২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০৮:৫৮:৪৫ অপরাহ্ন
নিরাপত্তায় আনসারের বিশেষায়িত ব্যাটালিয়ন
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-১০-২০২৩
নিরাপত্তায় আনসারের বিশেষায়িত ব্যাটালিয়ন

বিদেশি কূটনীতিকদের গমনাগমনের নিরাপত্তায় এসকর্ট সুবিধা দিতে প্রস্তুত আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। এরই মধ্যে এই বাহিনীর একটি বিশেষায়িত ব্যাটালিয়নের (এজিবি) সদস্যরা ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের নিরাপত্তার দায়িত্বে কাজ           শুরু করেছে। এক সপ্তাহ আগে মার্কিন দূতাবাস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর দুই দিনের বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের পর গতকাল থেকে কাজ শুরু করেছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, সম্প্রতি রাষ্ট্রদূতদের নিরাপত্তায় পুলিশের দেওয়া রুট   প্রোটেকশন উঠিয়ে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে আনসার বাহিনীর মহাপরিচালকের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের পর গত ১৮ মে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নোট ভার্বাল দেয় মন্ত্রণালয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, কোনো কূটনৈতিক মিশন যদি রাষ্ট্রদূতদের জন্য ভেহিকুলার মুভমেন্ট এবং রুট প্রোটেকশপন নিরাপত্তায় দক্ষ ব্যাটালিয়ন আনসার নিয়োজিত করতে চায়, তবে তারা সে সুবিধা নিতে পারবে। তবে প্রতি মাসে প্রশিক্ষিত সশস্ত্র ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যদের অপারেশনাল কন্টিনজেন্সি হিসেবে ৩০০ ডলার করে দিতে হবে দূতাবাসগুলোকে। এর ধারবাহিকতায় ১১ অক্টোবর সকালে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং মার্কিন দূতাবাসের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। তাতে মার্কিন দূতাবাসের পক্ষে আঞ্চলিক নিরাপত্তা কর্মকর্তা ডাসটিন ডুং এবং বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর পক্ষে পরিচালক (অপারেশন্স) সৈয়দ ইফতেহার আলী স্বাক্ষর করেন। জানা গেছে, বিদেশি দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর বিশেষায়িত ব্যাটালিয়ন-এজিবিকে। এই ব্যাটালিয়নের সদস্যরা কুইক রেসপন্স প্রশিক্ষণ (কিউআরটি), স্পেশাল ট্যাকনিক্যাল প্রশিক্ষণ (এসটিটি) ও স্পেশাল প্রোটেকশন প্রশিক্ষণ (এসপিটি), বিশেষ অস্ত্র ও ট্যাকটিক্যাল প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বর্তমানে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে একটি গার্ড ব্যাটালিয়ন, দুটি মহিলা ব্যাটালিয়নসহ ৪২টি আনসার ব্যাটালিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৬টি ব্যাটালিয়নের ৭ হাজার সদস্য পাহাড়ি দুর্গম এলাকায় এককভাবে ৬০টি এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে ও যৌথভাবে ১৮০টি ক্যাম্পে ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যরা ঝুঁকি নিয়ে ‘অপারেশন উত্তরণ’-এ কাজ করে যাচ্ছেন। আনসার বাহিনীর সদস্য ও কর্মকর্তাদের যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে। তারা নিয়মিতভাবে বিদেশেও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকেন। এ বাহিনীর সদস্যদের স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ), র?্যাব ও পুলিশের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গে যৌথ মহড়ায়ও অংশ নেন তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বিদেশি কূটনীতিকদের বাড়তি নিরাপত্তা দিতে আনসার বাহিনীর প্রস্তুতি ও সক্ষমতা রয়েছে। ২০১৬ সালে বহুল আলোচিত হোলি আর্টিজানে হামলার দুই মাস পর ৩০ আগস্ট অফিস আদেশ জারি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই আদেশ বাংলাদেশে অবস্থানরত সব দূতাবাসে পাঠানো হয়। আদেশে দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তায় আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের সম্পৃক্ত করার বিষয়টি উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয় প্রশিক্ষিত ও সশস্ত্র ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যদের প্রতি মাসে ২৫০ ডলার করে দিতে হবে দূতাবাসগুলোকে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাসে টানা ছয় বছর দায়িত্ব পালন করেন এজিবির সদস্যরা। তবে বিশ্বজুড়ে আর্থিক মন্দার কারণে কিছুদিন ধরে এই সেবা নিচ্ছে না ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাসগুলো। বর্তমানে আইসিডিডিআরবি-তে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর একটি চৌকশ দল। সংকটকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গঠন করা হয় এজিবি। আনসার সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মার্কিন দূতাবাসের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ দল গাজীপুরের শফিপুরে আনসার ভিডিপি একাডেমিতে ব্যাটালিয়ন আনসারদের ট্রেনিং, অপারেশনাল দক্ষতা ও অন্যান্য সক্ষমতা সরেজমিন পরিদর্শন করে। পরবর্তীতে মার্কিন দূতাবাসের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ দল রাষ্ট্রদূতের ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা, ভেহিকুলার মুভমেন্ট ও রুট প্রোটেকশনের দায়িত্বটি এজিবিকে দিতে সম্মত এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন। পরবর্তীতে ১৫ এবং ১৯ অক্টোবর এজিবির সদস্যরা মার্কিন দূতাবাসে দুই দিনের একটি ওরিয়েন্টেশন প্রশিক্ষণে অংশ নেন। প্রসঙ্গত. ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি দূতাবাস ও রাষ্ট্রদূতদের নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত ছিল পুলিশের বিশেষ বিভাগ ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি ডিভিশন। নিয়মিত নিরাপত্তার বাইরেও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত ও সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতদের চলাচলের জন্য দেওয়া হতো বাড়তি পুলিশি প্রটোকল। সম্প্রতি এই এসকর্ট সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর একটি স্পেশাল ইউনিটের মাধ্যমে এই এসকর্ট সুবিধা দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।


শেয়ার করুন