২৯ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার, ০১:০৯:১৭ পূর্বাহ্ন
ডাক ভবনের আদলে পূজামণ্ডপ টাইগার সংঘের
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-১০-২০২৩
ডাক ভবনের আদলে পূজামণ্ডপ টাইগার সংঘের

‌‘চিঠি দিও প্রতিদিন, চিঠি দিও। নইলে থাকতে পারবো না’- শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের এমন গান মনে পড়ে যাবে রাজশাহীর টাইগার সংঘের পূজামণ্ডপে গেলে। এ বছর দুর্গোৎসবের পূজামণ্ডপ তৈরিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাংলাদেশ ডাক ভবন। শুধু বাংলাদেশ ডাক ভবনের আদলে নয়। রাখা হয়েছে অনেক গুনি মানুষের হাতের লেখা চিঠিও। রয়েছে বিয়ের নিমন্ত্রণপত্র, ডাক টিকিটও।


রাজশাহী নগরীর গণকপাড়ায় টাইগার সংঘ এমন ব্যতিক্রম থিমে সাজিয়েছে পূজামণ্ডপ। গেল কয়েক বছর ধরে পূজামণ্ডপটি ব্যতিক্রম থিমে সাজানো হচ্ছে। কখনো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, বাহুবলী, আইয়ুব বাচ্চুর রুপালি গিটার, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, করোনাকালে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্কের আদলে কিংবা বিশ্বকাপের ট্রফিতে। বরাবরের মতো পূজামণ্ডপটি ব্যতিক্রম ভাবে সাজাচ্ছেন আয়োজকরা। তাতে ভক্তরাও খুশি।


রোববার (২২ অক্টোবর) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গণকপাড়ায় টাইগার সংঘ ঢাকায় আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ভবনের আদলে পূজামণ্ডপটির ওপরের অংশটি তৈরি করেছে। নিচে বোর্ডে সাঁটানো রয়েছে চিঠি, খাম, নিমন্ত্রণপত্র ও ডাক টিকিট। একইসঙ্গে মণ্ডপে সামনে রাখা হয়েছে ডাক বাক্স। মণ্ডপের সামনেই হারিকেন হাতে রানারের প্রতিকৃতি সবার নজর কেড়েছে। তা যে কারও মনে করিয়ে দেবে পুরোনো দিনের চিঠির কথাগুলো।


মণ্ডপ ঘুরতে আসা দর্শনার্থী শ্যামলী রানী বলেন, প্রতিবছর টাইগার নতুন কিছু আমাদের উপহার দেয়। এ বছরও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। কখনো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, কখনো বাহুবলী, আবার কখনো আইয়ুব বাচ্চুর রুপালি গিটারের আদলে তৈরি করা হয়েছে পূজামণ্ডপ। শনিবার ও রোববার বিকেল পর্যন্ত দুই দিনে ১৬টি মণ্ডপ ঘুরেছি। তারমধ্যে টাইগারের ডাক ভবন ভালো লেগেছে। প্রতি বছরই এদের মণ্ডপ ভালো লাগে।


দর্শনার্থী কার্তিক কুমার রায় বলেন, টাইগার মণ্ডপ মানুষকে আকৃষ্ট করেছে। বরাবরই করে। কারণ তারা নতুন আইডিয়ায় ভিন্ন থিমের ওপরে মণ্ডপের নকশা করে। যা সকলকে অবাক করে। এ বছরও সবাইকে অবাক করেছে। রাজশাহীতে এমন থিমের মণ্ডপ আর কোথাও নেই। টাইগার সংঘের থিমটি ভালো লেগেছে সবার। তরুণ প্রজন্ম আগের দিনের চিঠির ইতিহাস কিছুটা হলেও জানতে পারবে।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ছাড়াও ২৪টি চিঠি রয়েছে। বঙ্গবন্ধু ১৯৬৯ সালে মওলানা ভাসানীকে একটি চিঠিতে সে সময়ের দেশের কথা তুলে ধরেছেন। চিঠি রয়েছে, কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সত্যজিৎ রায়ের হাতে লেখা চিঠি। চিঠিগুলো মণ্ডপের সামনে রাখা হয়েছে। ঢুকতেই দুই পাশে রাখা হয়েছে ঐতিহাসিক ডাকটিকিটের ছবি। ডাকটিকিটগুলোতে গ্রামবাংলার চিত্র ছাড়াও দেশের নানা সাফল্য উঠে এসেছে। এই রকম বড় বড় দুই বোর্ডে ১২টি করে ২৪টি চিঠি রয়েছে।


সিবু রায় বলেন, টাইগার মণ্ডপে প্রতিবছর দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় থাকে। এ বছর সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দর্শনার্থীরা পূজা দেখার পাশাপাশি মণ্ডপ দেখতে আসেন। কারণ টাইগার সংঘের একটা সুনাম রয়েছে। তারা বরাবরের মতো চমৎকার করে মণ্ডপ তৈরি করে।


টাইগার সংঘের সাধারণ সম্পাদক পার্থ পাল বলেন, একসময় চিঠির ব্যাপক আদান প্রদান ছিল। এই প্রজন্ম চিঠি বা ডাকঘর চেনে না। ডাক থেকে এক সময় সরকার রাজস্ব আয় করতো। কিন্তু এখন কুরিয়ার সার্ভিসের মধ্যে ঝুঁকে গেছে সবাই। আমাদের প্রত্যাশা পুরানো কিছু আবার নতুন করে সবার সামনে তুলে ধরা। বিগত বছরগুলোতে আপনারা দেখেছেন আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, বাহুবলী, আইয়ুব বাচ্চুর রুপালি গিটারে, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, করোনাকালে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্কের আদলে পূজা মণ্ডপগুলো তৈরি করেছি।


শেয়ার করুন