাহ্ন
তফসিল ঘিরে সতর্কতা, গণগ্রেপ্তার এড়াতে চায় পুলিশ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-১১-২০২৩
তফসিল ঘিরে সতর্কতা, গণগ্রেপ্তার এড়াতে চায় পুলিশ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করছে পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তাদের ধারণা, তফসিল ঘোষণা হলেই নাশকতাকারীরা আরও বাস পুড়িয়ে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইবে। নির্দেশদাতাসহ বিরোধীদের গ্রেপ্তার করতে গেলে পুলিশের বিরুদ্ধে গণহারে গ্রেপ্তারের অভিযোগ তুলবে। তাই গণগ্রেপ্তার এড়িয়ে নাশকতার মামলায় সুনির্দিষ্ট আসামি করে তাদের আইনের আওতায় আনতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 


গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে মাঠপর্যায়ের সদস্যদের এসব বার্তা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের সদর দপ্তরে দুপুরে তিন ঘণ্টা ধরে অভ্যন্তরীণ এক বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের পর থেকে অবরোধ-হরতালে পুলিশের ভূমিকা ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা বিষয়ে আলোচনা হয়। 


বৈঠকে থাকা কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আলোচনায় অতিরিক্ত কমিশনার ও যুগ্ম কমিশনাররা দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। চলমান পরিস্থিতিতে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে মনোবল শক্ত রাখতে বলেন পুলিশ কমিশনার। কর্মকর্তারা জানান, এখনো পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তাঁদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। 


বৈঠকে উপস্থিত থাকা গোয়েন্দা শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, তফসিলের পরবর্তী সময়ে করণীয় সম্পর্কে বিশেষ এই বৈঠকে একজন অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, যারা নাশকতার সঙ্গে সরাসরি জড়িত, শুধু তাদেরকেই আসামি করে গ্রেপ্তার করা দরকার। পুলিশের অভিযান যেন কোনোভাবেই গণগ্রেপ্তার পর্যায়ে চলে না যায়। তাহলে সমালোচনা হবে। 


বৈঠকে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, রাজনৈতিক মামলায় কোনোভাবেই পুলিশের কোনো সদস্য যেন আর্থিক সংশ্লিষ্টতায় না জড়ান। সে বিষয়ে সবাইকে পেশাদারি মনোভাব বজায় রাখতে হবে।


বৈঠক সূত্র বলছে, আজ তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে পুলিশকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী আজ থেকে মাঠে আরও সতর্ক অবস্থায় থাকবে পুলিশ। বৈঠকে গত কয়েক দিনে নাশকতা আর হামলার বিবরণ প্রদর্শন করে দেখানো হয়, ২৮ অক্টোবরের পর থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশের আট বিভাগে ৬২টি বাস পুড়িয়েছে দুর্বৃত্তরা। 


এসব নাশকতা ও গাড়ি পোড়ানোর বিশ্লেষণ উপস্থাপনায় দেখানো হয়, সন্ধ্যার পর এবং ভোরে এসব বাসে আগুন লাগানো হয়েছিল। তিনটা পদ্ধতিতে বাসে আগুন দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। থেমে রাখা গাড়িতে, যাত্রী বেশে গাড়িতে উঠে, আর কোথাও কোথাও মোটরসাইকেল নিয়ে এসে গাড়িতে আগুন দিয়ে চলে যায়। এদের মধ্যে অনেককেই সরাসরি গ্রেপ্তার করা যায়নি। এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়েই পরবর্তী পরিকল্পনা সাজানোর কথা বলা হয়েছে। 


একটি সূত্র জানায়, বৈঠকে আলোচনা হয়েছে তফসিলের পর এমন চোরাগোপ্তা হামলা আরও বাড়তে পারে। সতর্কতা হিসেবে যে যে সড়কে বেশি আগুন লাগানো হচ্ছে, সেখানে পুলিশের পক্ষ থেকে ড্রোন উড়ানো হবে। আর সড়কে চলা বাসগুলোতে ক্যামেরা বসানো হবে। গতকালই পরীক্ষামূলকভাবে রমনা বিভাগ এলাকায় চারটি পয়েন্টে ড্রোন ওড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। 


বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, তফসিলের পর বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধির আশঙ্কা করেই পুলিশ সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছে। নাশকতাকারী কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। 


বাসে ক্যামেরা বসানো ও ড্রোন ওড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে বিপ্লব কুমার বলেন, ‘নিরাপত্তার অংশ হিসেবে বাসমালিকদেরই ক্যামেরা বসানো উচিত। তারপরও পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের জানানো হবে। পুরো শহরে ড্রোন উড়িয়ে অপরাধ থামানোর সক্ষমতা আমাদের এখনো হয়নি। তবে আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি।’ 


শেয়ার করুন